অবন্তিকার বাড়িতে ৬ শিক্ষক, আড়াই ঘণ্টার বৈঠক শেষে যা জানাল তদন্ত কমিটি

|

কুমিল্লা করেসপনডেন্ট:

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় আজ অবন্তিকার বাড়ি কুমিল্লায় গিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি। সেখানে অবন্তিকার মায়ের সঙ্গে দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা বৈঠক করেন তারা। কথা বলেছেন পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গেও। এসময় তারা আত্মহত্যার স্থানও পরিদর্শন করেন।

শুক্রবার (২২ মার্চ) সকাল ১০টায় তদন্ত কমিটির সদস্যরা কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁওয়ের অরনিকা পার্কের বাসার দ্বিতীয় তলা অর্থাৎ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্ত কমিটির প্রধান ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেন।

তিনি বলেন, আত্মহত্যার ঘটনার তদন্ত করতেই মূলত আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি টিম কুমিল্লায় এসেছি। এদেরমধ্যে তদন্ত কমিটির পাঁচ জন ও একজন সহকারী প্রক্টর ছিলেন। আমরা আড়াই ঘণ্টা ধরে তার মায়ের সঙ্গে কথা বলেছি। এ ঘটনা সম্পর্কে অবন্তিকার মা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যা জানেন সব শুনেছি।

তদন্তে অবন্তিকার বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করেছেন জানিয়ে অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেন আরও বলেন, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তদন্তের প্রয়োজনে আমরা পুলিশ ও অভিযুক্তদের সঙ্গেও কথা বলার চেষ্টা করব। তাদের কাছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কিছু তথ্য চাইব।

তবে, তদন্তে যেসব তথ্য বেড়িয়ে এসেছে সে বিষয়ে তদন্তের স্বার্থে মুখ খুলতে চাননি তারা। বলেন, তদন্তের কাজ চলছে। আমরা যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দেয়ার চেষ্টা করব।

এ বিষয়ে অবন্তিকার মা তাহমিনা বেগম জানান, তদন্ত কমিটি সকল তথ্য নিয়েছে। আমিও ওনারা যা যা জানতে চেয়েছেন সকল তথ্য দিয়েছি। আমাকে ন্যায় বিচার পাওয়ার আশ্বাস দিয়েছে তারা।

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (১৪ মার্চ) রাতে ফেসবুকে স্ট্যাটাসে সহকারী প্রক্টর ও সহপাঠীকে দায়ী করে আত্মহত্যা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী অবন্তিকা। এরপর সেদিন মধ্যরাত থেকেই উত্তাল হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ক্ষোভে ফেটে পড়েন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের দ্রুত বিচারের দাবিতে রাতভর ক্যাম্পাসে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে ক্যাম্পাসে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম।

এ ঘটনার পর সাময়িক বহিষ্কার করা হয় অভিযুক্ত সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও অবন্তিকার সহপাঠী আম্মান সিদ্দিককে। এছাড়া অধিকতর তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

শনিবার (১৬ মার্চ) বিকেল ৩টার দিকে কুমিল্লা সরকারি কলেজ মাঠে অবন্তিকার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে শাসনগাছা জামে মসজিদের সামনে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে কুমিল্লা নগরীর শাসনগাছার পারিবারিক কবরস্থানে বাবা অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

দাফন শেষে শনিবার রাতেই কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় আত্মহত্যার প্ররোচণার অভিযোগে অবন্তিকার মা তাহমিনা বেগম একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয়, অবন্তিকার সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী অফলাইনে ও অনলাইনে অবন্তিকাকে যৌন হয়রানি করে আসছিল। এ বিষয়ে সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের কাছে অভিযোগ করলে তিনি অভিযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো অবন্তিকাকেই নানাভাবে অপমান করে আসছিলেন।

ওইদিন রাতেই অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীকে আটক করে পুলিশ। এরপর আদালতের মাধ্যমে সহপাঠী আম্মানকে দুইদিন ও শিক্ষক দ্বীন ইসলামকে একদিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়। রিমান্ড শেষে তাদেরকে পুনরায় কারাগারে পাঠানো হয়।

/এমএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply