মাহুতের হাত থেকে দুধ পান করছে বাচ্চা হাতিটি।
এহসান আল কুতুবী ও ভাস্কর ভাদুড়ী:
এতিমের সংজ্ঞা তো আমরা সবাই জানি। তবে এ গল্পটি এতিম হাতিদের, গল্পটি তাদের বেড়ে ওঠার। কক্সবাজারের গহীন জঙ্গলে জন্মের সময়ই যে হাতি তার মা-কে হারায় তাদেরই পরম যত্নে বড় করা হয় ডুলাহাজরা সাফারি পার্কে।
পঞ্চাশ দিন থেকে ৩ মাস বয়সী এই হস্তি শাবকরা বেড়ে ওঠে মাহুতের হাত ধরে। পার্কের কর্তারাই এই হাতিদের বাবা-মা।
সরেজমিন পার্কে গিয়ে এমনই একটি হাতির দেখা মেলে। বাচ্চা এই ছেলে শাবকটির বয়স মাত্র ৫০দিন। দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো আইসোলেশন ওয়ার্ড। যদিও ডুলাহাজরা সাফারি পার্কে প্রায় দুই মাস ধরে এই দৃশ্য নিয়মিত।
মানুষ দেখলেই কখনও ধাক্কা দেয়ার চেষ্টা কখনও বা তার সাথে দৌড়ানো বাচ্চা হাতিটির শখ। গেইট খোলা পেলেই একছুটে বাইরে যাবার সুযোগও হাতছাড়া করতে চায় না। ছোট্ট এই আইসোলশেন সেন্টারে আদর-যত্নের কমতি নেই হস্তি শাবকটির।
জানা গেছে, গত ৪ জানুয়ারি টেকনাফের গহীন পাহাড়ে শাবকটিকে জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায় মা হাতিটি। বন কর্মকর্তারা জানান, প্রসবের সময়ই জরায়ু বের হয়ে যাবার কারণে অতিরিক্ত যন্ত্রণায় মারা যায় ওর মা।
এর পর থেকেই ওর আশ্রয়স্থল এই পার্কে। মাহুতের সঙ্গেও গড়ে উঠেছে দারুণ বন্ধুত্ব। আদরযত্নে কোনও ঘাটতি রাখা হচ্ছে না।
অন্তত দশভাগে দিনে দশ লিটার দুধ খাওয়ানো হচ্ছে হাতিটিকে। ৫০ দিনেই হাতিটির ওজন হয়েছে ১৩০ কেজি।এমন আদুরে হাতিটির নতুন নামের জন্য সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন পার্ক কর্তৃপক্ষ।
মাহুত মুহাম্মদ আইয়ুব জানান, বাচ্চাটি দুধ ছাড়া কিছু খায় না। প্রতিদিন দশবেলা দুধ দেয়া হয় তাকে। সকাল ৯টার দিকে বের হয়ে গায়ে রোদ লাগিয়ে ঘুড়ে বেড়ায়। আধঘণ্টা পর আবার চলে আসে নিজ কক্ষে। মানুষ দেখলে তাদের দিকে এগিয়ে যায়। ‘হয়তো মায়ের কথা মনে পড়ে’ ধারণা মাহুত আইয়ুবের।
শুধু এই নবজাতকটি নয় ,একই পার্কে দেখা মিলেছে আঠারো মাস বয়সী আরও একটি এতিম শাবকের। যার নাম রাখা হয়েছে বীর বাহাদুর। ২০২৩ সালে খুবই অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয় বীর বাহাদুরকে। আঠারো মাসের সেবা যত্নে বীরের ওজন এখন প্রায় আড়াইশ’ কেজি। শারীরিক ভাবেও অনেকটাই সুস্থ সে।
সাফারি পার্কটির ভেটেনারী অফিসার সাজ্জাত মুহাম্মদ জুলকারনাইন বলেন, হাতির এসব এতিম বাচ্চাগুলো একা একা বড় হলে সেগুলো বন ছেড়ে লোকালয়ে পৌঁছে যেতে পারে। ফলে যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। সেজন্য এগুলোকে এখানে নিয়ে আসা ও যত্ন করে বড় করে তোলা।
মায়ের আদরের কাঙ্গাল এই হাতিগুলোকে আইসোলেশনে রাখা হবে তিন বছর বয়স পর্যন্ত। তারপর ছেড়ে দেয়া হবে পার্কের প্রাকৃতিক পরিবেশে। মা হারা এই সন্তানগুলো আদরের জন্য সব সময়ই মুখিয়ে থাকে। তাই তাদের আদর যত্নেও কোনো কমতি রাখা হয়না।
/এমএইচ
Leave a reply