বিশ্বসেরা ৫ বইমেলা

|

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই আয়োজিত হয় বইমেলা। প্রযুক্তির পরাকাষ্ঠার মধ্যে থেকেও ছাপা বই নিয়ে বইপ্রেমি মানুষের মধ্যে যে দারুণ উচ্ছ্বাস থাকে, সেটা দেখাও আনন্দময় এক অনুভূতির।

বাংলাদেশের অমর একুশে বইমেলা কবে, কোথায়, কীভাবে হয়; তা আমাদের অনেকেরই জানা। বাংলাদেশের সঙ্গে অন্য দেশের পার্থক্য হচ্ছে, মাসব্যাপী বইমেলা আর কোথাও হয় না। পুরো এক মাস চললেও বইমেলার আবেদন যেনো ফুরায় না। কখনও কখনও সময়সীমা বাড়ানোও হয় অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে।

বাংলাদেশে বাংলা একাডেমির আয়োজনে হয় অমর একুশে গ্রন্থমেলা। বর্তমানে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। মেলার আলতো ঘ্রাণ নিয়ে আসুন জেনে নেই বিশ্বের অন্যতম সেরা কিছু বইমেলা সম্পর্কে—

ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা (জার্মানি):
ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন মেলার একটি। এই বইমেলাকে বলা হয় বাণিজ্যিক দিক থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বইমেলা। সেই ১৭ শতক থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ফ্রাঙ্কফুর্ট ট্রেড ফেয়ার গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হওয়া মেলাটি। মাঝখানে কিছু দিন বন্ধ থাকলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৯ সালে সেন্ট পল চার্চে এই বইমেলা পুনরায় শুরু হয়।

প্রতিবছর মধ্য অক্টোবরে হয় পাঁচ দিনের এই মেলা। প্রথম তিন দিন নির্ধারিত থাকে বিভিন্ন দেশ থেকে অংশ নেয়া প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এবং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের জন্য। শেষের দুই দিন উন্মুক্ত থাকে সর্বস্তরের জনগণের জন্য।

প্রতিবছর ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় প্রায় তিন লাখ বইপ্রেমির সমাগম ঘটে থাকে। তবে ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা মূলত বই বিক্রির পরিবর্তে বই প্রকাশনা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক প্রকাশনা আইন, লাইসেন্স ফি ও ট্রেডিংয়ের কাজে বেশি মনোযোগী থাকে।

লন্ডন বইমেলা (যুক্তরাজ্য):
আপনি বইপ্রেমি হলে অবশ্যই লন্ডন বইমেলার নাম শুনেছেন। আয়তনের দিক থেকে এই মেলা ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার মতো না হলেও এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় বইমেলার একটি।

প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে প্রতি বছর লন্ডন বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিবছর মার্চের ১২ দিনজুড়ে অনুষ্ঠিত হয় এই মেলা। বেশ কয়েকবার স্থান পরিবর্তনের পর গত কয়েক বছর ধরে লন্ডনের অলিম্পিয়া এক্সিবিশন সেন্টারে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

এ বইমেলা উপলক্ষ্যে প্রকাশকরা বিভিন্ন বিষয়ে দুর্লভ সব প্রকাশনা বের করেন। প্রকাশকদের জন্য আয়োজিত একটি বিশেষ ইভেন্ট থেকে আজকের এই পর্যায়ে এসেছে লন্ডন বইমেলা। ইভেন্টটির মূল উদ্দেশ্য ছিল, ছোট প্রকাশকদের কাজ তুলে ধরার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। ফ্রাঙ্কফুর্টের বইমেলার সঙ্গে এই মেলার বড় পার্থক্য হলো, এটি প্রকৃত অর্থে প্রকাশকদের মেলা, সাধারণ পাঠকের অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে।

গুয়াদালাজারা আন্তর্জাতিক বইমেলা (মেক্সিকো):
এই বইমেলা লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে বড় বইমেলা। মেক্সিকান শহর গুয়াদালাজারা স্প্যানিশ ভাষার প্রকাশনা জগতের প্রধান অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে। এটি দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

গুয়াদালাজারার এই মেলাটি যেমন বইয়ের জগতের লোকদের জন্য সবচেয়ে ভালো বাণিজ্যিক পরিবেশ নিশ্চিত করে, তেমনি পাঠকদের মনেও এটি এক অনন্য অভিজ্ঞতার জন্ম দেয়।

১৯৮৭ সাল থেকে প্রতি বছর গুয়াদালাজারা বিশ্ববিদ্যালয় এই মেলার আয়োজন করে আসছে, যার ব্যাপ্তি এখন প্রায় ৪০ হাজার মিটার স্কয়ার। সাধারণত নভেম্বরের শেষের দিকে এবং ডিসেম্বরের শুরুতে নয়দিন ধরে চলে মেলাটি।

হংকং বইমেলা (হংকং):
হংকং বইমেলা প্রথম অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯০ সালে। প্রতিবছর জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত হয় ১০ দিনের এই মেলা এটি হংকং ট্রেড ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল কর্তৃক আয়োজিত এশিয়ার সবচেয়ে বড় বইমেলা।

হংকং কনভেনশন অ্যান্ড এক্সিবিশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত এই মেলায় প্রায় ৮০ হাজার দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে। হংকং বইমেলা প্রথম শুরু হয় ১৯৯০ সালে। বর্তমানে হংকংয়ে এটি বছরের একটি প্রধান আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর বাড়ছে দর্শনার্থীর সংখ্যা।

মেলার উদ্দেশ্য, হংকংয়ের জনগণের জন্য কম দামে দেশি বা বিদেশি বই পৌঁছে দেয়া। এই মেলা মূলত আন্তর্জাতিক বই ব্যবসাকে উৎসাহিত করে। হংকং-এর ভৌগোলিক পটভূমি থেকে উৎসারিত সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারও এই এই বইমেলার অন্যতম লক্ষ্য।

কলকাতা পুস্তক মেলা (ভারত):
পাশের দেশ ভারতেও প্রতিবছর আয়োজিত হয় বইমেলা। পাঠক উপস্থিতির দিক থেকে পৃথিবীর অন্যতম সেরা বইমেলা বলা হয় আন্তর্জাতিক কলকাতা পুস্তক মেলাকে। এর প্রচলিত নাম কলকাতা বইমেলা।

অবাণিজ্যিক দিক থেকেও কলকাতা বইমেলার গুরুত্ব অনেক। ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার দিক থেকে বিবেচনা করলে কলকাতা বইমেলার স্থান তৃতীয়। আড়াই লাখেরও বেশি পাঠক প্রতিবছর এ বইমেলা পরিদর্শন করতে আসেন।

১৯৭৬ সালে শুরু হয় এ বইমেলা। বর্তমানে এই বইমেলাকে ‘বাঙালির চতুর্দশ পার্বণ’ বলা হয়। জানুয়ারির শেষ বুধবার থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম রোববার পর্যন্ত ১২ দিনব্যাপী আয়োজিত এ মেলায় বাংলাদেশের জন্যও আলাদা একটি প্যাভিলিয়ন থাকে। তবে এবার থাকছে না বাংলাদেশের কোনো প্যাভিলিয়ন।

/এএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply