রোহিঙ্গাদের ভাসানচর নিতে সরকারের নির্দেশ মানছে না এনজিও’রা

|

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে হস্তান্তরের পক্রিয়ায় বাধা প্রদান করছে আন্তর্জাতিক এনজিও সংস্থাগুলো। জাতিসংঘের রোহিঙ্গা বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর তাদের সহযোগী এনজিওদের ভাসানচর ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের কোন ধরনের সহায়তা না করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।

এদিকে ইউএনএইচসিআরের নির্দেশনা না পেলে ভাসানচর ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের কোন নির্দেশনা পালন করতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে এনজিওগুলো।

টেকনাফের চাকমারকুল ক্যাম্পের ইনচার্জ মাহাবুবুর রহমান গত ৬ই মার্চ ঐ ক্যাম্পের এনজিওদের মাসিক সমন্বয় সভায় ভাসানচর ইস্যুতে সরকারের নির্দেশনার কথা জানান। নির্দেশনা অনুযায়ী ভাসানচরে সেচ্ছায় যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের তালিকা করতে ঐ ক্যাম্পে কর্মরত এনজিওদের নির্দেশ দেন ক্যাম্প ইনচার্জ মাহাবুব।

রোহিঙ্গাদের তথ্য সংগ্রহের জন্য সরকারের একটি নির্ধারিত ফরম প্রতিটি এনজিওকে দেয়ার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয় ঐ ক্যাম্পের সাইট ম্যানেজমেন্ট দায়িত্বে থাকা এড্রা এনজিওকে। ক্যাম্প ইনচার্জের পক্ষে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ৭ই মার্চ সরকারি নির্দেশনা ও ফরম ঐ ক্যাম্পের সকল এনজিওকে ইমেইল করে এড্রার ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট অফিসার সৈকত সরকার।

ভাসানচর ইস্যুতে সরকারের নির্দেশনা সম্বিলিত এড্রা কর্মকর্তা সৈকত সরকারের ইমেইল পেয়ে তাকে সাথে সাথে ৭ই মার্চ বরখাস্ত করার নির্দেশ দেয় ইউএনএইচসিআর।

দাতা সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর নির্দেশে সৈকত সরকার ও এড্রার চাকমারকুল ক্যাম্পের টিম লিডার রফিকুল ইসলামকেও ৮ই মার্চ চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

দুই কর্মকর্তকে বহিষ্কারের পর সকল এনজিওকে ফিরতি ৮ই মার্চ মেইল দেয় এড্রা এনজিওর কক্সবাজার প্রধান মোহাম্মদ উসমান। তিনি ঐ মেইলে এড্রার পক্ষে সাফ জানিয়েছেন, ভাসানচর ইস্যুতে ইউএনএইচসিআর কোন নির্দেশনা দেয়নি। তাই ইউএনএইচসিআর এর নির্দেশনা ছাড়া ভাসানচর ইস্যুতে তারা বাংলাদেশ সরকারকে কোন ধরনের সহযোগিতা করতে পারবেনা।

এড্রা এনজিওর বরখাস্ত হওয়া তথ্য কর্মকর্তা সৈকত সরকার জানিয়েছেন, ক্যাম্প ইনচার্জের নির্দেশ মানেই সরকারের নির্দেশ। ক্যাম্প ইনচার্জের আদেশেই তার পক্ষে ভাসানচর ইস্যুতে এনজিওদের সরকারি নির্দেশনা ও তথ্য সংগ্রহের ফরম পাঠিয়েছিলেন। সরকারি নির্দেশ মানার কারণে দাতা সংস্থা ইউএনএইচসিআরের নির্দেশে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

এড্রা এনজিওর চাকমারকুল ক্যাম্পের টিম লিডার রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ক্যাম্প ইনচার্জ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরকারের প্রতিনিধিত্ব করে। তিনি যেই নির্দেশনা দেন সেটি সরকারের নির্দেশনা। সরকারের নির্দেশনা পালন করতে যেয়ে দায়িত্ব অবহেলা ও শর্তভঙ্গের অযুহাতে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

এদিকে, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে হস্তান্তরে ব্যাপারে সেচ্ছায় যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের এনজিওরা নানান ধরনের ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভাসানচরে না যেতে রোহিঙ্গাদের মাঝে নানা ধরনের অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে বলে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যে জানা গেছে।

টেকনাফের চাকমারকুল ক্যাম্পের ক্যাম্প ইনচার্জ মাহাবুবুর রহমান জানিয়েছেন, বর্ষার আগে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে হস্তান্তর করতে সরকার কাজ শুরু করেছে। সেই লক্ষে তার ক্যাম্পে সেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের তালিকা প্রণয়নের নির্দেশনা দেয়া হয়। সরকারি নির্দেশনা ও নির্ধারিত তথ্য সংগ্রহ ফরম এনজিওদের মেইল করার জন্য সাইট ম্যানেজমেন্টে থাকা এড্রা এনজিওকে নির্দেশ দেয়া হয়।

সরকারের নির্দেশনা পালন করা দুই এনজিও কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে এনজিওটি সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। এতে করে সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ব্যাঘাত ঘটছে। আর যেই ভাষায় এনজিওটি সরকারি নির্দেশনা পালনে অপারগতা পালন করেছে সেটি রীতিমতো সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে।

সিআইসি মাহাবুব আরও জানান, ভাসানচর ইস্যুতে সরকারের নির্দেশ অমান্য করার বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায়ে অবহিত করা হয়েছে। দ্রুত এই ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেছেন, বর্ষা মৌসুমের আগেই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করতে চায় সরকার। তবে এ ব্যাপারে সরকারের প্রস্তুতি থাকলেও বিভিন্ন এনজিও সংস্থা রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে না যাওয়ার ব্যাপারে অনুৎসাহিত করছে। রবিবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এই মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply