অ্যাপলের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে আর্থিক অনুদানের অভিযোগ

|

আহাদুল ইসলাম:

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের জন্য অনুদান পাঠানোর মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে টেক কোম্পানি অ্যাপলের কর্মচারী ও শেয়ারহোল্ডারদের বিরুদ্ধে। এক প্রতিবেদনে তুরস্কের সংবাদমাধ্যম আনাদুলু এজেন্সি এ তথ্য জানায়।

আমেরিকান সংবাদ সংস্থা দ্য ইন্টারসেপ্টের বরাত দিয়ে আনাদুলু এজেন্সি জানায়, অ্যাপেলের মোট ১৩৩ জন শেয়ারহোল্ডার, বর্তমান এবং প্রাক্তন কর্মচারীদের একটি গ্রুপকে উল্লেখ করে অ্যাপলের কাছে একটি খোলা চিঠি লিখেছে দ্য ইন্টারসেপ্ট। চিঠিতে এই বিষয়ে অ্যাপেলের মতামত জানতে চাইলে এই বিষয়ে এখনও নীরব প্রতিষ্ঠানটি।

চিঠিতে, অ্যাপলের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের সাথে যুক্ত প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীদের অনুদান পাঠানোর অভিযোগ করা হয়েছিল।

চিঠিতে এই অভিযোগগুলির অবিলম্বে তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে এবং অ্যাপলকে “অধিকৃত অঞ্চলে অবৈধ বসতি স্থাপন প্রসঙ্গে এবং ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আইডিএফ-কে সমর্থন করে এমন অনুদান বন্ধ করার অনুরোধ করা হয়েছে।”

অনেক বড় কোম্পানির মতো, অ্যাপেলের কর্মচারীরা অলাভজনক সংস্থাকে দান করতে পারে এবং বেনিভিটি নামক একটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সেই সব কর্মচারীরা তাদের নিয়োগকর্তার কাছ থেকে একই মাত্রায় অনুদান গ্রহণও করতে পারে।

অনুদানের জন্য যোগ্য সংস্থার তালিকায় রয়েছে “ফ্রেন্ডস অফ দ্য আইডিএফ”, যেটি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর জন্য তহবিল সংগ্রহ করে। তাছাড়াও “হাইওভেল”, “ওয়ান ইসরায়েল ফান্ড”, “ইহুদি জাতীয় তহবিল,” এবং “ইসরায়েল গিভস”এর মতো সংস্থা রয়েছে যেগুলো অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের সমর্থন করে, বিশেষ করে গাজার পশ্চিম তীরে।

অ্যাপলের ম্যানেজমেন্ট বিষয়টি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন প্রশ্নের জবাব তো দেয়নি বরং এর আগে, এপ্রিল মাসে অ্যাপল কর্মচারীরা “অ্যাপল ফর সিসফায়ার” নামে সংগঠিত অ্যাপল স্টোরের কর্মীদের বরখাস্ত করার প্রতিবাদ করেছিল। বিশেষ করে যারা কেফিয়া পরে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছিল। অ্যাপলের এসব কার্যক্রম প্রতিষ্ঠানটির মানবাধিকার নীতিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন।

অ্যাপলকে নিশ্চিত করা উচিত যে অভিযোগকৃত ইসরায়েলি সংস্থাগুলোর কোনোটিতে তহবিল পাঠানো হচ্ছে না

সাংবিধানিক অধিকার কেন্দ্রের একজন সিনিয়র অ্যাটর্নি ডায়ালা শামাস, যিনি তালিকাভুক্ত সংস্থাগুলিকে “সবচেয়ে খারাপ অভিনেতা” হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “দুর্ভাগ্যবশত, নীতিমালা ৫০১ এর সেকশন সি এর ৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সংস্থাগুলো প্রকাশ্যে বেআইনি কার্যকলাপকে সমর্থন করে। সেগুলো আবার খুব কমই যাচাই করা হয়েছে। ফলে পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি করা ইসরায়েলিরা সুবিধা নিয়ে যাচ্ছে।

শামাস জোর দিয়েছিলেন যে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনকারী অর্থায়নের বিরুদ্ধে মার্কিন আইনগুলো অভ্যন্তরীণ রাজস্ব পরিষেবা দ্বারা পর্যাপ্তভাবে প্রয়োগ করা হয় না। এটি কোম্পানি ও কর্মরত ব্যক্তিদের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়, যাতে তাদের অবদানগুলি সম্ভাব্যভাবে অবৈধ কার্যকলাপে জড়িত সংস্থাগুলিকে সমর্থন করে না।

