গাড়িচালক তাজুল ইসলাম
জোবায়েদ ইবনে শাহাদাত, চট্টগ্রাম:
চট্টগ্রাম ওয়াসার গাড়িচালক তাজুল ইসলাম। আগে ছিলেন হেলপার। পরে পদোন্নতি পেয়ে হন চালক। সাবেক এমডির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এই গাড়ি চালক দুর্নীতির মাধ্যমে গড়েছেন অঢেল সম্পদ। গৃহিণী স্ত্রী খাইরুন নেসার নামে রৌফাবাদে তৈয়্যবিয়া হাউজিং সোসাইটিতে রয়েছে ৫ তলা বাড়ি। এছাড়া ব্যাংকে রয়েছে অর্ধকোটি টাকাও।
চট্টগ্রাম ওয়াসার সেকেন্ড এমডি হিসেবে পরিচিত তাজুলের অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। ফলে এই দম্পতির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে দুদক।
জানা গেছে, স্থানীয়দের কাছে তাজুল এক বিস্ময়ের নাম। ১৯৮৯ সালে ২ হাজার টাকা বেতনে হেলপার হিসেবে যোগ দেন ওয়াসায়। পরে পদোন্নতি পেয়ে হন চালক। এরপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি তাকে। তার এমন উত্থানে রীতিমত অবাক স্থানীয়রা।
তার এলাকার এক ব্যক্তি বলেন, একজন ড্রাইভারের এত সম্পদ তো হতে পারে না। কোনোভাবেই এটি সম্ভব না। এটা নিশ্চিত যে, উনি দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি।
আরেকজন বলেন, ১৫-২০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করে বহুতল ভবনের মালিক হওয়া যায় কীভাবে? এসব তদন্ত করা দরকার।
তাজুলের স্ত্রী গৃহিণী, নেই আয়ের কোনো উৎস। অথচ তার নামে বাড়ি ও ব্যাংকে টাকাসহ ৫৯ লাখ ৮৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদের সন্ধান পেয়েছে দুদক। আয় বৈধ করতে স্ত্রীকে পোলট্রি খামারি সাজান তাজুল। তদন্তে প্রমাণ পেয়ে দুজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে দুদক।
চট্টগ্রামে দুদকের আইনজীবী কাজী সানোয়ার আহমেদ বলেন, তাজুল ইসলামের আয়ের সাথে ভবনটির যে খরচ তার মধ্যে ব্যাপক তারতম্য দেখা গেছে। তিনি ইনকাম ট্যাক্সে যে তথ্য দিয়েছেন তাতে বেশকিছু অসঙ্গতি রয়েছে। এসব থেকেই তথ্য মিলেছে তিনি জ্ঞাত আয় বহির্ভূতভাবে এসব সম্পদ অর্জন করেছেন।
তাজুল চট্টগ্রাম ওয়াসা শ্রমিক কর্মচারি ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। ১৫ বছর এমডি পদে থাকা একেএম ফজলুল্লাহর ঘনিষ্ঠজন। ওয়াসার সেকেন্ড এমডি হিসেবে পরিচিত এই গাড়িচালকের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যেরও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
একজন অভিযোগ করে বলেন, আউটসোর্সিংয়ের নামে লাখ লাখ টাকা নিয়ে ওয়াসায় ২০০ শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছে তাজুল ইসলাম। আরেকজন বলেন, ছয় জনের চাকরির জন্য তাজুলকে টাকা দিয়েছিলাম। চাকরি দেয়নি। সরকার পরিবর্তনের পর থেকে তিনি পলাতক। এখন টাকা চাইলে হুমকি দিচ্ছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার এক কর্মী বলেন, সাবেক এমডি একেএম ফজলুল্লাহর খুব কাছের ছিলেন ড্রাইভার তাজুল। সাবেক এমডির মাধ্যমেই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন। তার কথা একেএম ফজলুল্লাহ শুনতেন।
ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দুটি মামলা হওয়ার পর দুবছর আগে সাময়িক বরখাস্ত হন তাজুল ইসলাম। বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার ভারপ্রাপ্ত এমডি আনোয়ার পাশা বলেন, দুদক যেভাবে সহযোগিতা চাইবে সেভাবে সাক্ষ্য ও তথ্যপ্রমাণ দিয়ে দুদক এবং আদালতকে আমরা সহযোগিতার করবো। ওয়াসাকে দুর্নীতির করাল গ্রাস থেকে মুক্ত করতে চাই।
আত্মগোপনে থাকায় নানাভাবে চেষ্টার পরও তাজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী খাইরুন নেসার মন্তব্য জানা যায়নি।
/এনকে
Leave a reply