‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ নাকি ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’: কোন সিনেমাটি বেশি সুন্দর?

|

আহাদুল ইসলাম:

২৯ এপ্রিল ১৯৮৮। আজকের এই দিনে মুক্তি পেয়েছিল আমির খান অভিনীত ছবি ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’। অনেকেই বলে থাকেন, এই ছবি আমিরের ক্যারিয়ারের ভিত স্থাপন করেছিল। অন্যদিকে, এটাই ছিল আমিরের ভাই মনসুর খান পরিচালিত প্রথম ছবি। আমির খান ও জুহি চাওলা অভিনীত ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ চলচ্চিত্রের কাহিনি লিখেছেন নাসির হোসেন আর পরিচালনা করেন মনসুর খান।

সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে এই ছবি নিয়ে আমির বলেন, ‘আমরা সফল হব কি না, সে ব্যাপারে শুরুতেই কোনও ধারণাই ছিল না। ছবিটা যতবার দেখতাম, ততবারই আমি আর মনসুর খুঁত খুঁজে বার করতাম এবং আলোচনায় মেতে উঠতাম। তবে সিনেমাটি মুক্তির পর এই ছবি যেন তাদের হাতের বাইরে বেরিয়ে যায় বলেই উল্লেখ করেন আমির। কারণ সে বছর বক্স অফিসের অন্যতম সফল ছবি ছিল ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’।

প্রেক্ষাগৃহে মোট ৫০ সপ্তাহ চলে ছবিটি। অভিনেতা আমিরের ঝুলিতে আসে একাধিক পুরস্কার। আমির বলেন, ‘দর্শকের ভালবাসা পেয়ে আমরা অভিভূত হয়ে যাই। আমার বিশ্বাস, এই ছবিটা ভারতীয় ছবির ইতিহাস বদলে দিয়েছিল। কারণ, ১৯৮৮ সাল থেকেই বদলটা শুরু হয়েছিল এবং মনসুর প্রথম সেটা করেন’।

অন্যদিকে, ১৯৯৩ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবিটি। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লিখেছেন সোহানুর রহমান সোহান ও সংলাপ লিখেছেন আশীষ কুমার লোহ। প্রযোজক সুকুমার রঞ্জন ঘোষের আনন্দমেলা সিনেমা লিমিটেডের ব্যানারে নির্মিত হয় ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। এই ছবির মাধ্যমের আবির্ভাব হয় চলচ্চিত্রের দুটি নতুন মুখ-মৌসুমী ও সালমান শাহ।

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আনন্দমেলা সিনেমা লিমিটেড হিন্দি ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’র কপিরাইট নিয়ে সোহানুর রহমান সোহানের কাছে আসে রিমেক করার জন্য। উপযুক্ত নায়ক-নায়িকা খুঁজে না পেয়ে সম্পূর্ণ নতুন মুখ দিয়ে ছবি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন তারা। নায়িকা হিসেবে মৌসুমীকে নির্বাচন করেন।

তবে নায়ক হিসেবে প্রথমে তৌকীর আহমেদ ও পরে আদিল হোসেন নোবেলকে প্রস্তাব দিলে ফিরিয়ে দেন তারা। তখন নায়ক আলমগীরের সাবেক স্ত্রী খোশনুর আলমগীর ‘ইমন’ নামের এক ছেলের সন্ধান দেন। সেই ছেলের নাম পরিবর্তন করে পরে রাখা হয় সালমান শাহ।

ছবিতে সালমান-মৌসুমী ছাড়া আরও অভিনয় করেন আবুল হায়াত, রাজিব, খালেদা আক্তার কল্পনা আহমেদ শরীফ, মিঠু, ডন, জাহানারা আহমেদ, অমল বোসসহ অনেকে। চলচ্চিত্রটি ১৯৯৩ সালের ঈদুল ফিতরে মুক্তি পায়।

অনেকেই বলে থাকেন, অরিজিনাল সিনেমাটি থেকে রিমেক ছবিটি তুলনামূলকভাবে ‘অসাধারণ’। সেই সময়ে, প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে এই ছবিটি দেখেছেন এমন এক দর্শক উম্মে জহুরা রাখী যমুনা টেলিভিশনকে বলেন, প্রথমত অরিজিনাল সিনেমা ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ আমি দেখেছি। তবে সালমানের রিমেক ছিল স্পেশাল! সিনেমাটি দেখার পর সালমানের পোস্টার কিনে বাসার দেয়ালে লাগিয়েছি। সত্যি কথা বলতে, এই দেশের মানুষ হিসেবে, আমি সব সময় সালমানের অভিনীত রিমেকই প্রাধান্য দিবো।

মুভি রেটিং সাইট আইএমডিবি এ বিষয়ে কী বলছে? আমির খান অভিনীত ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ আইএমডিবিতে ৭ দশমিক ৪ পেয়েছে মোট ১০ নম্বরের মধ্যে। এছাড়াও আরেকটি জনপ্রিয় রেটিং সাইট রটেন টম্যাটোস দিয়েছে ৮৫%।

অন্যদিকে, সালমানের ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ আইএমডিবি রেটিং মোট ১০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছে ৮। তবে রটেন টম্যাটোসের কোন রেটিং পাওয়া যায়নি।

এবার আসা যাক সিনেমাগুলোর গানে। অরিজিনাল ছবিতে ‘অ্যায় মেরে হমসফর’ গানটি ছিল জনপ্রিয়। অন্যদিকে, সালমানের ‘ও আমার বন্ধু গো চির সাথী পথ চলার, তোমার জন্য গড়েছি আমি মাঞ্জিল ভালোবাসার ‘ গানটি পরিণত হয়েছিলো ন্যাশনাল এন্থেমে। এছাড়াও অন্যান্য গানগুলোও এক কথায় দারুণ।

তবে এ কথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে, দুটো ছবিই দুর্দান্ত। প্রশ্ন হলো ভালোর তো কোন শেষ নেই! বেশি ভালো সিনেমা তাহলে কোনটি? এই প্রশ্নের উত্তর রয়েছে সিনেমা প্রেমীদের কাছে! কারণ- ভক্তরাই সবার ঊর্ধ্বে!


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply