তানজারিন: যে কমলা যুদ্ধ-বিরোধিতার কথা বলে

|

আল মাহফুজ

আপনি প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতার কথা অনিবার্যভাবে জেনে থাকবেন। প্রিয় পাঠক, যুগ যুগ ধরে ঘনিয়ে আসা ইসরায়েল-প্যালেস্তাইন যুদ্ধের কথাও আপনার অগোচরে নেই। আপনি এতোদিনে জেনে গেছেন– দৈত্যের লেজে হামাস পারা দেয়ার পর পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি আগ্রাসনে মারা গেছে ৩১ হাজারেরও বেশি মানুষ। প্রতিবেশীর উদাহরণ টানলে হয়তো আপনার জন্য সুবিধে হবে– ভারত, পাকিস্তান ও কাশ্মীর। দীর্ঘদিন ধরে ‘ভূস্বর্গ’কে কেন্দ্র করে দুই পারমাণবিক রাষ্ট্রের মধ্যেও বিরোধ মাঝেমাঝে আপনার চোখে পড়ে।

আপনি হয়তো বলকান যুদ্ধের কথাও জেনে থাকবেন, পাঠক। এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সার্বিয়ান, বসনিয়ান, চেচনিয়ান, ক্রোয়াট, কসোভানসহ বহু জাতি রয়েছে; যাদের প্রত্যেকের রয়েছে আলাদা জাতিসত্তা। এদের মধ্যে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পার্থক্যও প্রবল। তেমনই এক জাতি ‘আবখাজিয়ান’।

আবখাজিয়ানদের দশা অনেকটাই যেন কাশ্মীরের অধিবাসীর মতো। তারা শান্ত জীবন চায়, শান্তির পায়রা চায়। তারা যুদ্ধ চায় না কিন্তু তাদেরকে কেন্দ্র করেই যুদ্ধের দামামা বাজতে থাকে। ইচ্ছেয় হোক কিংবা অনিচ্ছায়, তারা গ্রাম ছাড়ে। তারা বিবদমান দুই পক্ষের যেকোনো একটিকে বেছে নেয়। পরিস্থিতি তাদের ‘যুদ্ধবাজ’ করে তোলে। তবু এর মাঝেই ‘বুড়ো’ ইভোর মতো কেউ কেউ থাকে, যারা উভয় পক্ষের জন্য শান্তির বার্তাবাহক হয়ে আসে। কেউ তার কথা শুনুক বা না শুনুক, সে তার কাজ করে যাবেই– এই তার ইস্পাতসম দৃঢ় প্রতীজ্ঞা..

তানজারিন মানে ছোট কমলালেবু। সোভিয়েত ইউনিয়ন বিলুপ্তির পরের কোনো এক সময়কার যুদ্ধ (জর্জিয়ান গৃহযুদ্ধ) চলছে। যুদ্ধের পাকচক্রে এক চেচেন ভাড়াটে সেনা ও জর্জিয়ার এক সৈনিক আহত হয়ে আশ্রয় পায় কমলাচাষী বুড়োর কুটিরে। এরপর গৃহযুদ্ধ পরিণত হয় ইভোর নিজের সঙ্গে অল্টার ইগোর যুদ্ধে। সেই যুদ্ধ আরও কঠিন। পাশাপাশি চলতে থাকে প্রতিপক্ষ শিবিরের দুই আহত সেনানীর সঙ্গে বচন যুদ্ধ। প্রবল আতঙ্কে ফাঁকা হয়ে যাওয়া গ্রামে একলা একা সেই বৃদ্ধ। তার যেন কেউ নেই। ছোট ছোট কমলালেবুর নিঃশ্বাসের সাথে সেও যেন বেঁচে ওঠে। তার বিশ্বাসের বিনির্মাণও হয় কি তানজারিনে?

ছবি: আইএমডিবি

২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি তানজারিন। এস্তোনিয়া ও জর্জিয়ার যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত সিনেমাটির মূল নাম ‘মান্দারিনিদ’। জনরা হিস্টোরিক্যাল ড্রামা।

যাযা উরুশাদযে জর্জিয়ার বিখ্যাত সিনেমাকার। ড্রামা নির্মাণ করতে গিয়ে এই নির্মাতা বিরক্তির উদ্রেক জাগাননি, মেলোড্রামায় রূপান্তর করেননি; যা অনেকেই নিজের অজান্তে করে থাকেন। তিনি সেটাই করেছেন, যেটা তার করার কথা ছিল– অনবদ্য পরিচালনা। তাই অনুভূতির জানলা খুলে দিয়ে আপনার সিনেমাটা দেখা উচিত। তাহলে কি শান্তির সাদা কবুতর উড়ে এসে ধরা দেবে? জানি না।

তবে হলফ করে বলা যায়– ‘তানজারিন’ যুগ যুগ ধরে ছানিপড়া চোখের আলো ফিরিয়ে দেয়ার স্বাক্ষর রাখে। সেই ছানিপড়া চোখ হতে পারে দর্শক, পরিচালক অথবা যুদ্ধবাজ কোনো শোষকের।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply