বাউফল (পটুয়াখালী) করেসপনডেন্ট:
বিগত সরকারের আমলে মাদক কারবারিতে যুক্ত থাকা রেজাউল সরদার ওরফে রেজু এখন ওয়ার্ড শ্রমিক দলের সভাপতি! পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নে এমন ঘটনা ঘটেছে। শ্রমিক দলের সভাপতি পরিচয়ে রাস্তাঘাটে ব্যানার-ফেস্টুনও ঝুলিয়েছেন এই নেতা, নিয়মিত প্রভাব বিস্তারও করছেন এলাকায়।
তবে, উপজেলা শ্রমিক দলের আহবায়ক জানিয়েছেন, গত অক্টোবরেই তাকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু বহিষ্কারের অফিসিয়াল কোনো আদেশ দেখাতে পারেননি তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্ত রেজাউল ও তার স্ত্রী রুনুর বিরুদ্ধে বাউফল থানায় একাধিক মাদক মামলা চলমান রয়েছে। মাদক কারবারে জড়িত এই দম্পতি একাধিকবার মাদকসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতারও হয়েছিলেন। এছাড়া কালাইয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মিজান মোল্লার একান্ত সহচর হিসেবেও পরিচিত তিনি।
স্থানীয়রা জানান, রেজাউল সরদার ওরফে রেজু একজন পেশাদার মাদক কারবারি। কালাইয়া বন্দরের গোড়স্থানের সরকারি যায়গা দখল করে ঘর নির্মাণ করেছিলেন ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মিজান মোল্লা। সেই ঘরে মাদক ও জুয়ার আসর পরিচালনা করতেন তিনি। গত আগস্টে দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর রেজাউলের পরিচালিত ওই মাদকের আখড়ার ঘর গুড়িয়ে দেয় ছাত্র-জনতা। এরপরে অনেক দিন তিনি পালিয়ে বেড়িয়েছেন।
এখন তিনি কালাইয়া ইউনিয়নের ১নং শ্রমিক দলের সভাপতি পরিচয় ব্যবহার করে ব্যানার-ফেস্টুন টানিয়েছেন। বিএনপি দলীয় প্রভাব বিস্তার করে তিনি ফের মাদক কারবার শুরু করেছেন বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।
এ বিষয়ে উপজেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ফাতিমা জামান সামিয়া জানান, যুবলীগের এক নেতার ছত্রছায়ায় রেজু এতোদিন মাদক ব্যবসা করেছে। এখন ব্যবসা চালিয়ে যেতে সে শ্রমিক দলের পদ ব্যবহার করছেন। হাসিনা সরকার পতনের পরেও রেজাউলের স্ত্রী রুনু বেগমকে মাদকসহ আটক করে তিন মাসের কারাদণ্ড দিয়েছিলো ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এ বিষয়ে জানতে রেজাউল সরদারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার সংযোগ পাওয়া যায়নি।
উপজেলা শ্রমিকদলের আহবায়ক হাসান মাহমুদ মনজু বলেন, ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি করেছে ইউনিয়ন শ্রমিক দল। তাই রেজাউল কিভাবে কমিটিতে পদ পেয়েছেন, আমি জানতাম না। তবে কিছু মাস আগে জানতে পেরে আমি সাথে সাথে ইউনিয়ন সভাপতিকে তাকে বহিষ্কার করার নির্দেশ দিয়েছি।
এ বিষয়ে কালাইয়া ইউনিয়ন শ্রমিকদলের সভাপতি বাসার শিকদার বলেন, উপজেলা শ্রমিকদলের আহবায়ক নির্দেশনা দিলে আমি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে তাকে বহিষ্কার করেছি। সে যে ব্যানার-ফেস্টুন টানাচ্ছেন বিষয়টা আমাদের জানায়নি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
রেজাউল যুবলীগ সভাপতির একান্ত সহকারী হয়েও কিভাবে পদ পেলেন এবং অফিসিয়ালি তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে জবাবে তিনি বলেন, তখন ওয়ার্ড বিএনপির সবাই বলেছিলেন সে বিএনপি করে, তাই তাকে সভাপতি পদ দেয়া হয়েছিলো। তবে তাকে অফিসিয়ালি প্যাডে বহিষ্কার করা না হলেও উপজেলা কমিটির সকলের সিদ্ধান্তে স্ট্যাটাস দিয়ে আমি তাকে বহিষ্কারের বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছিলাম।
রেজাউল সরদার ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলা চলমান থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাউফল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আতিকুল ইসলাম যমুনা নিউজকে জানান, মাদকের বিষয় পুলিশ জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে। মাদক কারবারি কোন দলের সেটা পুলিশ কখনোই দেখে না। অপরাধের ধরন অনুযায়ী মাদক কারবারির বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা গ্রহণ করে বলেও জানান তিনি।
/এমএইচ
Leave a reply