গল: ‘রাবণের লঙ্কায়’ এক নয়নাভিরাম শহর

|

দ্বীপ পাড়ের অপূর্ব সুন্দর শহর শ্রীলঙ্কার গল। এই শহরের চারপাশে যেমন সমুদ্র, তেমনি শহরের প্রবেশদ্বারে আছে আইকনিক ডাচ ফোর্ট। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন এই শহরে দেখা মেলে না ট্রাফিক পুলিশের।

ভারত মহাসাগর তীরবর্তী অপার্থিব সৌন্দর্যের এই শহরেই ‘গল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম’। বিশ্বের অন্যতম মনোরম লোকেশনের এক ক্রিকেট মাঠ, এক পাশে ঢেউ খেলানো সমুদ্র, অন্য পাশে শতাব্দী প্রাচীন দুর্গ।

গল ঘুরে দেখার জন্য সবচেয়ে সহজ বাহন ‘টুকটুক’, বাংলাদেশিদের জন্য পরিচিত নাম বেবি ট্যাক্সি বললেও ভুল হবে না। এখানকার টুকটুকগুলো একটু ভিন্ন। বেশিরভাগই রঙিন, কিছু কিছুতে আবার ট্যুর গাইড হিসেবেও কাজ করেন চালকরা।

গল ফোর্ট মূল আকর্ষণ হলেও অসংখ্য বিচ আছে গলজুড়ে— উনাওয়াতুনা, জাঙ্গালাবিচ, মিরিসা কিংবা থাল্পে। সেখানে নেই কোনো কোলাহল, বেশিরভাগই যেন জনমানবশূন্য। বিশেষ করে ভোর কিংবা গোধূলি বেলায় এসব সমুদ্রতটে দাঁড়িয়ে থাকলে মনে হয়, গোটা সাগরটা যেন কেবল আপনারই জন্যে।

দূর্গের এক প্রান্তে আছে শহরের সবচেয়ে পুরোনো লাইটহাউজ। সেটিও জনপ্রিয় এক পর্যটক কেন্দ্র। ১৮৪৮ সালে প্রথম এটি নির্মিত হয়, কিন্তু আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর ১৯৩৯ সালে বর্তমান কাঠামোটি তৈরি করা হয়। লাইটহাউজের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠলে দেখা মেলে চারপাশের সাগর, পাথুরে প্রাচীর আর শহরের দৃশ্যপট— একই ফ্রেমে ইতিহাস আর প্রকৃতি।

দুর্গের ভেতরে থাকা ডাচ কলোনি আপনাকে ফিরিয়ে নিতে পারে সপ্তদশ শতকে। চারশো থেকে সাড়ে চারশো বছরের পুরোনো ঘর-বাড়ি আছে ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক এই কলোনিতে। যদিও বাইরের চাকচিক্য দেখে তা বোঝার উপায় নেই। হাঁটতে হাঁটতেই চোখে পড়বে কাঠের জানালাওয়ালা ইউরোপীয় ঘর, পুরোনো গীর্জা, হাতের লেখা সাইনবোর্ড, কিংবা একশ বছরের পুরোনো বাড়ি বদলে তৈরি ক্যাফে। এক পাশে ব্রিটিশ আমলের অল সেন্টস চার্চ, অন্যদিকে মুসলিমদের মেহেরিয়া মসজিদ— এক শহরে বহু সভ্যতার যুগপৎ বসবাস।

গল শহরটা বেশ পরিস্কার পরিছন্ন। খুব একটা দেখে মেলে না ট্রাফিক পুলিশের। প্রয়োজনও হয় না। ট্রাফিক সাইন দেখে দাঁড়িয়ে যান চালকরা। শুধু তাই নয়, স্কুল চলাকালীন দেখা যায় ভিন্নচিত্র। শৃঙ্খলা ও ট্রাফিকের দায়িত্বে ক্ষুদে ছাত্র-ছাত্রীরা; এমনকি বাচ্চারা যাওয়া-আসার পথে নির্দিষ্ট সময় ওই রাস্তায় অপেক্ষা করতে হয় বাহনগুলোকেও।

দিনের আলোর মতোই ঝকঝকে রাতের গল। নিস্তব্ধ রাতে কানে বাজে সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ। নেই নিরাপত্তার শঙ্কা, অবলীলায় হেঁটে বেড়ানো যায় যেকোনো সময়। সিজনে যেমন প্রতিদিন থাকে হাজারও মানুষ, তেমনি, অফ সিজনে একেবারেই শান্ত।

গল এমন এক শহর, যেখানে প্রতিটি কোণায় গল্প লুকানো— কখনও তা উপনিবেশিক স্মৃতি, কখনও তা সমুদ্রের নিঃশব্দ ডাক। শুধু চোখ নয়, মন দিয়ে দেখলেই গল তার আসল সৌন্দর্য তুলে ধরে।

/এমএইচআর


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply