সংসদ উপনেতা ডেপুটি স্পিকার ও হুইপ পদে আলোচনায় যারা

|

একাদশ সংসদের যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। ৩০ ডিসেম্বর নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর আওয়ামী লীগ টানা তিনবারের মতো সরকার গঠন করেছে। আগামী ৩০ জানুয়ারি নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশন।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন হ্যাটট্রিক মন্ত্রিসভা এবারে চমকে ঠাসা। ৪৭ সদস্যের মন্ত্রিসভার বেশিরভাগই নতুন। সংসদের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো নির্ধারণেও চমক থাকবে এমন আভাস পাওয়া গেছে।

স্পিকার পদটিতে যিনি আছেন তিনিই থাকছেন, এটি মোটামুটি নিশ্চিত। সংসদের গুরুত্বপূর্ণ উপনেতা, ডেপুটি স্পিকার, চিপ হুইপ ও হুইপ এ পদগুলো পূরণে শেখ হাসিনা চমক দেখাবেন এমন আলোচনা চলছে রাজনীতির ভেতর-বাইরে। পাশাপাশি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদগুলোতেও তারুণ্যের অগ্রাধিকার থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

৭ জানুয়ারি গঠিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নতুন মন্ত্রিসভা ছিল চমকে ভরা। দলের প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বাদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দিয়েছেন অপেক্ষাকৃত নবীন ও নতুন নেতাদের। যারা মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন তাদের অনেকেই কল্পনা করেননি এমন চমক তাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

এখন ডেপুটি স্পিকার, সংসদ উপনেতা, চিফ হুইপ, হুইপ পদে কারা আসছেন, এ নিয়ে ভাবনার শেষ নেই আওয়ামী লীগে। এমনকি সংসদীয় কমিটিগুলোর সভাপতি পদে কারা থাকছেন- এ ভাবনাও আছে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে।

সংসদ উপনেতা

জাতীয় সংসদের উপনেতা পদটি বেশ আকর্ষণীয়। সংসদ নেতার পরই এ পদটি গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদার। আওয়ামী লীগ সংসদে থাকলে বরাবরই এ পদটিতে সভাপতিমণ্ডলীর বয়োজেষ্ঠ ও সর্বজন গ্রহণযোগ্য কাউকে বসানো হয়ে আসছে। এ রীতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থেকে শুরু করে শেখ হাসিনার সরকারে রেওয়াজ হয়ে আসছে।

গত দুটি সংসদে উপনেতা ছিলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর জ্যেষ্ঠ সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে দশম জাতীয় সংসদের উপনেতা আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এ পদে আর থাকছেন না। এ পদে আসছেন নতুন মুখ। দলের তিন প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ ও মতিয়া চৌধুরীর যে কাউকে সংসদ উপনেতা করা হতে পারে।

ডেপুটি স্পিকার

ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া দশম জাতীয় সংসদে সফল ছিলেন। তবু এ পদে আসছেন নতুন কেউ- এমনটিই শোনা যাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডেপুটি স্পিকার হিসেবে অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার জায়গায় সাবেক আইনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু আসতে পারেন।

চিফ হুইপ

নবম সংসদ নির্বাচনে চিফ হুইপ ছিলেন উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ। দশম সংসদে চিফ হুইপ ছিলেন আ স ম ফিরোজ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এবার পরিবর্তন আসছে সরকারদলীয় চিফ হুইপ পদেও। নতুন সংসদে সরকারদলীয় চিফ হুইপ হতে পারেন মাদারীপুর-১-এর এমপি নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন।

এ পদে আলোচনায় আছেন চট্টগ্রাম-৬-এর এমপি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, জয়পুরহাট-২-এর এমপি ও আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, শেরপুর-১ আসনের এমপি আতিউর রহমান আতিক, গাজীপুর-৪ আসনের সিমিন হোসেন রিমি, নওগাঁ-২ আসনের এমপি শহীদুজ্জামান সরকার।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান যুগান্তরকে বলেন, ‘সংসদীয় দলের সভায় আ’লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে সংসদ নেতা নির্বাচিত করা হয়েছে। সংসদীয় দলের সভায় সংসদ নেতাই উপনেতা, চিফ হুইপ ও হুইপ নির্বাচিত করবেন।’

সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তার ২০০৮ সালের মন্ত্রিসভাতেও নতুনদের জায়গা দিয়ে চমক দেখিয়েছিলেন। ওই সময় দলের সিনিয়র ও প্রভাবশালী নেতাদের সংসদীয় কমিটির সভাপতি পদ পেয়েই খুশি থাকতে হয়। এমনকি আ’লীগের শরিক দুদলের শীর্ষ নেতাদের মন্ত্রিসভায় জায়গা না দিয়ে সংসদীয় কমিটির সভাপতি পদে বসিয়েছিলেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারও মন্ত্রিসভায় জায়গা না পাওয়া আওয়ামী লীগ এবং ১৪-দলীয় জোটের প্রভাবশালী নেতারা ‘শেষ ভরসা’ হিসেবে সংসদীয় কমিটির সভাপতি পদটিকেই মনে করছেন। অনেকে দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে দেনদরবারও শুরু করেছেন। জানা গেছে, সদ্যবিদায়ী দশম সংসদে মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালনকারীদের প্রাধান্য দেয়া হতে পারে সংসদীয় কমিটিতে।

সরকারের কাজে গতি বাড়াতে এসব মন্ত্রী যেসব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন, তাদের সেসব মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি করার সম্ভাবনাই বেশি। মন্ত্রিসভার বাইরে থাকা শরিক দলের সদস্যরাও এক বা একাধিক সংসদীয় কমিটির সভাপতি পদ পেতে পারেন। বিরোধী দল জাতীয় পার্টি থেকেও একাধিক সদস্য সভাপতি থাকতে পারেন। সংসদের প্রথম অধিবেশনেই বেশিরভাগ সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠন করা হবে।

জানতে চাইলে দশম সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ যুগান্তরকে বলেন, সংসদের কয়েকটি কমিটির সভাপতি নির্ধারিত থাকেন। পদাধিকার বলে স্পিকার সভাপতি থাকেন সেগুলোতে। আর মন্ত্রণালয় সম্পর্কিতসহ অন্যান্য সংসদীয় কমিটির সভাপতি সংসদ নেতা ঠিক করেন। এ ক্ষেত্রে কে বা কারা হবেন, তা সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই ঠিক করবেন।

৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, ১৪ দল এবং জাতীয় পার্টি জোটগতভাবে ২৮৮ আসন পায়। আওয়ামী লীগ একাই জয়ী হয় ২৫৯ আসনে। ২২ আসন পেয়ে প্রধান বিরোধী দল এখন জাতীয় পার্টি। ৩ জানুয়ারি শপথ নেন তারা।

ওই দিনই আ’লীগের সংসদীয় দলের সভায় শেখ হাসিনাকে সর্বসম্মতিক্রমে সংসদ নেতা নির্বাচিত করা হয়। ৭ জানুয়ারি নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রভাবশালী নেতারা মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েন।

(সূত্র: দৈনিক যুগান্তর)


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply