ব্যাংক একীভূতকরণ: চাপানো প্রক্রিয়ায় হোঁচট খাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা

|

আলমগীর হোসেন:

ব্যাংক একীভূতকরণ হতে হবে স্বেচ্ছায়। কিন্তু একীভূতকরণের বিষয়টি চাপিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে খানিকটা হোঁচট খেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বেশকিছু ব্যাংক অবস্থান নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে।

মূলত, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সবল ব্যাংকের সাথে।

এক্সিম ব্যাংকের সাথে পদ্মা ব্যাংকের একীভূত করণে সমঝোতা চুক্তির পর আলোচনায় আছে আরও কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক। সিদ্ধান্ত হয়েছে সোনালীর সাথে বিডিবিএল, কৃষি ব্যাংকের সাথে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেসরকারি সিটি ব্যাংকের সাথে সরকারি বেসিক ব্যাংক এবং ইউসিবিলের সাথে ন্যাশনাল ব্যাংক একীভূত হবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান বেশি কয়েকটি ব্যাংকের।

একীভূতকরণে বাধ্য করা হলে কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলবে না বলে মন্তব্য অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, দুর্বল ব্যাংকের সাথে সবল ব্যাংকের একীভূত হতে হবে তা নয়, সবলের সাথে সবল ব্যাংকও একীভূত হতে পারে। একীভূতকরণ কখনোই চাপানো বিষয় নয়, এটি সবসময় স্বেচ্ছায় হয়। পৃথিবীতে কয়টা উদাহরণ দেখানো যাবে যে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা জোর করে একীভূতকরণ করেছে। এখানে জোর করে করা হচ্ছে, এগুলো কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হবে না।

অর্থনীতিবিদ ড. এম আবু ইউসুফ বলেন, ব্যাংক একীভূতকরণ চাপিয়ে দেয়ার বিষয় না, কেন্দ্রীয় ব্যাংক হয়তো পরামর্শ দিতে পারে। কিন্তু সেখানে আলাপ-আলোচনা হতে পারে। সবারই বক্তব্য থাকতে পারে। তড়িঘড়ি করে চাপিয়ে দিয়ে তো কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যাবে না। দুই পক্ষেরই একটা মূল্যায়ন দরকার।

যে পদ্ধতিতে একীভূতকরণের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা। বলছেন, এর মাধ্যমে অনিয়মে জড়িতদের দায়মুক্তি দেয়া ছাড়া কিছুই হবে না। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনার পরামর্শ বিশ্লেষকদের।

ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, একীভূতকরণে আসলে কিছু লোকের দায়মুক্তি হবে। এর মাধ্যমে ব্যাংক ব্যবস্থার উন্নতি হবে তা আমি মনে করি না। যাদের কারণে এ ব্যাংকগুলোর অবস্থা এখন খারাপ, তাদেরকে দায়মুক্তি দিতে এগুলো করা হচ্ছে।

ড. এম আবু ইউসুফ বলেন, যারা ক্লাসিফায়েড, তারা যাতে কোনোভাবেই পার না পায়। সবাইকে যেন আইনের আওতায় আনা হয়। আর একজন পরিচালককে অব্যাহতি দেয়া মানে এই নয় যে তিনি সমস্ত দায় থেকে অব্যাহতি পাবেন। তিনি যদি কোনো অপরাধ করে থাকেন, তাহলে যেন আইনের আওতায় আনা হয়। নিশ্চয় এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেখবে।

দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণের উদ্যোগে এরই মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে ব্যাংকিং খাতে। অনেক গ্রাহক আমানত তুলে নিচ্ছেন। এতে দুর্বল ব্যাংকের অবস্থা আরও খারাপ হবে বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply