বইমেলা ২০২৫ ও বাংলা একাডেমি পুরস্কার বৃত্তান্ত

|

অমর একুশে বইমেলা ২০২৫ শুরু হতে আর বেশি দিন বাকি নেই। এবারের প্রতিবাদ্য– ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি মেলা উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

ইতোমধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেলার স্টল ও প্যাভিলিয়ন তৈরির কাজ চলছে পুরোদমে। প্রাঙ্গণ সরগরম করছে মেলা আয়োজনের অন্তরালের মানুষজনে।

তবে বইমেলা শুরুর আগেই ঘটে গেছে অনেক ঘটনা। প্রতীকী অনশন করেছে সৃজনশীল প্রকাশকদের তিন সংগঠন, সামাজিকমাধ্যমে ১৮টি প্রকাশনা সংস্থাকে কালোতালিকাভুক্ত করার মতো দাবি নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। এরপর ঘটে বাংলা একাডেমির সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণা করার পর তা স্থগিতের মতো ঘটনা।

এই ঘটনা পরম্পরায় যাওয়ার আগে বলা যাক এবারের বইমেলা প্রসঙ্গে। গত বছরের তুলনায় এবারের মেলায় ইউনিট বৃদ্ধির সঙ্গে বেড়েছে মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। এবারের মেলায় ৭০৮টি প্রকাশনা সংস্থা অংশ নিচ্ছে, যার মধ্যে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে থাকবে ৯৯টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৬০৯টি। এছাড়া, থাকবে ৩৭টি প্যাভিলিয়ন ও ১৩০টি লিটল ম্যাগাজিন স্টল।

এরইমধ্যে প্যাভিলিয়ন (২৪×২৪), প্যাভিলিয়ন (২০×২০), চার ইউনিট, তিন ইউনিট, দুই ইউনিট (সাধারণ), এক ইউনিট (সাধারণ) এবং শিশুদের জন্যে মেলার অংশে শিশু ইউনিট-৩, ২ ও ১ হিসাব করে লটারির মাধ্যমে স্টল বরাদ্দের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

একুশে বইমেলার নীতিমালায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানবিরোধী, যেকোনো জাতিসত্তাবিরোধী, অশ্লীল, রুচিগর্হিত, শিষ্টাচারবিরোধী, সাম্প্রদায়িক, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এমন বা জননিরাপত্তার জন্য বা অন্য কোনো কারণে বইমেলার পক্ষে ক্ষতিকর কোনো বই বা পত্রিকা বা দ্রব্য অমর একুশে বইমেলায় বিক্রয়, প্রচার ও প্রদর্শনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে একাডেমি।

বইমেলার নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, বাংলা একাডেমি প্রচলিত কমিশনে একাডেমির বই বিক্রি করবে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে। 

সূত্র বলছে, প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বইমেলা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এছাড়া, একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহর অর্থাৎ সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বইমেলা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

প্রতিবারের মতো এবারের মেলায়ও নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের জন্য থাকছে ‘নতুন বই উন্মোচন মঞ্চ’ এবং ‘লেখক বলছি মঞ্চ’। নতুন বই উন্মোচন মঞ্চে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন এবং লেখক বলছি মঞ্চে প্রতিদিন নতুন বই সম্পর্কে লেখক-পাঠক-দর্শকের মধ্যে আলোচনা, মতবিনিময় ও প্রশ্নোত্তর পর্ব চলবে।

মেলায় প্রকাশিত বইয়ের গুণগতমানের বিচারে দেয়া হবে বিভিন্ন পুরস্কার। এর মধ্যে রয়েছে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’, ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’, ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’।

বাংলা একাডেমির লোগো

বাংলা একাডেমির সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণা ও স্থগিতকরণ

গত বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪’-এর জন্য মনোনীত ব্যক্তিদের নাম ঘোষণা করে বাংলা একাডেমি।

পুরস্কারের জন্য মনোনীত ব্যক্তিরা হলেন– কবিতায় মাসুদ খান, কথাসাহিত্যে সেলিম মোরশেদ, নাটক ও নাট্যসাহিত্যে শুভাশিস সিনহা, প্রবন্ধ-গদ্যে সলিমুল্লাহ খান, শিশুসাহিত্যে ফারুক নওয়াজ, অনুবাদে জি এইচ হাবীব, গবেষণায় মুহম্মদ শাহজাহান মিয়া, বিজ্ঞানে রেজাউর রহমান, মুক্তিযুদ্ধে মোহাম্মদ হাননান এবং ফোকলোরে সৈয়দ জামিল আহমেদ।

পরে শনিবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারের ঘোষিত নামের তালিকা স্থগিত করার কথা জানান।

নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন– বাংলা একাডেমি পুরস্কারের জন্য ঘোষিত নামের তালিকা স্থগিত করা হয়েছে। পুরস্কার ঘোষণা করার পর তালিকায় থাকা কারও কারও ব্যাপারে ‘কিছু অভিযোগ’ আসায় পুরস্কার স্থগিত হয়। আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে পুনর্বিবেচনার পর তালিকাটি বাংলা একাডেমি পুনঃপ্রকাশ করবে বলে জানান তিনি।

ফারুকী আরও বলেন, যে আজব নীতিমালা এই ধরনের উদ্ভট ও কোটারি পুরস্কারের সুযোগ করে দেয়, সেগুলা দ্রুত রিভিউ করা উচিত। পাশাপাশি, বাংলা একাডেমি কীভাবে পরিচালিত হবে, কোন নীতিতে চলবে- এই সব কিছুই দেখতে হবে। একাডেমির আমূল সংস্কারের দিকে আমরা যাবো এখন। দেশের সংস্কার হবে, বাংলা একাডেমির সংস্কার কেন নয়?

এর আগে, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে লেখকদের তালিকায় কোনো নারী লেখক না থাকার বিষয়টি তুলে ধরে এটিকে ‘বিস্ময়কর’ বলে মন্তব্য করে ফেসবুকে আরেকটি পোস্ট দেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা। এ পুরস্কারের জন্য ‘মনোনয়ন প্রক্রিয়া সংস্কারের সময় এসেছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

পুরস্কার স্থগিতের পর রোববার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে বাংলা একাডেমির সামনে বিক্ষোভ জানায় ‘বিক্ষুব্ধ কবি-লেখক সমাজ’ ও ‘জাতীয় সাংস্কৃতিক বিপ্লব’ নামের দুটি প্লাটফর্ম। তারা বাংলা একাডেমির আমূল সংস্কার, পুরস্কার ‘কেলেঙ্কারি’তে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান।

কথাসাহিত্যিক সেলিম মোরশেদ

এরপর স্থগিত হওয়া ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪’ প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্ত নেন কথাসাহিত্যিক সেলিম মোরশেদ। রোববার মধ্যরাতে ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে পুরস্কার প্রত্যাখানের তথ্য জানান সেলিম মোরশেদের স্ত্রী ইশরাত তানিয়া।

ফেসবুক পোস্টে সেলিম মোরশেদ লেখেন, পুরস্কারের বিষয়ে আমার ‘না’ বলার সুযোগও ছিল না। কারণ পুরস্কার ঘোষণার আগে একাডেমি যোগাযোগ করেনি। আচমকাই জেনেছি, বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্তির কথা।

জীবিত লেখকদের মধ্যে আমি বোধহয় সেই লেখক, যে নিজের বিচার-বুদ্ধি অনুসারে চলি। আমি বাংলা একাডেমির এই পুরস্কার বিনীতভাবে প্রত্যাখান করছি।

এরপর তিনি লেখেন, আমি ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪’ প্রত্যাখ্যান করলাম। অন্যরা নিশ্চয়ই কথাসাহিত্যে আমার চেয়ে গুণী লেখক খুঁজে পাবেন।

/এএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply