চতুর্থ বছরে গড়ালো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ

|

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পুতিনের রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ চালিয়েছিল। তিন বছর আগের সেই আক্রমণ ছিল ভয়ংকর। দেশ হিসেবে ইউক্রেনকে পৃথিবীর বুক থেকে মুছে ফেলার সর্বাত্মক রুশ আগ্রাসন ছিল তা। সেসময় ইউক্রেন জাতিকে ধ্বংস করার ভয়ংকর নৃশংসতায় মেতে উঠতে দেখা গেছে রুশ সেনাবাহিনীকে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হিসেবে দেখা হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে। শুরু হওয়া সেই সর্বাত্মক সংঘাত আজও চলছে পুরোদমে। থামার লক্ষণতো নেই-ই উল্টো বেড়ে চলেছে পরিধি।

মূলত, রাশিয়ার বলয় থেকে বেরিয়ে ইউক্রেনের পশ্চিমাদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রবণতা থেকেই সূত্রপাত হয়েছিল বিবাদের। যা ন্যাটোর সদস্যপদের আকাঙ্ক্ষা ঘিরে রূপ নেয় চূড়ান্ত সংঘাতে। প্রতিবেশীর ওপর মোড়লগিরি ধরে রাখাই শুধু নয়, বরং আঞ্চলিকতার গণ্ডি পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সামনে নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দেয়াও অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে মস্কোর সামরিক অভিযানের পেছনে।

গেল তিন বছরে দু’দেশের ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে দিয়েছে এই যুদ্ধ; একইসাথে তা বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্যও হয়ে গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে উভয় দেশ। কিয়েভের দাবি যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে ৮ লাখেরও বেশি রুশ সেনা। আর মস্কো বলছে- অন্তত সাত লাখ ইউক্রেনীয় সেনার প্রাণ গেছে তাদের হামলায়। বাস্তুচ্যুত হয়েছে ৬০ লাখেরও বেশি ইউক্রেনীয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্থনীতিও।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের পরও চালকের আসনে রাশিয়াই। এরই মধ্যে দখল করেছে ইউক্রেনের বিশাল এলাকা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে, দ্বিতীয় মেয়াদে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার পর বেড়েছে ইউক্রেনের সাথে দূরত্ব। কিয়েভকে অস্ত্র সহায়তা বন্ধতো করেছেই, উল্টো রাশিয়ার সাথে ইতিবাচক সম্পর্ক জোরদারে মন দিয়েছে নতুন মার্কিন প্রশাসন। এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় মোড়লরাও হাঁটতে পারে ওয়াশিংটনের পথে, এমন ধারণা করছেন কেউ কেউ।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ জন ইরাথ বলেন, সোভিয়েতের ভাঙনের পর থেকেই নতুন দেশগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা ছিল রাশিয়ার। বিশেষ করে ইউক্রেন। এই দেশের পেছনে রুশ সরকারের জাতীয় স্বার্থ লুকিয়ে ছিল। কিন্তু যখনই কিয়েভ স্বাধীনভাবে চলার চেষ্টা করলো কিংবা ইউরোপীয় সংস্থাগুলোয় যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করলো তখন সেটা রাশিয়ার কাছে অগ্রহণযোগ্য হয়ে দাঁড়ায়। আর তাই সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে রাশিয়ার তার মনোভাব প্রকাশ করে।

অপর বিশেষজ্ঞ জেন কিনিনমন্টের মতে, রাশিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা নিয়ে ইউরোপীয় নেতারা সবাই চিন্তিত। কেননা, ওয়াশিংটন সরাসরি মস্কোর সাথে কথা বলছে। আর তাই এই মার্কিন প্রশাসন ইউরোপের স্বার্থের কথা বিবেচনা করবে না। এজন্যই, রাশিয়ার বিষয়ে ইউরোপীয় দেশগুলো আরও বড় পরিসরে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাতে পারে। কেননা, দিনশেষে ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারস্থ হওয়ার চেয়ে রাশিয়ার সাথে সমঝোতাই শ্রেয়।

উল্লেখ্য, রাশিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্র, ইইউর সম্পর্ক কোনদিকে মোড় নেয়, অনেকটা তার উপরই নির্ভর করছে মস্কো-কিয়েভ যুদ্ধের ফলাফল কিংবা ইউক্রেনের ভাগ্য।

/এমএইচআর


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply