চলছে অমর একুশে বইমেলা। বাঙালির এই প্রাণের মেলায় পাঠক ও লেখককে একসূত্রে গাঁথতে যমুনা টেলিভিশনের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে থাকছে বই নিয়ে বিশেষ আয়োজন। সেই ধারাবাহিকতায় থাকছে বইমেলায় প্রকাশিত নতুন-পুরোনো বইয়ের রিভিউ বা পাঠকের প্রতিক্রিয়া।
আজ থাকছে ২০২৫ বইমেলায় প্রকাশিত লেখক মাহমুদুর রহমানের বই ‘পঞ্চকন্যা’ নিয়ে আলোচনা। লিখেছেন ফারিয়া রফিক।
কথার মিছিলে ‘কুরুক্ষেত্র’ শব্দ ব্যবহার করেনি কিংবা শব্দটি সম্পর্কে শোনেনি, এমন মানুষ ভূ-ভারতে বিরল। বড় কোনো ঝামেলার কথা হলেই আমরা বলে উঠি– ‘কুরুক্ষেত্রের ময়দান হয়ে গেছে’ অথবা ‘কুরুক্ষেত্র বেধে গেছে’। এই কুরুক্ষেত্র শব্দটি এসেছে হিন্দু পুরান ‘মহাভারত’ থেকে।
মহাভারতকে নিয়ে আছে বিস্তর জল্পনা-কল্পনা, আলাপ-আলোচনা। বই-পুস্তকও নেহাত কম নেই বাংলা সাহিত্যে। সেই দিক বিবেচনায় এই ‘পঞ্চকন্যা’ বইয়ের কোনো বিশেষত্ব নেই। মহাভারতের পাঁচ স্ত্রী চরিত্র— হিড়িম্বা (বৃকোদর ভীমের স্ত্রী), সুভদ্রা (তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুনের স্ত্রী ও অভিমন্যুর মাতা), গান্ধারী (কৌরবকুমারদের মাতা, রাজা ধৃতরাষ্ট্রের স্ত্রী এবং গান্ধার রাজ্যের রাজকুমারী), সত্যবতী (রাজা শান্তনুর স্ত্রী এবং পরবর্তীতে হস্তিনাপুরের ‘রাজমাতা’), আর অম্বাকে (কাশী রাজের জ্যেষ্ঠ কন্যা) নিয়ে লেখা এই বই।
পুরো মহাভারতে পঞ্চপাণ্ডব, দুর্যোধন, মামা শকুনি, দ্রোপদী যেভাবে আলোচিত হয়; এই পাঁচ স্ত্রী চরিত্র সেভাবে আলোচনায় উঠে আসে না। লেখক মাহমুদুর রহমান লেখার অনুষঙ্গ হিসেবে এদের বেছে নিয়েছেন বলে বইটা উল্লেখযোগ্য।
নিজের পুত্রদের জন্য হোক কিংবা রাজমাতা হবার সুপ্ত ইচ্ছে থেকে, সত্যবতীর কি কখনও তার নিজের সিদ্ধান্তের ওপর অনুশোচনা হয়নি? কিংবা ধর্মের প্রতি আস্থাশীল হবার পরও নিজের পুত্রদের অধর্মের পথে যেতে দেখে কখনও কি ‘মা’ হিসেবে ব্যর্থ মনে হয়নি? মহাভারতে এসবের উল্লেখ তেমন না থাকলেও ‘পঞ্চকন্যা’তে এসব বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।

বলা হয়ে থাকে– যা নেই ভারতে (মহাভারতে), তা নেই ভারতে (ভারতবর্ষ)। এ কারণেই মূলত মহাভারত নিয়ে লেখা সাহিত্যে আমার উৎসাহ বেশি। এ কারণেই এই নভেলার সংকলন নিয়ে আমার প্রত্যাশা বেশি ছিল। কিন্তু পড়া শেষ করে মনে হয়েছে, যতোটা গভীরে পৌঁছানোর কথা ছিল, ততোটা তলদেশ ছুঁতে পারেনি পঞ্চকন্যা। গান্ধারী কিংবা সত্যবতীর মানসিক অবস্থা যেভাবে বইটাতে তুলে ধরা হয়েছে; সেভাবে সুভদ্রা, অম্বা ও হিড়িম্বার দিকটুকু তুলে ধরতে পারলে আরও জোরালো হতে পারতো।
তবে এই ব্যাপারটা জেনে অবাক হয়েছি যে, গান্ধারীর ‘শতপুত্র’ বলতে সংখ্যার দিক থেকে নয় বরং শক্তির দিক থেকে শতপুত্রকে বোঝানো হয়েছে। যদিও গান্ধারীর ঔরসজাত সন্তানদের ছাড়াও ধৃতরাষ্ট্রের অন্য পুত্রদের মিলিয়ে শতজন কুরুকুমার-ই হয়েছিল।
পুরো বইটাকে লেখক চরিত্র অনুসারে পাঁচ ভাগ করেছেন। প্রতি ভাগে একটি চরিত্রকে নিয়েই আলোচনা সীমাবদ্ধ রেখেছেন। এতে করে বইটা পড়ে বেশ আরাম পাওয়া গেছে। লেখকও বলছেন, পাঁচ চরিত্র নিয়ে এটা ছোট ছোট নভেলার সংকলন।
বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন মোস্তাফিজ কারিগর। প্রচ্ছদটি যথেষ্ট ভালো। বেশ কয়েক জায়গায় বানান বিভ্রাট চোখে পড়েছে। বাঁধাই থেকে শুরু করে কাগজের মান, ছাপা সব কিছুই ভালো লেগেছে।
বইঃ পঞ্চকন্যা
লেখকঃ মাহমুদুর রহমান
প্রকাশনীঃ নালন্দা
ধরনঃ নভেলা
Leave a reply