গণধর্ষণের শিকার সেই নারীকে দেখতে যাচ্ছেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা

|

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ঘরে ঢুকে স্বামী-সন্তানদের বেঁধে পিটিয়ে আহত করে তাদের সামনে গণধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধূকে দেখতে যাচ্ছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। শনিবার সকাল ৭টায় গুলশান থেকে দলটির নেতারা নোয়াখালীর উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন বলে নিশ্চিত করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান।

তিনি জানান, মির্জা ফখরুলসহ বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা নোয়াখালীতে যাচ্ছেন। সেখানে চিকিৎসাধীন নির্যাতনের শিকার ওই নারীকে দেখে স্থানীয় বিএনপি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন নেতারা। মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আ স ম আবদুর রব ও মাহমুদুর রহমান মান্না যাবেন।

এর আগে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতা ড. কামাল হোসেন একটি বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে তিনি ধর্ষণের ঘটনাকে ‘মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বরোচিত লোমহর্ষক’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন।

কামাল হোসেন বলেন, এই ঘটনা জাতি হিসেবে আমাদেরকে অত্যন্ত হেয় প্রতিপন্ন করেছে। কোনও গণতান্ত্রিক দেশে এমন ঘটনা কল্পনাও করা কঠিন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে ওই নারী নিজের পছন্দের প্রতীকে ভোট দিতে চাইলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তাকে নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে বলে। ওই নারী তাদের কথায় সায় না দিয়ে নিজের পছন্দের প্রতীকে ভোট দেন। এরপর সন্ত্রাসীরা পারুলকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়।

ড. কামালের অভিযোগ, পুলিশ বাদীর কথিত মতে হুকুমের আসামিসহ অনেকের নাম বাদ দেওয়াতে আমি ক্ষোভ প্রকাশ করছি। অনতিবিলম্বে তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি করছি। এই ঘটনা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার, মৌলিক মানবাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে হুমকির সম্মুক্ষীণ করেছে এবং এতে আমরা ভীষণ ভাবে ক্ষুব্ধ, উদ্বিগ্ন ও মর্মাহত।

কামাল হোসেন বলেন, এমন ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য দেশের মর্মাহত জনগণকেই উদ্যোগী হতে হবে। এই লজ্জা ওই নারীর নয় বরং এ লজ্জা সমগ্র জাতির। এ নির্যাতিত আমাদের গণতন্ত্র ও মৌলিক মানবাধিকারের।

প্রসঙ্গত, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ধানের শীষে ভোট দেয়ার জের ধরে রাত ১১টার দিকে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবলি ইউনিয়নের মধ্যম বাগ্যা গ্রামে সিএনজিচালকের স্ত্রী (৪০) গণধর্ষণের শিকার হন। এ সময় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা গৃহবধূর স্বামী, ছেলেমেয়েকে পিটিয়ে আহত করে। ঘটনার পরপরই গোপনে গৃহবধূ ও আহতদের নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে গৃহবধূর দাবি, নৌকার সমর্থকদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার জেরে তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা এ ঘটনার সঙ্গে দলীয় সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় গৃহবধূর স্বামী অভিযোগ করলে সোমবার লক্ষ্মীপুর থেকে আবদুল মন্নানের ছেলে ও আওয়ামী লীগ কর্মী স্বপন (৩০) এবং মঙ্গলবার রাতে চরজুবলি ইউনিয়নের মধ্যম বাগ্যা গ্রামের আহাম্মদ উল্লাহর ছেলে বাদশা আলমকে (৩৫) গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর বুধবার দুপুরে একই গ্রামের ইসমাইলের ছেলে আওয়ামী লীগ কর্মী মো. সোহেলকে (৩৫) কুমিল্লা জেলার অজ্ঞাত স্থান থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এদিকে এ ঘটনা তদন্তে নোয়াখালীতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের দুটি তদন্ত দল বুধবার তদন্ত শুরু করেছে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply