ধনী নাউরুর গরীব হবার গল্প

|

শরিফুল ইসলাম নাফি:

৪০ বছর আগে মাথাপিছু আয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী দেশ, এখন গরীব দেশের তালিকায় ৬৬-তম। একসময় বার্ষিক আয় ছিল ১২৩ মিলিয়ন ডলার; অথচ এখন চলে অন্য দেশের সাহায্য-সহযোগিতায়।

বিশ্বের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম দ্বীপ রাষ্ট্র নাউরু। আয়তন মাত্র ২১ বর্গকিলোমিটার। প্রশান্ত মহাসাগরের মাইক্রোনেশিয়া অঞ্চলের দেশটি হঠাৎই আঙুল ফুলে কলা গাছে পরিণত হয়। কিন্তু দুর্নীতি, ভোগবিলাস আর অদূরদর্শিতায় সব হারিয়ে যায়।

নাউরুতে সামুদ্রিক পাখির বর্জ্য কয়েক মিলিয়ন বছর ধরে জমে উৎকৃষ্ট ফসফেটে পরিণত হয়। ১৯০৬ সালে জার্মানরা এই ভাণ্ডারের সন্ধান পায়। ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত এসব খনি নাউরুর নাগালের বাইরেই ছিল। স্বাধীনতা পাওয়ার পর নাউরুবাসী ফসফেটেরও মালিকানা পায়। এরপর সেই ফসফেট বেঁচেই ধনী হতে শুরু করে। ১৯৭৫ সালের মধ্যেই নাউরুর রাষ্ট্রীয় তহবিলে জমা হয় ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

নাউরুর ফসফেট

হঠাৎ বড়লোক হওয়া দেশটির মানুষের জীবনযাত্রায় বড় পরিবর্তন আসে। দামি বাড়ি, বিলাসবহুল হোটেল আর দামি দামি গাড়িতে ভরে যায় দ্বীপ রাষ্ট্রটি। সাতটি বোয়িং বিমান কেনা হয়, যা কিনা নাউরুর ১০ ভাগ জনগণকে একসঙ্গেই বহনে সক্ষম। সরকারি চাকরিজীবীরা রাষ্ট্রীয় অর্থে বিদেশে বিলাসী জীবনযাপন শুরু করে। প্রচুর পরিমাণ অর্থ পাচার হতে থাকে দেশটি থেকে।

কিন্তু ফসফেটের ভাণ্ডার তো আর অফুরন্ত নয়। একদিন সেখানে টান পড়ে। কিন্তু ‘বড়লোকি’তে আসক্ত নাউরুর অর্থনীতি তো ওটার ওপরই নির্ভরশীল ছিল। যার ফলাফল আর্থিক বিপর্যয়। হঠাৎ উড়তে থাকা দেশটির জনগণ মাটিতে আছড়ে পড়ে অল্প কদিনেই।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, ভোগাবিলাসে নাউরিয়ানদের ৯৪.৫ শতাংশই অতিরিক্ত স্থূল হয়ে পড়ে। ডায়াবেটিসের হারও বেশি। খাদ্য উৎপাদন না করে অস্বাস্থ্যকর খাবার আমদানি তাদের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। ধনী হয়ে যাবার পর তাদের অনেকে কাজ-কর্মও ছেড়ে দিয়েছিল। যে কারণে একটা প্রজন্মের ওপর ডায়াবেটিসও জেঁকে বসেছে।

বর্তমান দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার। ২০১৩ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়া দ্বীপটিকে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা শরণার্থীদের ক্যাম্প হিসাবে ব্যবহার করছে। মূলত নৌপথে অবৈধভাবে যারা অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান, তাদের আটকে রাখা হয় এই দ্বীপে। নিজের দেশকে কারাগার হিসেবে ভাড়া দিয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে বেশ বড় অঙ্কের টাকা পায় নাউরুবাসী।

নাউরুতে অস্ট্রেলিয়ার শরণার্থী শিবির

তবে সুসময় কখনো দীর্ঘস্থায়ী হয় না। হোক সেটা ব্যক্তি কিংবা দেশ। সঠিক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আর দীর্ঘমেয়াদী কার্যকরী সিদ্ধান্ত না নিতে পারলে, নাউরুর মতো অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে যেকোনো দেশের।

/এসআইএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply