এমপি-মন্ত্রীর স্ত্রী-সন্তানে ছাড় নয়, স্বজনের ক্ষেত্রে ত্যাগী হলে নমনীয়তা

|

তাওহীদ মিথুন:

৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের সন্তান-স্বজনের প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে কিছুটা নমনীয় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, স্বজনদের মধ্যে ত্যাগী নেতাকর্মীরা ভোটে দাঁড়াতে পারবেন। তবে স্ত্রী-সন্তানদের বিষয়ে কোনো ছাড় নাই।

আগে থেকেই এবারের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে দলটির সভাপতির নির্দেশনা ছিল। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার (২ মে) সংসদীয় দলের সভায় মুখ খোলেন প্রধানমন্ত্রী। জোর দিয়ে বলেন, মন্ত্রী-এমপির স্ত্রী-সন্তানরা প্রার্থী হতে পারবেন না। দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতা ছাড়া অন্যদের প্রার্থী হতে নিরুৎসাহিত করেছেন তিনি।

যদিও দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে এখনও মাঠে কয়েকজন মন্ত্রী-এমপির সন্তান। নোয়াখালীতে উপজেলা চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই ও ভাগিনা। হলফনামায় মামলা ও আয় বিবরণীর তথ্য গোপন করায় গত রোববার ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই শাহাদাত হোসেনের মনোনয়ন বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

মাঠে পুরো দমেই প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন নোয়াখালীর আরেক এমপি একরাম চৌধুরীর পুত্র আতাহার ইশরাক সাবাব চৌধুরী। মাদারীপুরে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্থানীয় এমপি শাহজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খান।

যদিও তাদের দাবি, নিজ যোগ্যতাতেই তারা প্রার্থী হয়েছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়া ওবায়দুল কাদের ভাগিনা মাহবুবুর রশীদ মঞ্জু বলেন, ভাগিনা হিসেবে আমি আত্মীয়। কিন্তু নিকটাত্মীয় তো না। তাই আমি ভোট করতে পারবো।

ভোটের প্রচারণায় অংশ নিয়ে আতাহার ইশরাক সাবাব চৌধুরী বলেন, আমার আব্বা যেভাবে আপনাদের জন্য কাজ করেছে, সেবা করেছে, উপজেলার জন্য কাজ করেছে, সেভাবেই আমি আপনাদের কাজ করতে চাই। আর আসিবুর রহমান খান খান জানালেন, তিনি নির্বাচনে নেমে সমাজের সকল পর্যায়ে মানুষের মধ্যে উৎসব, আনন্দ দেখতে পাচ্ছেন।

এদিকে, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এরইমধ্যে স্পষ্ট করেছেন, যারা সিদ্ধান্ত মানছেন না তাদের প্রতি দলের সমর্থন নেই। সম্প্রতি তিনি বলেন, আমার উপজেলায়ও আমার এক আত্মীয় প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই প্রার্থিতার পেছনে আমার সমর্থন আছে কি না। আমি নির্বাচনকে প্রভাবিত করছি কি না।

আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকদের দাবি, দলের প্রধানের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে এরই মধ্যে অনেক মন্ত্রী এমপির সন্তান-স্বজনরা ভোটের মাঠ থেকে সরে গেছেন।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, যারা কোথাও রাজনীতি করে না, শুধুমাত্র বিশিষ্ট পদধারীদের স্ত্রী-সন্তান হওয়ায় নির্বাচন করলে এটি দৃষ্টিকটু দেখায়। আওয়ামী লীগের মূল শক্তিটাই হলো তৃণমূল। যারা জমি, ফসল বিক্রি করে এবং পরিবারকে বঞ্চিত করে আওয়ামী লীগ করেছে, তারা একটু সম্মান চান।

সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে সে নিয়েও কথা বলেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, আসলে আওয়ামী লীগ একটি পরিবার। এখানে শাস্তির নানা ব্যবস্থা আছে। কোনো শাস্তি প্রকাশ্যে হয়, কোনো শাস্তি অপ্রকাশ্যে হয়। যারা সিদ্ধান্ত অমান্য করবেন, তারা অবশ্যই শাস্তি, তিরস্কারের আওতায় আসবেন।

আগামীকাল বুধবার প্রথম ধাপে ১৪০টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনা-সমালোচনা আর শঙ্কা কাটিয়ে উপজেলা নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাবমুক্ত ভোট আয়োজনের দাবি প্রার্থীদের।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply