কাচ্চি নাকি তেহারি?

|

আহাদুল ইসলাম:

কিছুদিন আগে, ১০ বছরের একজন ক্ষুদে ভোজন রসিকের সাথে দেখা। তাকে খুব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলো, কাচ্চি নাকি তেহারি: কোনটা বেশি মজা খেতে? প্রশ্ন শুনেই যেন তার জিভে জল আসার উপক্রম। বলছে, কাচ্চি-ও ‘নম-নম’, তেহারি-ও ‘নম-নম’!

তার উত্তর শুনে, প্রথম প্রশ্নই ছিলো ‘নম-নম’ কি? ফেমাস ‘উই বেয়ার বিয়ারস’ কার্টুনের প্রধান ভিলেনের নাম ‘নম-নম’, ওইটাকে বুঝাচ্ছো না তো? ক্ষুদে ভোজন রসিক বললো, হ্যাঁ! ওইটাই। ‘নম-নম’-কে অনেক ভালো লাগে। তাই, কোন খাবার যদি অনেক বেশি ভালো লাগে, তাহলে বলি, ‘নম-নম’!

তার উত্তর শুনে নতুন এক যুগল শব্দ আবিষ্কার করলাম। যারা ভাষাবিদ, তাদের এই নতুন শব্দ ‘ডিকশনারি’তে স্থান দেয়া উচিত।

আচ্ছা। ফিরে আসা যাক মূল প্রসঙ্গে। ক্ষুদে ভোজন রসিকের কাছে কাচ্চি-তেহারি’র বিতর্ক খুবই সহজ। উত্তরে তিনি বলেই দিলেন, দুটি খাবার-ই নম-নম; মানে মজা। তবে, তরুণ, যুবক কিংবা বয়স্কদের কাছে এ ব্যাপারটি নিয়ে কি উত্তর আছে!

অনেকের কাছে কাচ্চি একটি আবেগের নাম। বন্ধুর বিয়ে? তাহলে, আনন্দের মুহূর্তে ট্রিট চাই কাচ্চি! বান্ধুবি প্রেমে পড়েছে কিংবা ইউনিভার্সিটি সেমিস্টারে বন্ধু ‘এ’ পেয়েছে, তাহলে কাচ্চি ট্রিট না দেয়া মানে ‘কবিরা গুনাহ’!

পোলাউ ও খাসির মাংসের অদ্ভুত খুশবু, আহা! সেই সাথে যদি বড়-বড় আলুর পিস থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। তবে, ভালো কাচ্চি ভোজন রসিকরা কীভাবে বুঝেন?

রাজধানীর রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের একজন শিক্ষার্থী মিশু জাহান (১৫)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, খাসির মাংস যদি হাড্ডি থেকে খুব সহজেই খুলে-খুলে পড়ে, তাহলেই বোঝা যায়, কাচ্চিটি বেশ ভালো। আর কাচ্চির টেস্ট তেহারির থেকে বেশি মজার।

অন্যদিকে, রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত ক্যাপস্টোন স্কুলের একজন শিক্ষার্থী মাহির খান ওয়াসিকে (১৬) ফোনে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো কাচ্চি নাকি তেহারি? তিনি উত্তরে বলেছেন, অবশ্যই কাচ্চি! কিন্তু কেন? তিনি বললেন, আনন্দ কিংবা উৎসবের আরেক নাম ‘কাচ্চি’! আর দুঃখের সময় খেতে হবে ‘তেহারি’!

তবে, রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মার্চেন্ডাইজার খাইরুল বাশার রিয়াদ (৩৩) বলেছেন, তেহারি খুবই পছন্দ। কারণ, কাচ্চিতে অনেক তেল থাকে। তেহারি যদি একটু কম তেলে বাননো যায়, তবে দারুণ লাগে তা খেতে। আর যদি সরিষার তেলের তেহারি হয়, তাহলে তো কথাই নেই!

এতে বোঝা গেলো তেহারি কিংবা কাচ্চি’র আলাদা আলাদা ফ্যান বেস রয়েছে। বলা যায়, লয়াল ফ্যান। এরা পৃথিবী উল্টে গেলেও, দল ত্যাগ করবেন না। যার যেটা ভালো লাগে, সেটা-ই খেয়ে যাবেন তারা। কিছুতেই তাদের কাচ্চি কিংবা তেহারি খাওয়া থেকে থামানো যাবে না।

তবে, একটা বিষয় পরিষ্কার। যত বিতর্ক-ই থাকুক না কেন, কাচ্চি কিংবা তেহারি বাংলাদেশের মানুষের কাছে বেশ পরিচিত ও জনপ্রিয়। সেই সাথে, এই দুটি খাবারের সাথে জড়িয়ে আছে আবেগ। প্রচুর আবেগ! তাই, দিন শেষে, পরিবার-পরিজন ও বন্ধু-বান্ধব নিয়ে একসাথে কাচ্চি কিংবা তেহারি যাই খাওয়া হোক না কেন, হৃদয় তৃপ্ত হবেই হবে!


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply