শিক্ষাঙ্গনে গণতন্ত্রের চর্চা শীর্ষক আলোচনা: ছাত্র রাজনীতির সংস্কার চান শিক্ষার্থীরা

|

নিষিদ্ধ নয়, শিক্ষাঙ্গনে গণতন্ত্রের চর্চা অব্যাহত রাখতে ছাত্র রাজনীতির পক্ষে শিক্ষার্থীরা। তবে চলমান কাঠামোর সংস্কার চান তারা। যেখানে রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা নয়, গুরুত্ব পাবে শিক্ষার্থীদের চাহিদা।

আজ শুক্রবার (২২ নভেম্বর) যমুনা টেলিভিশন ও ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের আয়োজনে ‘শিক্ষাঙ্গনে গণতন্ত্রের চর্চা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় উঠে আসে এমন মত।

আলোচনায় ডাকসু নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ রাখার আহ্বান জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে, সাবেক ছাত্রনেতা ও রাজনীতিবিদরা শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাইকে সহনশীল হওয়ার পরামর্শ দেন।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, জাতীয় সংকটে সবসময় ছাত্রদেরই দাঁড়াতে হবে। ওইটা কবিতার মতোই— ‘এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।’ এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। ছাত্ররা যে আন্দোলন করেছে, তাদের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ ফিচার হলো, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ এবং আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা। বুঝতে হবে, কোনো রাজনৈতিক দল এই দাবি করেনি, তারা করেছে।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ও ধর্ম নিরপেক্ষতা নিয়ে সংবিধানে দুর্বলতা আছে। আমরা জানি, রাজনৈতিক দলের কর্মী ও শিক্ষার্থীরা নিজেদের দলকে ক্যাম্পাসে এস্টাবলিশ করতে চায়। এই চর্চার অবসান হওয়া দরকার।

তিনি আরও বলেন, যে ছাত্ররা অপরাধ করেনি, তাদের ক্লাসরুমে ফিরে যাওয়ার অধিকার আছে। যদি তাদের ক্লাস করতে অথবা পরীক্ষা দিতে না দেয়া হয়, তাহলে আপনি রিভার্স টাইর‍্যানন্ট রিজিম তৈরি করলেন। একই নৈরাজ্য আপনিও তৈরি করলেন। এখানে সহনশীলতা নিশ্চিত করার ব্যাপারে তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, বায়ান্ন থেকে শুরু করে সবশেষ গণঅভ্যুত্থানের সুফলকে স্বীকার করলে বলতে হয় রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে ছাত্রদের অংশগ্রহণ খুবই জরুরি। ছাত্র রাজনীতি থাকবে কি থাকবে না প্রশ্নটি অবান্তর। বরং ছাত্র রাজনীতি কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে আলোচনা দরকার। এক্ষেত্রে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে ঐক্য দরকার।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নাভিন মুরশিদ বলেন, শিক্ষাঙ্গনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা থাকা প্রয়োজন। রাজনৈতিক দলের ভেতরে গণতন্ত্রের চর্চা থাকতে হবে। তা না হলে শিক্ষাঙ্গনে সঠিক পরিবেশ নিশ্চিত হবে না। এখন এত দাবি-দাওয়া আসছে; কারণ, রাজনৈতিক দলের ওপর মানুষের আস্থা নেই।

যমুনা টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষাঙ্গনে গণতন্ত্র বা রাজনীতি থাকবেই। কোন ফর্মে থাকবে, সেটা নিয়েই আমাদের আলোচনা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি করতে গিয়ে প্রাণ হারাতে পারেন ভেবে অনেক মা-বাবারা সন্তানদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান। কেননা, তারা ছাত্র রাজনীতি ভয় পান। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়েন, তারা ভর্তুকি পান। এই ভাবনা বা উপলব্ধিটা তাদের কার্যক্রমে দেখা যায় না।

তিনি আরও বলেন, আমাদের মজ্জায় অনেক কিছু রয়ে গেছে। ছাত্রনেতারা কোন এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছে? মূল দলের এজেন্ডা ছাত্রনেতার সক্রিয় এজেন্ডার সঙ্গে কি খাপ খায়? শিক্ষার্থীদের যে আরও অনেক সমস্যা রয়েছে, ছাত্রনেতারা কি সেটা ভাবেন? শিক্ষার্থীরাও ক্ষমতার কাছাকাছি যেতে চান অথবা বড় পদ চান। শিক্ষার্থীদের উচিত রাজনৈতিক দলের দাবি নিয়ে নয়, নিজেদের দাবি নিয়ে আরও উচ্চস্বরে কথা বলা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, সময়ের সাথে সাথে ছাত্র রাজনীতির সংজ্ঞা পরিবর্তন হয়েছে। একেক ক্যাম্পাসের পরিবেশ একেক রকম। বুয়েটে আবরার ফাহাদ হত্যার সময় সেখানে ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য সংগঠনগুলোর রাজনীতি সেই অর্থে ছিল না। তাই সেখানে এক ধাক্কায় রাজনীতি বন্ধ করে দেয়া গেছে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বহুমাত্রার রাজনীতি চর্চিত হয়।

ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মানসুরা আলম বলেন, বাংলাদেশ গড়ে ওঠার পেছনে ছাত্র রাজনীতির ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে অনেক শিক্ষার্থীরা প্রিভিলেজড। সবাই শুধু নিজেদের নিয়ে ভাবে। কিন্তু ওই জায়গা থেকে সাধারণ ছাত্রের কথা ভাবতে চাইলে শিক্ষার্থীদের রাজনীতি করা উচিত।

ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাবি সভাপতি সাদিক কায়েম বলেন, ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারে না। আমরা ছাত্র রাজনীতির যৌক্তিক সংস্কার চাই। গত ১৬ বছরে শিক্ষার্থীদের মাথায় দাসত্বের রাজনীতি ঢুকে গেছে। ছাত্র রাজনীতি মানে ক্যাডারবাজি নয়। ছাত্র রাজনীতি মানে ফাও খাওয়া বা চাঁদাবাজি নয়। সবাই সবার মতামত দিতে পারবে, বিরোধী মতকে সম্মান জানানো হবে; এটাই হোক ছাত্র রাজনীতির মূলনীতি।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি সাংগঠনিক সম্পাদক সংসদ আনিকা আনজুম অর্নি বলেন, এখন কথা বলার জন্য কেউ হামলা বা তুলে নিয়ে যাচ্ছে না। সুতরাং বর্তমানে গণতন্ত্র চর্চার পথটি সুগম হয়েছে। কথা বলা সংস্কৃতি চালু হয়েছে। তবে আমাদের আরও বহুদূর যেতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা নেই। ছাত্র রাজনীতিতে লীগ না থাকলেও প্রক্রিয়াটি আগের মতোই আছে বলে মত তার।

ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুসরাত জাহান শামামা বলেন, রাজনৈতিক দলের কর্মী বা শিক্ষার্থীরাই সব কথা বলে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা কথা বলতে পারে না। ছাত্র সংসদ থাকুক। এটাকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হবে।

যমুনা টেলিভিশনের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এ আলোচনা সঞ্চালনা করেন যমুনা নিউজের প্ল্যানিং অ্যান্ড অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর রোকসানা আনজুমান নিকোল। ইউএসএআইডি গোলটেবিল বৈঠকটির আয়োজনে সহযোগিতা করে।

গোলটেবিল আলোচনাটি পুরো দেখা যাবে এই লিঙ্কে: শিক্ষাঙ্গনে গণতন্ত্রের চর্চা

/এএম/আরএইচ/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply