আল আমিন হক অহন:
আজ রোববারের (৫ জানুয়ারি) মধ্যে সব প্রাথমিকের বই বিতরণের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তা পূরণ করতে পারলো না সরকার। ঘোষণা অনুযায়ী, ২০ জানুয়ারির মধ্যে সব শ্রেণির বই দেয়া যাবে কীনা- তাতেও শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড- এনসিটিবি বলছে, মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আগের মতো যেনো তেনো মানের বই বুছিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ। বই বিতরণে কেন এ বিলম্ব হচ্ছে?
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এনসিটিবির কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. রিয়াদ চৌধুরীকে ঘিরে আছেন এই বছরের বই মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের কিছু লোকজন। নানা অজুহাত দেখিয়ে বই মুদ্রণে আরও সময় চাইছেন তারা। কিন্তু রিয়াদ চৌধুরী সাফ জানিয়ে দিলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বই চায় সরকার।
এনসিটিবির কর্মকর্তাকে ঘিরে আছেন বই মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের কিছু লোকজন।
অধিকাংশ কারখানাতেই বই ছাপানোর তোড়জোড়। তবে ব্যতিক্রমও আছে। মালিকরা বলছে ২৪ ঘন্টাই কাজ চলছে। কিন্তু মাতুয়ালির প্রিন্টারসে এসে দেখা যায় এটি বন্ধ রয়েছে। যে কারণে বই বিতরণের সরকারের যে লক্ষ্যমাত্রা সেটি শেষ পর্যন্ত পূরণ হবে কীনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
বিগত বছরগুলোতে কাজ করা শ্রমিকরাই এখনও আছেন কারখানাগুলোতে। তারা বলছেন, এবার বইয়ের মানে কোনো ছাড় দেয়া হচ্ছে না। ভালো মানের কাগজ কারখানায় আনতে বিলম্ব করায় কাজও দেরিতে শুরু হয়েছে।
কারখানাতে কাজ করা এক শ্রমিক বলেন, আমি ১০ বছর ধরে এখানে কাজ করি। এমন ভালো বই আমি আগে কখনো করিনি। নিউজপ্রিন্টের কাগজে বই বানাইছি। তবে এবার ভালো মানের কাগজে বই বানাতে হচ্ছে।
তবে প্রতিদিনই এনসিটিবির কর্মকর্তারা বিভিন্ন কারখানায় তদারকি করছেন। বইয়ের মান ঠিকঠাক না হওয়ায় মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানকে কয়েক লাখ বই ফিরিয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সেসব বই ফের নতুন করে ছাপাতে হচ্ছে অনেক প্রেস মালিককে।
বই ছাপানো কারখানার এক প্রকাশক বলেন, বিগত বছরগুলোতে ৬০ এর জায়গায় এর কম দিয়েও বই ছাপানো গেছে। তবে এবার তো ৮০-৮০ ও ৭০-৭০ দিয়ে বই ছাপানো লাগতেছে। যার ফলে দেরি হচ্ছে।
এনসিটিবি বলছে, টেন্ডার নেয়ার সময় ১১ দিনে বই দেয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর। কিন্তু যে কাগজে বই ছাপানোর চিন্তা ছিলো তা এবার পারছেন না। নুতন করে ভালো মানের কাগজ সংগ্রহ করতে হচ্ছে তাদের।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, বিগত বছরগুলোতে দেখা যেতো যেনোতেনোভাবে বই ছাপানো হতো এবং দ্রুত বই ছাপানোর জন্য একটা চাপ প্রয়োগ করা হতো। পূর্বে যারা এনসিটিবি পরিচালনায় দায়িত্বে ছিল তারা এমন আবদার মেনে নেয়ায়, নিম্নমানের কাগজে ও নিম্নমানের বাঁধায়ের বই দিয়েছিল।
২০২৪ ও ২০২৫ সালের তৃতীয় শ্রেণির দুটো বই পাশাপাশি রেখে দেখা যায়, পার্থক্য স্পষ্ট- ২০২৫ এর বইগুলো যেমন ভারী তেমন উজ্বল। কাগজের মানে ছাড় দিলে সময়সীমা রক্ষা করা যেতো বলে দাবি এনসিটিবির।
বিগত ও এবছরের বইয়ের কাগজের মানের পার্থক্য
উল্লেখ্য, মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠান কে কোন জেলায় বই পাঠাবে তা টেন্ডার প্রক্রিয়ার সময়েই ঠিক করে দেয়া হয়। তাই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মান ঠিকঠাক রেখে যে আগে বই ছাপাতে পারছে- সেই প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত জেলায় আগে যাচ্ছে বই।
/এসআইএন
Leave a reply