ভোটারের বয়স ১৬ প্রস্তাব: কোন দেশে কী নিয়ম?

|

নির্বাচনে ভোটারের বয়স ১৬ বছর করার প্রস্তাব আগামীকাল জমা দেবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তবে, প্রশ্ন হচ্ছে এতো অল্প বয়সে কোন কোন দেশে ভোট দেয়ার বিধান রয়েছে? এশিয়ার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সংবিধান অনুসারে, জাতীয় নির্বাচনে ভোটারদের সর্বনিম্ন বয়স কত।

প্রথমেই বলে নেয়া ভালো যে জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে বাংলাদেশ বিভিন্ন সংস্কারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নতুন চিন্তাধারা নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন রাজনৈতিক দল। সেই সাথে, ইগালেটারিয়ান কিংবা সবার জন্য সমান অধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে চলছে বিশ্লেষণ।

পৃথিবীর কিছু দেশ রয়েছে যেখানে জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভোটারের নূন্যতম বয়স ধরা হয় ১৬ বছর। এই লিস্টে প্রথমেই আসবে ইউরোপের দেশ অস্ট্রিয়া। এই দেশটিতে ন্যাশনাল ইলেকশন ছাড়াও রিজিওনাল এবং লোকাল ইলেকশনে ১৬ বছর বয়সী ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন।

একটু ইউরোপ থেকে চলে যাওয়া যাক সাউথ আমেরিকায়। ৫ বারের ফুটবল বিশ্বকাপজয়ী দেশ ব্রাজিলে ১৬ বছর বয়সীরা জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারে। তবে ১৬ ও ১৭ বছর বয়সীদের পাশাপাশি ৭০ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য ভোট দেয়া ঐচ্ছিক।

এছাড়া ইকুয়েডরে ১৬ বছর বয়সীরা জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেয়ার অনুমতি পায়। তবে, ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য ভোট দেয়া ঐচ্ছিক।

এদিকে, নিকারাগুয়াতে ১৬ বছর বয়সীরা জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। তবে ১৬ ও ১৭ বছর বয়সীদের জন্য ভোট দেয়া ঐচ্ছিক।

স্কটল্যান্ড: ১৬ বছর বয়সীরা স্কটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচন এবং স্কটল্যান্ডের স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারে।

ওয়েলস (যুক্তরাজ্য): ১৬ বছর বয়সীরা ওয়েলশ পার্লামেন্ট (সেনেড) নির্বাচন এবং ওয়েলসের স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারে।

গার্নসি (ক্রাউন ডিপেন্ডেন্সি): ১৬ বছর বয়সীরা স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারে।

আইল অফ ম্যান (ক্রাউন ডিপেন্ডেন্সি): ১৬ বছর বয়সীরা স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারে।

জার্সি (ক্রাউন ডিপেন্ডেন্সি): ১৬ বছর বয়সীরা স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারে।

মাল্টা: ১৬ বছর বয়সীরা স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারে।

আর্জেন্টিনা: ১৬ বছর বয়সীরা জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারে। তবে ১৬ ও ১৭ বছর বয়সীদের জন্য ভোট দেওয়া ঐচ্ছিক।

কিউবা: ১৬ বছর বয়সীরা জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারে।

এস্তোনিয়া: ১৬ বছর বয়সীরা স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারে।

জার্মানি (কিছু রাজ্য): কিছু জার্মান রাজ্যে (যেমন, ব্রান্ডেনবার্গ, ব্রেমেন, এবং হামবুর্গ), ১৬ বছর বয়সীরা স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারে।

নরওয়ে (কিছু পৌরসভা): কিছু পৌরসভায় ১৬ বছর বয়সীরা স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারে।

গ্রিস (কিছু স্থানীয় নির্বাচন): ১৬ বছর বয়সীরা কিছু স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারে।

ইন্দোনেশিয়া (কিছু স্থানীয় নির্বাচন): ১৬ বছর বয়সীরা কিছু স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারে।

এগুলো প্রাথমিক উদাহরণ। তবে নিয়ম এবং যোগ্যতা অনুসারে নির্বাচনের ধরন (জাতীয়, আঞ্চলিক, বা স্থানীয়) এবং প্রতিটি দেশ বা অঞ্চলের নির্দিষ্ট আইনের ওপর ভিত্তি করে ভোটারদের বয়স ভিন্ন হতে পারে।

এসব তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, কিছু দেশে ১৬ ও ১৭ বছর বয়সীদের জন্য ভোট দেয়া ঐচ্ছিক (যেমন, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ইকুয়েডর, নিকারাগুয়া), আবার কিছু দেশে একবার নিবন্ধন করলে ভোট দেওয়া বাধ্যতামূলক (যেমন, অস্ট্রিয়া, কিউবা)।

অন্য কিছু দেশে ১৬ বছর বয়সীরা শুধুমাত্র স্থানীয় বা আঞ্চলিক নির্বাচনে ভোট দিতে পারে (যেমন, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস, জার্মানির কিছু রাজ্য), কিন্তু জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অনুমতি নেই।

এদিকে, ভারতের জাতীয় নির্বাচন (এবং অন্যান্য সব নির্বাচন)-এ ভোট দেওয়ার ন্যূনতম বয়স ১৮। এছাড়াও, শ্রীলঙ্কা, মালায়শিয়া, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান, ভূটান, নেপাল, কম্বোডিয়া, লাওস, আফগানিস্তানসহ বেশিরভাগ দেশে জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য ভোটারদের নূন্যতম বয়স একই।

আর কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড— এসব দেশে ভোট দেয়ার জন্য ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর। যদি পার্থক্য বিশ্লেষণ করে তালিকা তৈরি করা হয় তাহলে দেখা যাবে, বেশিরভাগ দেশই ভোট দেয়ার জন্য ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর নির্ধারণ করেছে। কারণ- হয়তো ১৬ বছর বয়সী একজন নাগরিক দায়িত্ব নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভোটটি দিতে গিয়ে বিভ্রান্ত হতে পারেন। এছাড়াও, যেসব দেশ ১৬ বছর বয়সীদের ভোট দেয়ার অপশন দিয়েছে, সেসব দেশে ভোট দেয়া ঐচ্ছিক করা হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৬ থেকে ১৮—এই দুই বছর একজন মানুষের মনস্তাত্ত্বিক বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া জাতীয় নির্বাচনের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টে একটি ভোটও বদলে দিতে পারে রেজাল্ট; এমনকি রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর ভাগ্যও।

/এআই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply