দরিদ্র রিক্সা চালকের মেয়েকে বিয়ে দিলেন পুলিশ সুপার

|

মুহাম্মদ আরিফুর রহমান, ফেনী

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া ইউনিয়নের দরিদ্র রিক্সাচালক আবুল কালাম। মেয়ে জাহেদা বেগমের বিয়ে ঠিক হলে মানুষের কাছে হাত পেতে দশ হাজার টাকা সংগ্রহ করেন। নিজের কিছু গচ্ছিত টাকাসহ মানুষ থেকে সংগ্রহ করা টাকা নিয়ে গত ১৪ নভেম্বর সোনাগাজী উপজেলায় বিয়ের বাজার করতে গেলে নিজের অজ্ঞাতে হারিয়ে ফেলেন। অথবা চোরের খপ্পরে পড়ে খুইয়ে ফেলেন। এতেই দরিদ্র পিতার মেয়ের বিয়ের লালিত স্বপ্ন মুহূর্তে শেষ হয়ে যায়। সোনাগাজী বাজারে প্রকাশ্যে অঝরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। বিষয়টি সাধারণ মানুষের চোখে পড়লে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় রিকশা চালক বাবা ও সাথে থাকা মায়ের বুকফাটা আর্তনাদের দৃশ্য।

বিষয়টি ফেনীর পুলিশ সুপার এস.এম. জাহাঙ্গীর আলম সরকারের নজরে এলে তিনি অনিশ্চিত বিয়ের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। পূর্ব নির্ধারিত আজ বৃহস্পতিবার জাহেদার গ্রামের বাড়িতে বর আলমগীর হোসেনের  সাথে জাহেদার সাথে বিয়ে সম্পন্ন হয়।

সকাল থেকে উপস্থিত থেকে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে পুলিশ সুপার আপন বাবার মতো ভূমিকা পালন করে জামাতার হাতে মেয়েকে সোপর্দ করেন এবং তাদের জন্য দোয়া করেন। পুলিশ সুপারের এমন ভূমিকায় ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ বলে প্রশংসা কুড়িয়েছেন ওই এলাকার সব শ্রেণি পেশার মানুষের কাছে। শুধু এতেই শেষ নয়, পুলিশ সুপার বাবা হয়ে মেয়ের গলায় জড়িয়ে দিলেন আট আনা ওজনের সোনার গয়না।

সোনাগাজী উপকূলীয় অঞ্চলের রীতি অনুযায়ী সাথে দিলেন লেপ-তোষক, হাঁড়ি-পাতিল নতুন বউয়ের সাথে যাওয়া যাবতীয় মালামাল। এসপির আগমনের সংবাদে ছুটে যাওয়া স্থানীয় জনগণ ও পাশ্ববর্তী ইউনিয়নের দুই চেয়ারম্যান নতুন বরকে একটি অটোরিকশা উপঢৌকন দেন। এরকম একটি দৃশ্যের অবতারণা দেখতে ওই গ্রামে ভিড় জমে হাজারো মানুষের। না খেতে পারলেও মিস্টি মুখে ফিরেছেন সকলেই। যেনতেন আয়োজনের বিয়েটি পুলিশ সুপারের বধান্যতায় বাঁধ-ভাঙ্গা উচ্ছাস, আর আনন্দের হিল্লোল ছড়িয়ে পড়ে।

স্থানীয়রা জানান, এই দুই বর-কনের বিয়েতে পুলিশ সুপারের উপস্থিতি তাদের জীবনের বিরল ঘটনা। তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে জাহেদা বেগম পঞ্চম।

এবিষয়ে রিক্সাচালক আবুল কালাম জানান, ‘এটি আমার জীবনের সেরা ঘটনা। জীবনের কোনো ভালো কাজের প্রতিদান স্বরুপ এটি পেয়েছি। পুলিশ সুপার আমার মতো রিক্সাচালকের মেয়ের বিয়েতে এসে আমাকে সম্মানিত করেছেন। আমার মেয়ে এখন রিক্সাচালকের মেয়ে না একজন পুলিশ সুপারের মেয়ে। মেয়ের জামাতা পেলো পুলিশ সুপার শ্বশুর।’

এবিষয়ে ফেনীর পুলিশ সুপার এম.এম. জাহাঙ্গীর আলম সরকার জানান, বিষয়টি আমাকে খুব নাড়া দিয়েছে। গরীব এবং ছোট্ট একটা দুর্ঘটনায় একটা বিয়ে ভেঙে যেতে পারেনা। অত্যন্ত আনন্দঘণ দারুণ পরিবেশে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।  আজ একটি ভিন্ন স্বাদ পেয়েছি। বাবা হয়ে মেয়ের বিয়ের আনুষ্ঠানিতা করতে পারা এটি আসলে গৌরবের বিষয়।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply