নবাবগঞ্জে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছেন যারা

|

নবাবগঞ্জে নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে যুগান্তরের বিশেষ প্রতিনিধি মুজিব মাসুদ বাদী হয়ে নবাবগঞ্জ থানায় এ মামলা দায়ের করেন।

মামলা গ্রহণ করেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল আহমেদ। এ সময় তিনি জানান, বাদীকে মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে সময় সময় জানানো হবে। এর আগে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।

মামলার এজহারে বাদী মো. মুজিবুর রহমান মাসুদ (বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক যুগান্তর) উল্লেখ করেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পেশাগত দায়িত্ব পালনে ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসনের উপজেলাধীন কলাকোপাস্থ শামীম গেস্ট হাউজে অবস্থান করি।

গত ২৪ ডিসেম্বর (সোমবার) সারাদিন সংবাদ সংগ্রহ করে দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশনের সংবাদকর্মীরা রাতে ওই গেস্ট হাউসে যাই।

রাত অনুমান সাড়ে ১০টায় সংবাদকর্মীরা যখন বিশ্রাম নিচ্ছিলাম ঠিক তখন ২০-২৫ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে হঠাৎ আামদের গেস্ট হাউসে হামলা চালায়।

হামলাকারীদের একটি দল গেস্ট হাউসের নীচে থাকা আমাদের ব্যবহৃত ১৭-১৮টি গাড়ি ভাংচুর করে। অপর একটি দল গেস্ট হাউসের দোতলা ও তিন তলায় ওঠে বিভিন্ন কক্ষ ও ডাইনিংয়ে থাকা একটি টেলিভিশন ভাঙে।

এসময় হামলার শিকার হন যমুনা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি সুশান্ত সিনহা, রিপোর্টার অলক, যুগান্তর প্রতিনিধি শামীম খান, গেস্ট হাউসের ম্যানেজার জুয়েলসহ অন্তত ১০ জন।

হামলাকারীরা গেস্ট হাউসের উপস্থিত সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ও প্রাণ নাশের হুমকি দেয়।

প্রায় আধা ঘন্টাব্যাপী তান্ডব চালিয়ে হামলাকারীরা নৌকা প্রতীকের পক্ষে শ্লোগান দিতে দিতে বের হয়ে যায়।

বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ওই ন্যাক্কারজনক হামলায় অংশগ্রহণকারী আসামীদের মধ্যে রয়েছেন – ১) দোহার উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মো: আলমগীর হোসেন (৫০), থানা – দোহার, জেলা -ঢাকা ২) নবাবগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম (৪৫), থানা – নবাবগঞ্জ, জেলা -ঢাকা ৩) সেচ্ছাসেবক লীগের নেতা মো: পলাশ (৩৮), থানা – নবাবগঞ্জ, জেলা -ঢাকা ৪) মুরাদ শিকদার, থানা – নবাবগঞ্জ, জেলা -ঢাকা ৫) খৈমুন্দিন , থানা – নবাবগঞ্জ, জেলা -ঢাকা ৬) মুরাদ হোসেন, থানা – নবাবগঞ্জ, জেলা -ঢাকা ৭) অনুপ দত্ত নিপু, থানা – নবাবগঞ্জ, জেলা -ঢাকা ৮) মুখলেছুর রহমান, থানা – নবাবগঞ্জ, জেলা -ঢাকা ৯) শহিদুল ইসলাম সেন্টু, থানা – নবাবগঞ্জ, জেলা -ঢাকা ১০) সিয়াম, থানা – নবাবগঞ্জ, জেলা -ঢাকা ১১) মো: শহিদুল, থানা – নবাবগঞ্জ, জেলা -ঢাকা ১২) ওয়াশিম ওরফে আজিজ মন্ডল, থানা – নবাবগঞ্জ, জেলা -ঢাকা ১৩) মুজিবুর দেওয়ান, থানা – নবাবগঞ্জ, জেলা -ঢাকা ১৪) আবদুল জলিল ব্যাপারিসহ (চুড়াইন ইউপি চেয়ারম্যান), থানা – নবাবগঞ্জ, জেলা -ঢাকা অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জন অবৈধভাবে অনাধিকার প্রবেশ করে হত্যা ও জখমের উদ্দেশে ১ নং আসামীর হুকুমে অন্যান্য আসামীগণ অতর্কিতভাবে তাদের হাতে থাকা রিভলভার, ডেগার, রাম দা, চাপাতি, হকিস্টিক, লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রসহ গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর হামলা করে।

এসময় তারা সংবাদকর্মীদের কাছে থাকা তথ্য সামগ্রীসহ পেনড্রাইভ, ক্যামেরা, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, বিভ্ন্নি জনের পকেটে থাকা অনির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র অসৎ উদ্দেশে ছিনিয়ে নেয়।

১ নং আসামীর হুকুম অনুযায়ী অন্যান্য আসামী গং ১৬-১৭টি গাড়ি ভাংচুর করে। ক্ষতির পরিমাণ অনুমান সাত (৭) কোটি টাকা।

এছাড়া শামীম গেস্ট হাউসের আসবাবপত্র ভাংচুর করে অনুমান ২০ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন করেছেন হামলাকারীরা।

সোমবার রাতে ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসনে নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া যমুনা টেলিভিশন-যুগান্তরসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীদের অবস্থানরত হোটেলে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এসময় সংবাদকর্মীদের বহনকারী যানবাহনে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। প্রায় ঘণ্টাখানেক অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিলো গণমাধ্যমকর্মীদের।

এ ঘটনায় সারাদেশে নিন্দার ঝড় উঠে। হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply