নারায়ণগঞ্জে নিহত ৪: পাবনায় চলছে শোকের মাতম

|

পাবনা প্রতিনিধি:

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার সাতগ্রাম ইউনিয়নের পাঁচরুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে গত রোববার (২১ অক্টোবর) সকালে উদ্ধার হওয়া গুলিবিদ্ধ চার যুবকের পরিচয় মিলেছে। তাদের সবার বাড়ি পাবনায়। নিহতের পরিবারে স্বজনদের মাঝে চলছে শোকের মাতম।

নিহতরা তারা হলেন- পাবনার আতাইকুলা থানার ধর্মগ্রামের মধ্যপাড়ার খাইরুল সরদারের ছেলে সবুজ সরদার (৩২), রতন সরদারের ছেলে লিটন সরদার (৩২), লোকমান সরদারের ছেলে জহুরুল সরদার (৩০) ও মৃত সোলাইমান খন্দকারের ছেলে ফারুক খন্দকার (৩৮)।

সোমবার (২২ অক্টোবর) নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতালে নিহতদের মরদেহ দেখে শনাক্ত করেন স্বজনরা। নিহতের স্বজনদের দাবি, গত শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। তবে পাবনা পুলিশের দাবি, বিষয়টি সম্পর্কে তারা অবগত নন। পুলিশ ওই এলাকায় যায়নি।

নিহত সবুজের বাবা খায়রুল সরদার জানান, নিহত সবুজ তার বড় ছেলে। সবুজের স্ত্রী ও জিসান নামের সাতমাসের একটি ছেলে রয়েছে। সে গ্রামের বাড়িতে বেকারীতে কারিগর হিসেবে কাজ করতেন। অভাবের তাড়নায় পরিবারের ঋণের (কিস্তি) টাকা পরিশোধ করার উদ্দেশ্যে গত সোমবার (১৫ অক্টোবর) ঢাকায় যায়। এর পরদিন থেকেই সবুজের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকলে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে ফারুক হোসেন নারায়নগঞ্জে বাসচালক ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার পরিবার। তবে স্বজনদের দাবি, তারা কেউই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। কাজের সন্ধানে রতন, জহুরুল ও লিটন ঢাকায় যাওয়ার পর নিখোঁজ হন।

ফারুক হোসেনের মেয়ে ফাহিমা খাতুন বলেন, গত ১৫ বছর ধরে আমার বাবা নারায়ণগঞ্জে বসবাস করছিলেন। সেখানে তিনি ‘গ্লোরী এক্সপ্রেস’ নামের একটি বাস চালাচ্ছিলেন। গত শুক্রবার ১৯ অক্টোবর থেকে আমার বাবার সাথে যোগাযোগ ছিল না। শনিবার ২০ অক্টোবর জানতে পারলাম, নারায়ণগঞ্জের গাউসিয়া বাসভবন থেকে সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে আমার বাবাকে তুলে নিয়ে গেছে।

কান্নাজড়িত কন্ঠে ফাহিমা বলেন, রোববার (২১ অক্টোবর) জানতে পারি যে, আড়াইহাজারে চারটি মরদেহ পাওয়া গেছে, তাদের মধ্যে একজন আমার বাবা। আমার বাবা তো কোনো দোষ করেনি, তবে কেন তাকে মেরে ফেলা হলো।

ছেলে সবুজ সরদারের জন্য আহাজারী করছিলেন মা আম্বিয়া খাতুন। তিনি বলেন, লিটন, সবুজ ও জহুরুল চাচাতো ভাই। তারা তিনজন পাবনার আজাদ বেকারীতে কাজ করতো। তারা গত সোমবার ১৫ অক্টোবর নারায়নগঞ্জে ফারুকের বাসায় যান। শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) হঠাৎ আমরা জানতে পারলাম তাদের কে বা কারা তুলে নিয়ে গেছে।

এই সংবাদ পাওয়ার পর পাবনা শহরের বড় ব্রিজ এলাকায় অবস্থিত আজাদ বেকারী পরিদর্শন করে জানা যায়, কয়েক বছর আগে বেকারীটি বন্ধ হয়ে যায়।

জহুরুলের স্ত্রী সুবর্না বেগম দাবি করেন, আমার স্বামী শুক্রবার বিকেলে বলেছিল, বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠাবে। এবং বাড়িতে আসার কথাও বলেছিল। কিন্তু ওইদিন রাত থেকে আমার স্বামীর সাথে আর যোগাযোগ করতে পারিনি।

লিটন হোসেনের মা শেফালী বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলে কোথায় আছে সে সম্পর্কে আমি কিছু জানতাম না।

এদিকে গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, ওই চারজন গ্রামে কোনো অপরাধের সাথে জড়িত ছিল না। কিন্তু কেন তারা মারা গেলো সে সম্পর্কে কেউ কিছু বুঝতে পারছে না।

ধর্মগ্রামের বাসিন্দা মো. মাসুম হোসেন বলেন, তারা খুবই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। কষ্টের মধ্যে
তারা দিন যাপন করতো। কোনো অপরাধের সাথে জড়িত ছিল না।

এ বিষয়ে আতাইকুলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাসুদ রানা জানান, আমাদের থানায় পরিবার থেকে তাদের বিষয়ে কোনো অভিযোগ করেনি। তবে তাদের পূর্ববর্তী রেকর্ড ভাল নয়।

ওসি বলেন, আমরা জানি যে, তারা গ্রামে নিয়মিত থাকতো না। এদের মধ্যে ফারুক দীর্ঘদিন ধরে গ্রামে অনুপস্থিত ছিলেন এবং অপর তিনজন প্রায়ই গ্রামে থাকতেন না। তারা বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতির সাথে জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি মাসুদ রানা বলেন, আমরা এ বিষয়ে কিছু জানি না। আমরা টিভি ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতে পেরেছি।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply