আল্লাহ কারো ওপর তার সাধ্যাতীত কাজের দায়িত্ব অর্পণ করেন না: সূরা বাকারা

|

আহাদুল ইসলাম:

সূরা বাকারা! পবিত্র কোরআন মাজিদের দ্বিতীয় সূরা। সূরাটির আয়াত সংখ্যা ২৮৬। সূরাটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে। দীর্ঘ এই সূরার শেষ দুটি আয়াতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তিনটি জিনিস দান করা হয়: পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত, উম্মতদের মধ্যে যারা শিরক করে না, তাদের কবিরা গুনাহ মাফ হওয়ার সুসংবাদ।’ (মুসলিম, তাফসিরে মাজহারি)

হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, একদা জিবরাঈল (আ.) নবীজী (সা.) এর সামনে বসা ছিলেন। তিনি বিপরীত দিকে থেকে একটি আওয়াজ শুনলেন। এরপর মাথা ওপর দিকে তুললেন, এরপর বলেন, এই মাত্র আকাশের একটি দরজা খোলা হয়েছে, এর আগে কখনও এ দরজাটি খোলা হয়নি, এ দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা অবতরণ করছেন। এর আগে তিনি কখনও পৃথিবীতে অবতরণ করেননি। তিনি আর কেউ নন, বরং ইসরাফিল (আ.)।

এ ফেরেশতা নবীজীকে সালাম দিলেন এবং বললেন সুসংবাদ গ্রহণ করুন আপাদমস্তক দুটি নূরের, যা আপনার আগে কোন নবীকে দেয়া হয়নি। সূরা ফাতিহা ও সূরা বাকারা শেষ দুটি আয়াত। যে কেউ তা পড়বে, তাকে প্রতিদান দেওয়া হবে।

সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের বিশেষ ফজিলতের কথা হাদিসে বর্ণিত করা হয়েছে। হজরত ইবনে আব্বাস (রা:)- এর বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ তাআ’লা এই দুইটি আয়াত জান্নাতের ভাণ্ডার হইতে অবতীর্ণ করেছেন। জগৎ সৃষ্টির দুই হাজার বছর পূর্বে পরম দয়ালু আল্লাহ তাআ’লা স্বহস্তে তাহা লিপিবদ্ধ করেছিলেন।

এ’শার নামাজের পর এই দুইটি আয়াত পাঠ করলে, তাহা তাহাজ্জুদের স্থলাভিষিক্ত হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, তাই তোমরা বিশেষভাবে এই দুইটি আয়াত শিক্ষা কর এবং তোমাদের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদেরকেও শিক্ষা দাও। কারণ আয়াতগুলো হচ্ছে রহমত, (আল্লাহর) নৈকট্য লাভের উপায়। (দ্বীন-দুনিয়ার সব) কল্যাণ লাভের দোয়া।’ (মিশকাত: ২১৭৩)। সূরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত হচ্ছে;

২৮৫. আমানার রাসুলু বিমা উনঝিলা ইলাইহি মিররাব্বিহি ওয়াল মুমিনুন। কুল্লুন আমানা বিল্লাহি ওয়া মালা ইকাতিহি ওয়া কুতুবিহি ওয়া রুসুলিহি লা নুফাররিকু বাইনা আহাদিমমির রুসুলিহি। ওয়া কালু সামিনা ওয়া আতানা গুফরানাকা রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাসির।

২৮৬. লা ইউকাল্লিফুল্লাহু নাফসান ইল্লা উসআহা-লাহা মা কাসাবাত ওয়া আলাইহা মাকতাসাবাত-রাব্বানা লা তুআখিজনা ইন-নাসিনা আও আখতানা-রাব্বানা ওয়া লা তাহমিল আলাইনা ইসরান কামা হামালতাহু আলাল্লাজিনা মিং ক্বাবলিনা- রাব্বানা ওয়া লা তুহাম্মিলনা মা লা তাকাতা লানা বিহি-ওয়াফু আন্না ওয়াগফিরলানা ওয়ারহামনা- আংতা মাওলানা ফাংসুরনা আলাল কাওমিল কাফিরিন।

২৮৫. রাসূল বিশ্বাস রাখেন ঐ সমস্ত বিষয় সম্পর্কে যা তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে তার কাছে অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুসলমানরাও সবাই বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতি, তার ফেরেশতাদের প্রতি, তার গ্রন্থসমুহের প্রতি এবং তার পয়গম্বরগণের প্রতি। তারা বলে আমরা তার পয়গম্বরদের মধ্যে কোন তারতম্য করিনা। তারা বলে, আমরা শুনেছি এবং কবুল করেছি। আমরা তোমার ক্ষমা চাই, হে আমাদের পালনকর্তা। আর আপনারই নিকট প্রত্যাবর্তন করতে হবে।

২৮৬. আল্লাহ কারো ওপর তার সাধ্যাতীত কাজের দায়িত্ব অর্পণ করেন না; সে স্বেচ্ছায় যা ভালো করে, তাহারই সাওয়াব পাইবে এবং স্বেচ্ছায় যা মন্দ করে তাহারই শাস্তি পাইবে। হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা যদি ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তবে আমাদেরকে পাকড়াও (অপরাধী) করো না। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের প্রতি কন কঠোর ব্যবস্থা পাঠাইবেন না, যেইরুপ আমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর অর্পণ করেছেন। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ওপর এমন গুরুভার অর্পণ করিওনা, যা বহন করার শক্তি আমাদের নাই। আমাদের পাপ মোচন কর। আমাদেরকে ক্ষমা কর। আর আমাদের প্রতি দয়া কর। তুমিই আমাদের কার্যনির্বাহক (অভিভাবক)। সুতরাং আমাদের কে কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিজয় (প্রাধান্য) দান কর।

এ দুটি আয়াতের ফজিলত প্রসঙ্গে নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে এ দুটি আয়াত পাঠ করবে, তার জন্য এটাই যথেষ্ট।’

রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল, কোরআনের কোন সূরা সবচেয়ে বেশি মর্যাদাবান? তিনি বললেন, সুরা ইখলাস। এরপর ব্যক্তিটি আবার প্রশ্ন করলেন, কোরআনের কোন আয়াতটি মর্যাদাবান? তিনি বললেন, আয়াতুল কুরসি।

এরপর লোকটি আবার জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর নবী, আপনি কোন আয়াতটি পছন্দ করেন, যাতে আপনার উম্মত লাভবান হবে। নবীজি (সা.) বললেন, সূরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply