গাইবান্ধা করেসপনডেন্ট:
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলা শহরের অতি পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ কয়েকটি গাছের নিচে চরম আতঙ্কে বসবাস করছেন সাংবাদিক জিল্লুর রহমান মন্ডল পলাশ ও তার পরিবার। শুধু সাংবাদিক পরিবার নয়, বাসার সামনের একাধিক দোকান মালিকরাও দিনরাত আতঙ্কে ব্যবসা করছেন। গাছগুলো অপসারণে স্থানীয়ভাবে বহু চেষ্টা করা হয়। লিখিত অভিযোগ করা হয় প্রশাসনের কাছেও। কিন্তু মেলেনি প্রতিকার।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক পলাশ, যমুনা টেলিভিশন ও বাংলা ট্রিবিউনের গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি। তিনি জানান, বিট্রিশ আমল থেকে সাদুল্লাপুর ভূমি অফিস সড়কের চারমাথা মোড়ের পাশে তাদের বাবা-দাদার পরিবারের মালিকানাধীন ৮ শতক জমিতে বাসাবাড়ি ও গুদাম-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেই বাড়ির সীমানা ঘেঁষে প্রতিবেশী জাকিউল হক মানিকের জমিতে থাকা অতি পুরনো বিশালাকৃতির ৫-৬টি মেহগনির গাছ বহু বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। গাছগুলোর শিকড় দুর্বল হয়ে গিয়ে অধিকাংশ ডালপালা তাদের সীমানায় হেলে পড়েছে এবং যেকোনো সময় ভেঙে প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষতি ঘটাতে পারে। বিশেষ করে সামান্য বাতাস ও বৃষ্টিতে গাছগুলো দুলতে থাকে তখন শিশুরা পর্যন্ত ঘরে থাকতে ভয় পায়।
সাংবাদিক পলাশ অভিযোগ করেন, গাছের মালিক মানিক আগে থেকেই প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণ করছেন। সে কারণে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তিনি গাছগুলো না কেটে আমার পরিবারের মৃত্যুফাঁদ তৈরি করে রেখেছেন।
তিনি আরও জানান, ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো অপসারণের জন্য স্থানীয়ভাবে বহু চেষ্টা শেষে গত ১৯ মে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবরে একটি লিখিত আবেদন করি। দীর্ঘ একমাস পর গত ১৮ জুন ইউএনও আমার জ্ঞাতার্থে দায়সারা প্রতিবেদন দেন। যেখানে তিনি বা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কেউ সরেজমিনে তদন্তে যাননি। তবে উপজেলা বন বিভাগ এবং বনগ্রাম ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা সরেজমিন পরির্দশনে এসে গাছের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা নিশ্চিত করলেও প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার আশঙ্কা কিংবা পরিবারের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট কোন কিছুই উল্লেখ করেননি।
অভিযোগকারীর দাবি, ইউএনও’র প্রতিবেদনে শুধু বলা হয়েছে, উক্ত জমিতে সরকারি কোন স্বত্ব ও স্বার্থ নেই এবং ‘আদালতে বাটোয়ারা মামলা চলমান’ থাকায় তার কিছুই করার নেই। প্রদত্ত প্রতিবেদনে ইউএনও’র দায়সারা মন্তব্য প্রশাসনিক দায়িত্ব এড়িয়ে চলার শামিল এবং আইনগতভাবে অসম্পূর্ণ। উক্ত জমির বিরোধে আদালতে দুটি মামলা থাকলেও বাস্তবতা হলো গাছ কাটার বিষয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা নেই বলেও জানান তিনি।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক পলাশ বলেন, জমির সীমানা অনুযায়ী বিবাদী গাছের মালিক বটে। বিরোধপূর্ণ কোন জমিতে গাছ কাটা বা অপসারণের বিষয় মামলার পরিধিতে পড়েনা, বিশেষ করে যখন তা প্রাণহানির ঝুঁকি সৃষ্টি করে। যেহেতু গাছগুলো বিপদজনক, ইউএনও গাছগুলো অপসারণে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৩৩ ধারায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ব্যবস্থা নিতে পারতেন। অথচ আইনি ক্ষমতা থেকেও চরম অবহেলা ও নিজ দায়িত্ব এড়িয়ে গেছেন তিনি। ফলে প্রতিকারের আশায় আইনগত দিক উল্লেখ করে গত রোববার (২২ জুন) আবারও ইউএনও বরাবরে লিখিত আবেদন করি।
তবে দায়সাড়া তদন্তের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী মোহাম্মদ অনিক ইসলাম। তিনি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ভুক্তভোগীর আবেদনের প্রেক্ষিতে সহকারী কমিশানার (ভূমি) প্রেরিত তদন্ত প্রতিবেদনে জানান যে, উক্ত জমিতে কর ব্যতীত অন্য কোন সরকারি স্বত্ব ও স্বার্থ নেই এবং বর্ণিত জমি নিয়ে আদালতে বাটোয়ারা মামলা চলমান থাকায় উল্লিখিত আবেদনের বিষয়ে কোন করণীয় নেই।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী দোকান মালিক মিলন মন্ডল ও মিঠুন সরকার বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ সবচেয়ে বড় মেহগনির গাছ দীর্ঘদিন ধরে দোকান ঘরের টিনের চালার সঙ্গে হেলে রয়েছে। বৃষ্টি বা সামান্য ঝড় হলেই গাছগুলো দুলতে থাকে। আমরা সারাক্ষণ ভয়ে থাকি, কখন কী ঘটে। তারপরেও চরম চরম ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা করতে হচ্ছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ ঝূঁকিপূর্ণ এসব গাছের বিষয়টি জানা আছে এলাকাবাসীর। তাদের দাবি, প্রশাসনের ব্যর্থতা এবং প্রভাবশালী গাছ মালিকের প্রতিহিংসার কারণে পুরো এলাকা মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে আছে।
স্থানীয়দের অনেকেই গাছ মালিক মানিকের বিরুদ্ধে দখলদারিত্ব, প্রভাব খাটানো ও প্রতিহিংসার অভিযোগ করেছেন। তারা জানান, আশেপাশের আরও অনেকের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধে জড়িয়েছেন তিনি। বর্তমানে আদালতে চলমান অন্তত ৮-১০টি মামলার বাদি-বিবাদী তিনি। এ সময়, স্থানীয়রা দ্রুতই ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলোর অপসারণ এবং স্থানীয় জনগনের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে অভিযুক্ত গাছ মালিক জাকিউল হক মানিক জমি নিয়ে মামলা থাকার অজুহাতে গাছ কাটতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, প্রতিহিংসা নয়, জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলায় গাছ কাটা সম্ভব হচ্ছেনা।
উল্লেখ্য, ঝূ্ঁকিপূর্ণ গাছগুলোর বিষয়টি শুধু সাংবাদিক পলাশের ব্যক্তিগত নয়, এটি জননিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো ভাড়াটিয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক-কর্মচারী এবং সাধারণ জনগণের জন্য প্রাণঘাতী হুমকি হয়ে রয়েছে।
/এএইচএম
Leave a reply