‘সরকার যখন বললো পেছালে আপত্তি নেই, কমিশন তখনই নির্বাচন পেছালো’

|

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ আযম খান দাবি করেছেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যখন নির্বাচন পেছানোর দাবি করলো তখন সিইসি বললেন, পেছানো সম্ভব নয়। কিন্তু যখন সরকার বললো পেছালে তাদের আপত্তি নেই, তারপর দ্রুতই এক সপ্তাহ পেছানো হলো। এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের মনোভাব বুঝা যায় বলে এই বিএনপি নেতা মনে করছেন।

আজ যমুনা টিভির টকশো ‘রাজনীতি’-তে আলোচক হিসেবে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেছেন তিনি।

সিইসি পরিষ্কারভাবে বলেছেন ৩০ ডিসেম্বরই নির্বাচন হবে। তারপরও কেন আপনারা নির্বাচন পেছানোর কথা বলছেন? উপস্থাপকের এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ আযম খান বলেন, প্রায় দশ বছর ধরে দেশের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য। এটি কোনো দল বা গোষ্ঠির দাবি নয়। গ্রহণযোগ্য ভোটের মাধ্যমে তারা একটি সংসদ প্রতিষ্ঠা করতে চান। সেই সুযোগ এখন আমাদের সামনে এসেছে। নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্যই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ৭ দফা দাবি তুলে ধরেছে। যে সংলাপ হলো, তার কোনো ফল দেখলাম না। এটা জাতির জন্য হতাশার। এর মধ্যেই তড়িগড়ি করে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করলেন। আমরা বলেছি তফসিল ঘোষণায় তড়িগড়ি করার প্রয়োজন নেই, আরও সময় দরকার। তখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার বললেন, সময় দেয়া যাবে না। এরপর যখন সরকার বললো সময় বাড়ালে তাদের আপত্তি নেই এবং একটি জোট যখন বললো সপ্তাহ খানেক বাড়ানো যেতে পারে। তখন এক সপ্তাহ সময় বাড়ালো কমিশন। ঐক্যফ্রন্টসহ বিরোধী সব রাজনৈতিক দল এক মাস পেছানোর দাবি করেছিল। এক মাস পেছানোর বাধাটা কোথায়? এটা আমরা বুঝতে পারছি না। এখনও নির্বাচনের পরিবেশ নেই। ৩০০ আসনের কোনোটির বেশিরভাগেই বিএনপি কর্মীরা তাদের অফিস খুলতে পারছেন না। প্রতিদিন মামলা দেয়া হচ্ছে, গ্রেফতার করা হচ্ছে। কিছু সময় না পেলে এসব মামলা প্রত্যাহার বা নেতাকর্মীদের মুক্তি দেয়ার সুযোগও থাকবে না।

জিটিভির এডিটর ইন চীফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, তফসিল এক দফা পেছানো হয়েছে। ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনের একটি বড় স্টেকহোল্ডার। কিন্তু আরও স্টেকহোল্ডাররা আছেন। জানি না ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন কমিশনকে তাদের দাবি কতটা শোনাতে পারবে। আর ৩০ ডিসেম্বর নর্ববর্ষ বা বড় দিনের ছুটির কারণে নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা আসতে পারবেন না বলে যে কারণটির কথা বলা হচ্ছে এটি আমি সঠিক মনে করি না। ২০০৮ সালের নির্বাচনটিও ২৯ ডিসেম্বর হয়েছিল। তখনও কম বিদেশি পর্যবেক্ষক ছিলেন না। আর নির্বাচন কমিশনের মতো একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান বিদেশিদের উৎসব দেখে তফসিল পেছাবে এটাকে আমি যৌক্তিক মনে করি না।

আর যদি তফসিল পেছানোও হয় তাহলেও পরিস্থিতির তেমন কোনো হেরফেরও হবে বলে মনে করি না। ৭ দফা দাবির কোনোটিই পূরণ না হওয়ার পরও বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং এখন মনোনয়নের জন্য যে উপচেপড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে সংলাপ সফল হোক বা না হোক নির্বাচনে অংশগ্রহণের একটি প্রস্তুতি বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্টের আগে থেকেই ছিল।

দৈনিক দিনকালের সম্পাদক ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য এক মাস বা আরও কিছু সময় দিলে নির্বাচন কমিশনের এমন কোনো সমস্যা নেই। কেউ যুক্তি দেখাচ্ছেন জানুয়ারি মাসে তাবলিগ জামাতের ইজতেমার কথা। পেছালে সমস্যা হবে। আবার পত্রিকায় রিপোর্ট বেরিয়েছে কোনো এক নির্বাচন কমিশনারের মেয়ের বিয়ে নাকি ৩ জানুয়ারি। এ কারণে নির্বাচন পেছাতে তিনি অনাগ্রহী। ডিসেম্বরেই নির্বাচন করতে হবে। এসব কোনো যুক্তিই আসলে ধোপে টেকে না। যখন ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল নির্বাচন পেছানোর তখন কমিশন হাকডাক ছেড়েই বলেছিলো কোনোভাবেই পেছানো যাবে না। কিন্তু যখন সরকারি দলের তরফ থেকে বলা হলো তাদের কোনো আপত্তি নেই। তখন তো সাত দিন পেছানো হলো। কমিশনের এই মনোভাব থেকে মনে হয় না যে তারা সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে পারবে। সময় তো আসলে সবার জন্যই দরকার। সরকারি দলেরও গোছাতে সময় লাগবে। ঐক্যফ্রন্টেরও লাগেবে।

সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আরাফাত বলেন, ঐক্যফ্রন্ট বলছে সংলাপে কোনো ফল আসেনি। আমি মনে করি বড় ফল এসেছে। সংলাপের আগে বিএনপি নির্বাচনে না যাওয়ার কথা বলেছিলো। সংলাপের পর কিন্তু তারা নির্বাচনে এসেছেন। এটাই সবচেয়ে বড় সফলতা। আর তাদের যেসব দাবি অযৌক্তিক ছিল সেগুলো মানা সম্ভব হয়নি। খালেদা জিয়ার মুক্তি আদালতের বিষয়। সরকার এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। উপদেষ্টাদের দ্বারা নির্বাচনকালীন সরকার পরিচালনার বিষয়টি সংবিধান বিরোধী। তত্ত্বাবধায়ক এবং সংসদ ভেঙে দেয়ার বিষয়গুলোও সংবিধানের ভেতরে সুযোগ নেই।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply