ক্রিকইনফোর বিপিএল একাদশে বরিশালের আধিপত্য, রংপুরের আছেন তিনজন

|

চ্যাম্পিয়ন বরিশালের উদযাপন

প্রায় দেড় মাসের ব্যাট-বলের লড়াইয়ের মাধ্যমে পর্দা নেমেছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দশম আসরের। এতে প্রথমবার শিরোপা ছোঁয়ার স্বাদ পেয়েছে ফরচুন বরিশাল। শিরোপা জয়ী দলের নেতৃত্বে ছিলেন টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল। বিপিএলের আসর শেষ হওয়ার পরদিনই আসরে সেরা একাদশ প্রকাশ করেছে ক্রিকেটভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকইনফো।

তাদের ঘোষিত একাদশে অধিনায়ক এবং ওপেনার হিসেবে প্রত্যাশিতভাবেই রয়েছেন তামিম ইকবাল। একাদশে চ্যাম্পিয়ন বরিশালের চারজন জায়গা পেয়েছেন। আর দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে হেরে বিদায় নেয়া রংপুর রাইডার্সের তিনজন রয়েছেন সেরা একাদশে।

ক্রিকইনফোর সেরা একাদশ—

১. তামিম ইকবাল (অধিনায়ক):

নেতৃত্বের পাশাপাশি ব্যাট হাতে দুর্দান্ত আসর কাটিয়েছেন তামিম ইকবাল খান। যার পুরস্কার হিসেবে প্রথমবারের মতো বিপিএলের টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার জিতেছেন এই ওপেনার। একইসঙ্গে তার দুর্দান্ত নেতৃত্বে প্রথমবার শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছে বরিশাল। আসরে তামিম ইকবাল ১৫ ম্যাচে ৩৫ দশমিক ১৪ গড়ে করেছেন ৪৯২ রান। স্ট্রাইক রেট ১২৭ দশমিক ১৩। আসরে তিনটি অর্ধশতক রয়েছে কাপ্তান তামিমের। ফাইনালে ৩৯ রানের কার্যকরী ইনিংসও খেলেছেন তিনি।

২. তানজিদ হাসান তামিম:

তামিম ইকবালের ওপেনিং সঙ্গী আরেক তামিম। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের এই তরুণ তারকা এবারের বিপিএলে নিজেকে আবারও প্রমাণ করেছেন। প্রথম এলিমিনেটর ম্যাচে চ্যাম্পিয়ন বরিশালের কাছে হেরে আসর থেকে বিদায় নেয় চট্টগ্রাম। বিদায়ের আগে ১২ ম্যাচে ব্যাট হাতে নামার সুযোগ পেয়েছিলেন তানজিদ তামিম। ১৩৫ দশমিক ৬৮ স্ট্রাইক রেটে তিনি রান তুলেছেন ৩৮৪। গড় ৩২। জুনিয়র তামিম এই আসরের চতুর্থ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। আসরে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসটিও (১১৬ রান) এসেছে তার ব্যাট থেকে। এই আসরে দুইটি ফিফটি ও একটি সেঞ্চুরি করেছেন তানজিদ।

৩. তাওহীদ হৃদয়:

সম্ভাবনাময় তারকা হিসেবে জাতীয় দলে জায়গা নিশ্চিত করেছিলেন তাওহীদ হৃদয়। ‍কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে বিপিএলে নিজের জাত আরেকবার চেনালেন হৃদয়। ১৪ ইনিংস ব্যাট করা হৃদয় আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। পুরো আসরেই টর্নেডো ব্যাটিং করেছেন এই টপঅর্ডার ব্যাটার। ১৪৯ দশমিক ৫ স্ট্রাইক রেটে তার রান ৪৬২। গড়ও চোখ কপালে তোলার মতো ৩৮ দশমিক ৪! কুমিল্লার হয়ে দুইটি ফিফটি ও একটি শতক রয়েছে হৃদয়ের। দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে ১০৮ রানের ইনিংসের পাশাপাশি খুলনার বিপক্ষে অপরাজিত ৯১ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস রয়েছে এই ব্যাটারের।

৪. বাবর আজম:

ক্রিকইনফোর সেরা একাদশে চার নম্বর ব্যাটিং পজিশনে রয়েছেন রংপুর রাইডার্সের টপঅর্ডার ব্যাটার ও পাকিস্তানি ক্রিকেটার বাবর আজম। যদিও রংপুরের জার্সিতে মাত্র ৬ ম্যাচ খেলেছেন এই ব্যাটার। এতেই দুই অর্ধশতকে ২৫১ রান ‍তুলেছেন। ১১৪ এর ওপরে স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করা বাবর আজমের গড় ৫০ দশমিক ২০।

৫. জেমি নিশাম:

বাবর আজমের পরেই রয়েছেন রাইডার্সের আরেক ভরসা জেমি নিশাম। দলের বিপর্যয়েও একপাশ আগলে লড়াই করে গেছেন এই কিউই অলরাউন্ডার। মাত্র সাত ইনিংসে ব্যাট করে ২৯১ রান করেছেন নিশাম। তার গড় ৭২ দশমিক ৭৫! আর স্ট্রাইক রেট ১৬৭ দশমিক ২৪। এই পরিসংখ্যানেই বোঝা যায় কতটা খুনে মেজাজে ব্যাটিং করেছেন নিশাম। প্রথম কোয়ালিফায়ারে কুমিল্লার বিপক্ষে অপরাজিত ৯৭ রানের ইনিংসটি আসরে তার সর্বোচ্চ। বল হাতেও রাইডার্সদের হয়ে চারটি উইকেট শিকার করেছেন তিনি।

৬. মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক)

ছয় নম্বর ও উইকেটরক্ষক ব্যাটার হিসেবে ক্রিকইনফোর একাদশে রয়েছেন জাতীয় দলের উইকেটরক্ষক ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। এই আসরে আবারও প্রমাণ করেছেন দলে তার প্রয়োজনীয়তা কত! তাই তো বিপিএল জয়ের পর বরিশাল অধিনায়ক তামিম শিরোপাটি মুশফিকের শিরোপা বলে মন্তব্য করেছিলেন। আসরে ৩৮০ রান এসেছে মুশফিকের ব্যাট থেকে। যেটি আসরের ব্যক্তিগত পঞ্চম সর্বোচ্চ রান। ১২০ দশমিক ৬৩ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করা মুশফিকের গড় ৩১ দশমিক ৬৬। ব্যাটের পাশাপাশি উইকেটের পেছনে গ্লাভস হাতেও দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। ১৭টি ক্যাচ নেয়ার পাশাপাশি দুইটি স্টাম্পিংও করেছেন তিনি।

৭. কাইল মায়ার্স:

বিপিএলের এই আসরে ফাইনাল সেরার পুরস্কার হাতে উঠেছে এই ক্যারিবিয়ান তারকার। বরিশালের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পেছনে তার অবদান কম নয়। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বল হাতেও অধিনায়ক তামিমের অন্যতম ভরসার নাম ছিল মায়ার্স। সুযোগ পেয়ে তামিমের সেই আস্থার প্রতিদানও দিয়েছেন সাথে সাথে। মাত্র ৬ ম্যাচ খেলা এই বরিশালের অলরাউন্ডারের রান ২৪৩ এবং উইকেট শিকার ৯টি। ব্যাটিংয়ে স্ট্রাইক রেট ছিল ১৫৭ দশমিক ৭৯ এবং গড় ৪০ দশমিক ৫০। বোলিংয়েও ছিলেন কিপটে। তার বোলিং ইকোনমি মাত্র ৫ দশমিক ৯১।

৮. সাকিব আল হাসান:

রংপুর রাইডার্সের হয়ে খেলা টাইগার অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান চোখের সমস্যার কারণে প্রথমদিকে ব্যাটিংয়ে নামতেন পরে। ১৩ ম্যাচ খেলা সাকিব ব্যাট হাতে মাঠে নেমেছেন ১১ বার। প্রথমদিকে ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর মাঝের কয়েকটি ম্যাচে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন। তবে কোয়ালিফায়ারের দুই ম্যাচে এসে আবারও ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ হন সাকিব। ১১ ইনিংসে ২৩ দশমিক ১৮ গড়ে ২৫৫ রান করেছেন সাকিব। স্ট্রাইক রেট ১৫৮ এর ওপরে। অন্যদিকে ৬ দশমিক ৩১ ইকোনমিতে রংপুরের এই তারকা ১৭ উইকেট শিকার করেছেন। তার চেয়ে বেশি উইকেট রয়েছে শুধু ঢাকার শরিফুল ইসলামের।

৯. মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন:

ইনজুরিতে হারিয়ে যেতে বসেছিলেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। বিপিএলের শুরুর দিকে মাঠে নামা হয়নি বরিশালের এই পেস অলরাউন্ডারের। দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় দলের বাইরে থাকা সাইফুদ্দিনের জন্য এবারের বিপিএলও ছিল এসিড টেস্ট। সুযোগ পেয়ে কাজেও লাগিয়েছেন দারুণভাবে। প্রমাণ করেছেন হারিয়ে যাননি তিনি, জাতীয় দলে ফেরার বার্তাও ছিল তার পারফরম্যান্সে।

মাত্র ৯ ম্যাচ খেলা এই পেসারের ঝুলিতে রয়েছে ১৫টি উইকেট। যা কিনা এই আসরেও চতুর্থ সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত উইকেট। উইকেট শিকারের পাশাপাশি রান আটকাতেও পটু ছিলেন তিনি। ৬ দশমিক ৮১ ইকোনমিতে বল করেছেন তিনি। চার ইনিংসে ব্যাট হাতে নামার সুযোগ হয়েছে তার। ১৮৫ এর ওপরে স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করে তুলেছেন ৬৩ রান। চার ইনিংসের তিনটিতেই ছিলেন অপরাজিত।

১০. বিলাল খান:

সদ্য শেষ হওয়া বিপিএলে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকার পাঁচে রয়েছেন ওমান জাতীয় দলের বোলার ও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের পেসার বিলাল খান। তিনি ক্রিকইনফোর তালিকার ১০ নম্বরে রয়েছেন। ১৩ ম্যাচ খেলে চট্টগ্রামের এই পেসার তার ঝুলিতে পুরেছেন ১৫টি উইকেট। আসরে মাত্র ৭ দশমিক ৯২ ইকোনমিতে তিনি বল করেছেন।

১১. শরিফুল ইসলাম:

শরিফুল ইসলাম এই আসরের অন্যতম দুর্ভাগা বলাই যায়। দুর্দান্ত ঢাকার হয়ে বিপিএল মাতিয়েছেন শরিফুল। টানা ১১ ম্যাচ হেরে পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে থেকে আসর শেষ করেছে ঢাকা। তবে আসরে ঠিকই নিজে আলো ছড়িয়েছেন টাইগার পেসার শরিফুল। আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি তিনি। ১২ ম্যাচে মাত্র ১৫ দশমিক ৮৬ গড়ে শিকার করেছেন ২২টি উইকেট। স্বাভাবিকভাবেই তিনি রয়েছেন ক্রিকইনফোর বিপিএল সেরা একাদশে।

/এনকে


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply