২৩৫ রানেই ৭ উইকেট খুইয়েছিল বাংলাদেশ। ফলে আড়াইশ পার হবে কি না-সেই শংকা জেঁকে বসেছিল। কিন্তু না! টেলএন্ডারদের দৃঢ়তায় প্রথমে আড়াইশ, পরে তিনশ’র বৈতরণীও অতিক্রম করল টাইগাররা। এর কৃতিত্ব দিতে হবে মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম ও নাঈম হাসানকে। ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে প্রথমে প্রতিরোধ গড়েন মিরাজ। পরে তার দেখানো পথে হাঁটলেন তাইজুল-নাঈম।
এ ত্রয়ীর নৈপুণ্যে ৮ উইকেটে ৩১৫ রান তুলে প্রথম দিনটি নিজেদের করে নিয়েছে সাকিব বাহিনী। ৩২ রান নিয়ে অপরাজিত আছেন তাইজুল। ২৪ রান নিয়ে তার সঙ্গী নাঈম। ইতিমধ্যে পঞ্চাশোর্ধ্ব (৫৬) রানের জুটি গড়ে ফেলেছেন তারা। দ্বিতীয় দিনে নতুন করে খেলা শুরু করবেন এ জুটি।
চলতি বছরের মাঝামাঝিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দূর্গে টেস্ট সিরিজে লজ্জা বরণ করে বাংলাদেশ। হোমগ্রাউন্ডে সেই লজ্জা নিবারণের লক্ষ্য টাইগারদের। এ যাত্রায় টস ভাগ্যকে পাশে পান তারা। জেতেন স্বাগতিক অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
ইমরুল কায়েসের সঙ্গে ইনিংসের গোড়াপত্তন করতে নামেন সৌম্য সরকার। তবে দীর্ঘ এক বছর পর টেস্টে সৌম্যর প্রত্যাবর্তনটা হয় একদম বাজে। টেকেন মাত্র দুই বল। প্রথম ওভারেই কেমার রোচের বলে শান ডাওরিচের গ্লাভসবন্দি হয়ে ফেরেন তিনি।
ইনিংসের তৃতীয় বলেই ফেরেন সৌম্য। দ্বিতীয় উইকেটে শক্ত হাতে ইমরুলকে নিয়ে শুরুর ধাক্কা সামলে ওঠেন মুমিনুল হক। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলতে থাকেন টেস্ট স্পেশালিস্ট। শুরুতে নড়বড়ে থাকলেও ধীরে ধীরে গুছিয়ে ওঠেন ইমরুল। ব্যক্তিগত ৩ ও ১৬ রানে লাইফ পাওয়ার পর ছন্দে ফিরতে থাকেন তিনি। তবে হঠাৎই খেই হারান বাঁহাতি ওপেনার। লাঞ্চের ঠিক আগে জোমেল ওয়ারিক্যানের বলে সুনিল আমব্রিসকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ফেরার আগে ৫ চারে করেন ৪৪ রান। তাতে ভাঙে ১০৪ রানের জুটি।
ইমরুল সাজঘরে ফেরার পর মুমিনুলকে যথার্থ সঙ্গ দেন মোহাম্মদ মিথুন। খেলেন বলের গুণাগুণ বজায় রেখে। এতে মেটে পরিস্থিতির দাবি। কিন্তু হঠাৎই পথচ্যুত হন তিনি। অযাচিত শট খেলতে গিয়ে ধরা পড়েন এ টপঅর্ডার। দেবেন্দ্র বিশুকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডাওরিচের তালুবন্দি হয়ে ফেরেন মিথুন (২০)।
একে একে টপঅর্ডাররা ফিরলেও একপ্রান্ত আগলে থেকে যান মুমিনুল। সূচনালগ্ন থেকেই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ব্যাট চালান তিনি। ধীরে ধীরে এগিয়ে যান সেঞ্চুরির পথে। রোস্টন চেজের বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেন পয়েট অব ডায়নামো। এটি তার টেস্ট ক্যারিয়ারের অষ্টম শতক । এ আটটি সেঞ্চুরির ছয়টিই চট্টগ্রামে করেন টেস্ট স্পেশালিস্ট।
এ সেঞ্চুরি দিয়ে তামিম ইকবালকে স্পর্শ করেন মুমিনুল। আট সেঞ্চুরি নিয়ে বাংলাদেশের হয়ে ক্রিকেটের অভিজাত সংষ্করণে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিয়ান ছিলেন তামিম। অনবদ্য সেঞ্চুরি করে ড্যাশিং ওপেনারকে ছুঁয়ে ফেলেন লিটল ম্যান।
অবশ্য তিন অংক ছোঁয়ার পর বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি মুমিনুল। চা বিরতির পরই শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের বলে ডাওরিচের ক্যাচে পরিণত হন তিনি। এর পরই পথ হারায় বাংলাদেশ। খানিক বাদেই একই বোলারের এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে ফেরেন নির্ভরতার প্রতীক মুশফিকুর রহিম। প্রথমে অবশ্য আউট দেননি আম্পায়ার। বল লাইনে থাকায় রিভিউ নেন গ্যাব্রিয়েল। তার সিদ্ধান্ত যৌক্তিক প্রমাণ হলে সাজঘরের পথ ধরেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল।
এ চাপের মধ্যে আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এ পেসারের বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। তবে লড়তে থাকেন ইনজুরি কাটিয়ে দু’মাস পর মাঠে ফেরা সাকিব আল হাসান। অল্পক্ষণ পর তার লড়াইও থামে। ফের শিকারী গ্যাব্রিয়েল। তার চতুর্থ শিকার হয়ে অধিনায়ক ফিরলে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় স্বাগতিকরা। তিনিও ড্রেসিংরুমের পথে হাঁটেন বোল্ড হয়ে।
এতে দুরন্ত গতিতে ছুটতে থাকা বাংলাদেশ তাৎক্ষণিক হয়ে যায় ২২১/৩ থেকে ২৩৫/৭। নেপথ্য কারিগর দৈত্যাকৃতির গ্যাব্রিয়েল। তার পেসেই মূলত টালমাটাল হয় স্বাগতিকরা। সবশেষ চারজনই বনেন ওর শিকার।
এ পরিস্থিতিতে চটজলদি অলআউট হওয়ার শংকা চেপে ধরে বাংলাদেশকে। তবে সেই শংকা আলোর মুখ দেখেনি। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে লড়াই চালিয়ে যান মেহেদী হাসান মিরাজ। অবশ্য খুব বেশিদূর এগোতে পারেননি তিনি। জোমেল ওয়ারিক্যানের অসাধারণ ডেলিভেরিতে বোল্ড হয়ে ফেরেন এ মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান। ফেরার আগে ৩১ বলে ৩ চারে খেলেন লড়াকু ২২ রানের ক্যামিও।
এ টেস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তরুণ অফস্পিনার নাঈম হাসানের। ইনজুরি কাটিয়ে মাঠে ফেরেন সাকিব। এক বছর পর একাদশে ফেরেন সৌম্য সরকার। এ ত্রয়ী অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বাদ পড়েন লিটন দাস, খালেদ আহমেদ ও আরিফুল হক।
চার স্পিনার ও এক পেসার নিয়ে একাদশ সাজায় বাংলাদেশ। একমাত্র পেসার হিসেবে আছেন মোস্তাফিজুর রহমান। ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশ সাজায় দু’জন করে পেসার ও স্পিনার দিয়ে। স্পিন আক্রমণে লেগ স্পিনার দেবেন্দ্র বিশুর সঙ্গী বাঁহাতি স্পিনার জোমেল ওয়ারিক্যান। দলের দুই পেসার হলেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ও কেমার রোচ।
Leave a reply