অফশোর ব্যাংকিং বিল পাস

|

দেশে প্রথমবারের মতো অফশোর ব্যাংকিং সংক্রান্ত আইন করেছে সরকার। মঙ্গলবার (৫ মার্চ) জাতীয় সংসদে কন্ঠভোটে আইনটি পাশ হয়। এ সময় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা আইনটির বিপক্ষে অবস্থান না নিলেও দেশের অর্থখাতের সমালোচনা করেন।

সংসদে অফশোর ব্যাংকিং আইনের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বিলের ওপর আনা জনমত যাচাইবাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে এটি পাস হয়।

প্রসঙ্গত, অফশোর ব্যাংকিং ব্যবস্থায় বৈদেশিক উৎস থেকে আসা বৈদেশিক মুদ্রায় তহবিল সৃষ্টি হয় এবং প্রচলিত ব্যাংকিং আইনের বাইরে আলাদা আইনের মাধ্যমে এ তহবিল পরিচালিত ও হিসাব সংরক্ষণ করা হয়। এতে স্থানীয় মুদ্রার বিপরীতে নির্ধারিত বৈদেশিক মুদ্রায় অফশোর ব্যাংকিংয়ের হিসাব সংরক্ষণ করা হয়।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক বলেন, সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদেরও এই আইন সম্পর্কে ন্যুনতম ধারণা নেই। এই আইনের ফলে যদি বিদেশে টাকা পাচারকারীরা কর দেয়া ছাড়া টাকা ফেরত আনে ভালো। কিন্তু তারা টাকা ফেরত আনবে বলে মনে হয় না। বিপরীতে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচার বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করেন তিনি।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, অফশোর ব্যাংকিং নিয়ে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। এ আইনের মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আসতে পারবে। সেজন্য কর দিতে হবে না। তবে এর নেতিবাচক দিকগুলো কীভাবে মোকাবেলা করা হবে, তা জানা দরকার।

সংশোধনী আলোচনায় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর অবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে বলেন, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকের মতো ব্যাংকগুলোর কঠিন অবস্থা দেখেছি। চেক দিলে বলে টাকা নেই, বসেন কিংবা পরে আসেন।

তিনি বলেন, এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের টাকা নিয়ে চলে গেছে সিঙ্গাপুরে। কালকে দেখলাম চট্টগ্রামে তার গুদামে কয়েক লাখ টন চিনি পুড়ে গেছে। এখন চিনির দাম বাড়বে। সামনে রোজার মাসের জন্য গুদামজাত করে রেখেছেন। আইন করা হয় কিন্তু এর প্রয়োগ নেই।

হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক দেশীয় ব্যাংকগুলোকে তদারকি করবে কি না জানি না। বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকাই বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে, তারা নিজেরাই খোঁজ রাখে না। ব্যাংকগুলোর খোঁজ তারা কীভাবে করবেন?

বিলে বলা হয়েছে, অফশোর ব্যাংকিং অর্থ বাইরের উৎস এবং অনুমোদিত বিশেষায়িত অঞ্চলে পরিচালিত শতভাগ বিদেশি মালাকানাধীন প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত উৎস থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় প্রাপ্ত তহবিল দিয়ে এই আইন ও বাংলদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী অনিবাসী বা ক্ষেত্রমতে বাংলাদেশে নিবাসী ব্যক্তির সঙ্গে পরিচালিত ব্যাংকিং কার্যক্রম। তফসিলি ব্যাংকগুলো অফশোর ব্যাংকিং করতে পারবে।

এ বিষয়ে বিলে বলা হয়েছে, অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে সংশ্লিষ্ট তফসিলি ব্যাংক পর্ষদের অনুমোদিত নীতিমালা থাকতে হবে। তফসিলি ব্যাংকের অফশোর কার্যক্রমের জন্য পৃথক হিসাবপত্র সংরক্ষণ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ অনুমোদনে অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং ইউনিট থেকে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে তহবিল স্থানান্তর করা যাবে বলেও বিলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট যেকোনও অনুমোদিত বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব পরিচালনা করতে পারবে। অফশোর ব্যাংকিং ব্যবসায় অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট আমানতকারী বা বেদৈশিক ঋণদাতাদের প্রদেয় সুদ বা মুনাফা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করমুক্ত থাকবে। আমানতকারী বা বৈদেশিক ঋণদাতাদের হিসাব যেকোনও প্রকার শুল্ক ও লেভিমুক্ত হবে।

এছাড়া আমানত ও ঋণ কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে বিলে বলা হয়েছে, রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, সরকারি রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্কগুলোর শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আমানত গ্রহণ করা যাবে। পাশাপাশি অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট এই ধরনের প্রতিষ্ঠানকে স্বল্প মেয়াদি ঋণ ও অগ্রিম বা বিনিয়োগ, ঋণপত্র ও গ্যারান্টি সুবিধা প্রদান, বিল ডিসকাউন্টিং, বিল নেগোশিয়েটিং এবং অন্যান্য বৈদেশিক বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট বাইরের লেনদেন সেবা দিতে পারবে।

বিলে আরও বলা হয়, অনিবাসী বাংলাদেশি, বিদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট আমানত ও ঋণ গ্রহণ করতে পারবে।

উল্লেখ্য, আইন না থাকলেও ১৯৮৫ সাল থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেশে অফশোর ব্যাংকিং চালু আছে। পরে ২০১৯ সালে অফশোর ব্যাংকিং নীতিমালা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

/আরএইচ/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply