’২৪-এর জুলাই কেন্দ্রীক গড়ে ওঠা জনচৈতন্য বা গণউদ্দীপনাকে রাষ্ট্র ও সমাজে স্থায়ী ভিত দিতে ‘জনমুক্তি’ নামক ফ্যাসিবাদবিরোধী সাংস্কৃতিক সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ও সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার (১ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামের ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে এ কমিটির আত্মপ্রকাশ হয়।
খান মোহাম্মদ মোস্তফার সঞ্চালনায় এবং জনমুক্তির যুগ্ম আহ্বায়ক সৌরভ মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সদস্য সচিব মুরাদ হাসান। এছাড়া, বক্তব্য রাখেন জনমুক্তির আহ্বায়ক নাশাদ ময়ূখ, সদস্য কাজী ওয়ালী উল্লাহ, সাইফুর রূদ্র, চৌধুরী সাকিব আরিফসহ চট্টগ্রামস্থ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জি এইচ হাবীব এবং আর রাজী, কবি ও বুদ্ধিজীবী রিফাত হাসান, নারী অঙ্গনের সম্পাদক নাদিরা ইয়াসমিন, লেখক মোকাররম হোসাইন, কবি ও গদ্যকার সৈকত দে, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষক জাহেদুল আলম এবং বাহাছের সম্পাদক জোবাইরুল হাসান আরিফ।
অনুষ্ঠানে মোতাছিম বিল্লাহ জনমুক্তির ঘোষণাপত্র পাঠ করার পাশাপাশি নাশাদ ময়ুখকে আহ্বায়ক এবং মুরাদ হাসানকে সদস্য সচিব করে গঠিত কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটিও ঘোষণা করেন।
কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন মোতাছিম বিল্লাহ (যুগ্ম আহ্বায়ক), খোবাইব হামদান (যুগ্ম আহ্বায়ক) ও সৌরভ মাহমুদ (যুগ্ম আহ্বায়ক); মো. আরাফাত ইমরান যুগ্ম সদস্য সচিব, তমসা অরণ্য (মুখপাত্র) ও খাঁন আয়্যুব (মুখপাত্র)।
এছাড়া, সদস্য হিসেবে রয়েছেন ইরফানুর রহমান রাফিন, রাফসান আহমেদ, সাদমান ইশরাক জীয়ন, খান মোহাম্মদ মোস্তফা, মো. এমরান উল্লাহ, জুবায়ের পারভেজ, তাওহিদা সুলতানা, সাইফুর রূদ্র, চৌধুরী সাকিব আরিফ, আবুল হাসেম, জাফরিন জাহান জেরিন, কাজী ওয়ালী উল্লাহ, লিখন দত্ত, জেবা সাজিদা সারাফ, ইয়ার খান, মোবাশ্বির আহমেদ রোমান, শিশির আজাদ চৌধুরী ও তানহিম আহমেদ।
‘জনমুক্তি’ সমাজ ও রাষ্ট্র কাঠামোতে বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী প্রবণতা দূরীকরণে এবং এর বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক লড়াই গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করবে বলে জানিয়ে অনুষ্ঠানে ৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচিগুলো হলো–
১. সামাজিক, ধর্মীয়, রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক ফ্যাসিজম চিহ্নিত করতে সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মতাত্ত্বিক এবং দার্শনিকভাবে কাজ করা। আর যেকোনো প্রকার রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিজম রুখতে গণপরিসরে যথাযথ ভূমিকা পালন করা।
২. যেকোনো মারণ রাজনীতির (বিচারবহির্ভূত খুন, রাষ্ট্রীয় হেফাজতে কিংবা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর দ্বারাই হোক, অথবা সীমান্তে; অথবা বিরোধী শিবিরে) বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা। বাহাসের পক্ষে, কিন্তু যেকোনো প্রকার দল-মতের ট্যাগ দিয়ে প্রতিপক্ষকে ভ্যানিশ কিংবা নিধনযোগ্য করে ফেলার ট্যাগের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া।
৩. সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের অংশ হিসেবে শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সব সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নীতিমালা ও নিয়োগ প্রক্রিয়া; সংস্কার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের দাবি জানানো। শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত সবার অধিকার ও যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিতে কাজ করা।
৪. মত প্রকাশের স্বাধীনতা (প্রয়োজনীয় উদযাপন সমেত) ধারণ এবং কোনোভাবেই এই স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত না হয়ে পড়ার দিকটি নিশ্চিত করা। প্রচলিত আইনের যে সকল ধারা এই স্বাধীনতাবিরোধী, সেসব আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য সরকারকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে গণস্বর তৈরিতে কাজ করা।
৫. মফস্বল থেকে রাজধানী ঢাকার সাংস্কৃতিক দূরত্ব কমিয়ে আনা। গুরুত্ব পাবে ব্যক্তি নয় স্বর, ভাষা। গল্প, কবিতা, গান, নাটক তথা সাংস্কৃতিকভাবে জুলাই অভ্যুত্থানকে স্মরনীয় করে রাখা।
৬. প্রতিটা জেলা-উপজেলায় জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মৃতিফলক স্থাপন এবং বিশদ স্মৃতিচারণ সংরক্ষণের দাবি আদায়ে কাজ করা। পাশাপাশি এই সংশ্লিষ্ট প্রতিটা সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে যথাসাধ্য সহযোগিতা প্রদান।
৭. জুলাই অভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট গণহত্যায় জড়িতদের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে যেসব সংগঠন কাজ করছে, তাদের সাথে সমন্বিত উদ্যোগে কাজ করা।
৮. সংবিধানে গণআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে সংবিধান সংস্কার নিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রে রাজনৈতিক ও দার্শনিক আলাপের প্রয়োজনীয়তা থেকে কাজ করা। রাষ্ট্রগঠনের এই সুযোগ যেন কোনোভাবেই নষ্ট না হয়, তা নিশ্চিত করতে কাজ করা।
৯. কীভাবে একটা ভাষায় দরদ আনা যায়, প্রতিপক্ষের সঙ্গে আলোচনার সংস্কৃতিতে ঘৃণার জায়গায় দরদকে রিপ্লেস করে ভিন্ন মত হজমের সংস্কৃতি চালু করা যায়, এ নিয়ে ব্যবহারিক রিসার্চ চালিয়ে যাওয়া। এছাড়া, ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠনের দাবি জানানো।
/এএম
Leave a reply