“কোম্পানিগুলি প্রায়ই এই সত্যের উপর নির্ভর করে যে সংস্থার নীতিমালা ৫০১ এর সেকশন সি এর ৩ অনুচ্ছেদ স্থিত রয়েছে। তবে কোনো সংস্থার অলাভজনক মর্যাদা থাকুক না কেন; যুদ্ধাপরাধে সহায়তা করা এবং উৎসাহিত করা বেআইনি” শামাস যোগ করেছেন।

“অ্যাপলকে নিশ্চিত করা উচিত যে তারা অভিযোগে উঠে আসা ইসরায়েলি সংস্থাগুলোর কোনোটিতে তহবিল পাঠাচ্ছে না। বিশেষত সেই মুহূর্তে, যখন পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন আন্দোলনের বেআইনি কার্যকলাপ সম্পর্কে প্রমাণ বা তথ্যের কোন অভাব নেই।”

অ্যাপল-তালিকাভুক্ত গ্রুপগুলোর দাবি মোট ৩৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে পাঠানো হয়েছে

ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং অন্যান্য অপব্যবহারের অভিযোগের কারণে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর আচরণ এবং শৃঙ্খলা পরীক্ষা-নিরীক্ষার আওতায় এসেছে। এছাড়াও, অনেক ইসরায়েলি সৈন্য ফিলিস্তিনি বন্দিদের সাথে দৃশ্যত লুটপাট এবং দুর্ব্যবহারের ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট করেছে। এসব কিছু তারা করছে হামাসের দোহাই দিয়ে। কারণ-এই যুদ্ধ শুরু করার দায় তাদের বলে মনে করে ইসরায়েল। সেজন্য এখন যা করা হচ্ছে, সব কিছু দেশটির সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্যই করছে।

‘ফ্রেন্ডস অফ আইডিএফ’ অ্যাপলের মিলিত অনুদানের তালিকায় তালিকাভুক্ত একটি দাতব্য সংস্থা। গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রথম সপ্তাহগুলোতে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে এই দাতব্য সংস্থা অ্যাপলের থেকে ৩৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার নিয়ে অনুদান স্থানান্তর করেছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

দ্য গার্ডিয়ানের ডিসেম্বর ২০২৩– এর বিশ্লেষণ অনুসারে, ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম ‘ইজরায়েল গিভস’ পশ্চিম তীরে সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনী এবং ইসরায়েলি অবৈধ বসতি স্থাপনাকারীদের কার্যক্রমকে সমর্থন করার জন্য যুদ্ধ শুরু হওয়ার মাত্র দুই মাসের মধ্যে ৫ দশমিক ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি অনুদান পেয়েছে।

বিশ্লেষণে আরও বলা হয়েছে যে এই অর্থ অসম পরিমাণে মার্কিন দাতাদের কাছ থেকে এসেছে, বিশেষ করে অ্যাপেলের বিভিন্ন শেয়ারহোল্ডারদের কাছ থেকে।

অন্যান্য অনেক প্রযুক্তি কোম্পানির মতো, অ্যাপল তাদের ওয়েবসাইটে “আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবাধিকারের” কাঠামোকে সম্মান করার জন্য কর্পোরেট প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে, যার মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র।

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় বারবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নৃশংসতার নিন্দা করেছে।

অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রস্তাব উত্থাপন করার পরও, গত ৭ অক্টোবর, ২০২৩ সালে হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় ক্রমাগত নৃশংস আক্রমণের মধ্যে ইসরায়েল বিভিন্ন সময়ে আন্তর্জাতিক নিন্দার সম্মুখীন হয়েছে।

স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, গাজায় এখন পর্যন্ত ৩৭ হাজার ২শ’র বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। সেই সাথে আহত হয়েছেন ৮৪ হাজার ৯শ’ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি।

ইসরায়েলি যুদ্ধের আট মাস পর, খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের অবরোধের মধ্যে গাজার বিস্তীর্ণ অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পড়ে আছে। এতো প্রাণের দায় কীভাবে অ্যাপল নিবে? কিংবা উত্তরে কি বলবে প্রতিষ্ঠানটি, সময়ই তা বলে দেবে।

/এআই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply