ঐক্য পরিষদের দাবি করা ২৩ হত্যার একটিতেও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা খুঁজে পায়নি সরকার

|

গণঅভ্যুত্থানের পর গত সাড়ে চার মাসে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় ২৩ জন হত্যার শিকার হয়েছেন বলে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ যে দাবি করেছে, তার সত্যতা খুঁজে পায়নি অন্তর্বর্তী সরকার। এ নিয়ে সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে প্রধান উপদেষ্টার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে একটি স্ট্যাটাস দেয়া হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছে, গণঅভ্যুত্থানের পর সাম্প্রদায়িক সংহিসতায় গত সাড়ে চার মাসে দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় ২৩ জন হত্যার শিকার হয়েছেন। ঐক্য পরিষদের এই দাবিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেয় এবং উল্লেখিত ২৩টি হত্যাকাণ্ডের তালিকা সংগ্রহ করে। ওই তালিকা প্রধান উপদেষ্টার দফতর থেকে পুলিশের কাছে পাঠিয়ে প্রতিটি ঘটনার প্রকৃত কারণ ও গৃহীত আইনি ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।

পুলিশ সদর দফতর জানায়, উক্ত ২৩টি ঘটনার মধ্যে ২২টির প্রাথমিক কারণ সম্পর্কে পুলিশ অবগত হয়েছে এবং যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। তবে একটি ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। যে ২২টি ঘটনার বিস্তারিত ইতোমধ্যে জানা গেছে, তার মধ্যে একটি ঘটনার সঙ্গেও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কোনো সম্পর্ক নেই।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় বলছে, হত্যাকাণ্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ সাতটির সঙ্গে চুরি ও দস্যুতার সম্পর্ক রয়েছে, চারটিতে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কলহের ঘটনা জড়িত, তিনটি ক্ষেত্রে সাধারণ অপরাধ যেমন ধর্ষণ, অতিরিক্ত মদ পানে মৃত্যু, বিদ্রূপ মন্তব্য করা নিয়ে দুই পক্ষের মারামারি থেকে মৃত্যু, দুইটি দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু, দুইটি ব্যবসায়িক শত্রুতার জেরে মৃত্যু, একটিতে স্থানীয়দের সংঘাতে মৃত্যু, একটি জমিজমার বিরোধ সংক্রান্ত ঘটনায় মৃত্যু ও একটি আত্মহত্যার ঘটনা। একটি মৃত্যুর প্রকৃত কারণ এখনো না জানা গেলেও এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে সেখানে কোনো সাম্প্রদায়িক সংঘাতের বিষয় নেই।

এই তালিকায় এমন ব্যক্তিও রয়েছেন যিনি গত বছরের জানুয়ারি মাসে একটি ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ডিসেম্বর মাসে হাসপাতালে মারা যান।

প্রত্যেকটি ঘটনায় যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে আইনি পদক্ষেপ এরই মধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। এই ২৩ ঘটনার দুটোতে যেখানে আত্মহত্যা ও পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা রয়েছে সেই দুটিতে পুলিশ ইতোমধ্যে তদন্ত শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। অপর ২১টি তদন্তাধীন মামলায় ইতিমধ্যে ৪৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ১৭ জন নিজেদের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার কোনো ধরনের সহিংসতাকেই সমর্থন করে না। একই সঙ্গে এই ধরনের ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বলে প্রচারকে উদ্বেগজনক বলে মনে করে সরকার।

এই ধরনের বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা দেশের সার্বিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের সূত্রপাত ঘটাতে পারে বিবেচনায় সকল পক্ষকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানায় সরকার।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply