টেলিকম লাইসেন্সিং ব্যবস্থাপনা: চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন স্থানীয় উদ্যোক্তারা

|

মাসুদুজ্জামান রবিন:

বড় ধরনের সংস্কার আসছে টেলিকম নীতিমালায়। লাইসেন্সিং ব্যবস্থায় আনা হচ্ছে ব্যাপক পরিবর্তন। ‘টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং ব্যবস্থার সংস্কার নীতিমালা- ২০২৫’ এর খসড়ায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা বহুস্তর বিশিষ্ট লাইসেন্সিং কাঠামো বিলুপ্তির ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

তবে, উদ্যোক্তা ও প্রযুক্তিবিদদের অভিমত এই প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন হলে দেশি উদ্যোক্তারা বিলুপ্ত হবে।

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি এম এ হাকিম বলেছেন, খসড়া নীতিমালায় কিছু শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো যদি প্রয়োগ করা হয় তাহলে দেশীয় উদ্যোক্তরা আগামী ছয় মাস থেকে এক বছর টিকে থাকবে। বহুজাতিক যেসব প্রতিষ্ঠান আছে বিশেষ করে টেলিকম অপারেটররা একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করবে।

সংস্কার প্রস্তাবনায় সরকার টেলিকম খাতে ইউনিফায়েড লাইসেন্স স্কিমে যাচ্ছে। প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, এ ধরনের উদ্যোগে নতুন কর্মসংস্থান তৈরির পথ বন্ধ করবে। পাশাপাশি স্থানীয় নতুন উদ্যোক্তাদের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। এ ধরনের উদ্যোগকে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ব্যবসা মোবাইল অপারেটরদের হাতে তুলে দেয়ার পাঁয়তারা বলে মনে করছেন তারা।

বেসিস সহায়ক কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান রাফেল কবীর বলেন, যখন ইউনিফায়েড লাইসেন্সিং নিয়ে আসা হবে, তখন বড় যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করছে বা যারা আসতে চায় তারা যত তাড়াতাড়ি রোল আউট করতে পারবে। আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ছেলেটা উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করতেছে তার পক্ষে আসলে গ্রামীণফোনের সাথে যুদ্ধ করে নতুন একটা সেবা নিয়ে আসা প্রায় অসম্ভব। তার মানে দেশীয় কোনও শিল্পই আসলে এই তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিকশিত হবে না।

অন্যান্য দেশের মতো সব ধরনের নেটওয়ার্ক কাঠামো স্থানীয় উদ্যোক্তাদের হাতে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিমত, প্রস্তাবিত সংস্কার প্রস্তাবনা জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মধ্যে ফেলবে।

এম এ হাকিম আরও বললেন, ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক কিংবা দেশীয় নেটওয়ার্ক কোনও সময় বৈদেশিক কিংবা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেয়া উচিত হবে না। কারণ, পরবর্তী যুদ্ধ হবে তথ্যপ্রযুক্তির, ডেটার। সেক্ষেত্রে স্থানীয় নেটওয়ার্ক, ডোমেস্টিক নেটওয়ার্ক, ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক উদ্যোক্তাদের হাতেই থাকা দরকার।

সেবার মান বৃদ্ধির বিষয়টি সামনে রেখে প্রায় দেড় যুগ ধরে চলে আসা স্তরভিত্তিক সেবায় স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ব্যবসা গুটিয়ে ফেলার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রযুক্তিবিদের আশঙ্কা, খসড়া প্রস্তাবনায় সরকারের এ খাতের রাজস্ব আয়ে বড় ধরনের ধাক্কা লাগবে।

রাফেল কবীর বলেন, আমার ধারণা, রাজস্ব খাতে সরকার বড় একটি ধাক্কা খাবে। কারণ, এই সরকার এখন তৈরি না, স্তরভিত্তিক লেয়ার ছাড়া যখন ইউনিফাইড লাইসেন্সিংয়ে যাব, তখন এই ধরনের অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়নকে আমরা কীভাবে আটকাবো বা ধরবো সেই ধরনের প্রয়োজনীয় লোকবল বা টেকনোলজি আসলে আমাদের এখনও গড়ে উঠেনি। সেটা উঠার আগেই হঠাৎ করে সরকার এই ইউনিফাইড লাইসেন্সিংয়ে চলে গেছে।

সেবার মান বৃদ্ধির জন্য বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ তৈরির কথা জানায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।

সংস্থাটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী বলেন, টেলিকমিউনিকেশন ইন্ডাস্ট্রিটা একটা বড় বিনিয়োগের জায়গা। এখানে যে কেউ চাইলেই এসে ব্যবসা করতে পারবে তা না। যে দুইটা জায়গা আমি দেখি, এসএমই খাত সংশ্লিষ্টদেরকে আনতে পারবো মাত্র দুইটা জায়গা আছে এ রকম। একটা হচ্ছে সফটওয়্যারভিত্তিক ডিজিটাল সার্ভিস প্ল্যাটফর্ম যারা তৈরি করেন। আরেকটা হচ্ছে আইএসপি।

এদিকে, সংস্কার প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের আগে বিদ্যমান লাইসেন্সিং ব্যবস্থার ত্রুটি বিচ্যুতি নিয়ে আরও গবেষণার তাগিদ দিচ্ছেন স্থানীয় উদ্যোক্তারা।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply