চার্চিলের কারণেই ৪৩’র দুর্ভিক্ষে মরতে হয়েছে ৩০ লাখ বাঙালীকে

|

১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে ৩০ লাখেরও বেশি বাঙালী মারা যাওয়ার প্রধান কারণ তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রপরিচালনা নীতি। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকদের যৌথ এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।

সম্প্রতি এই গবেষণাটি জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার নামের একটি সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। এতদিন ধরে ব্রিটিশ সরকার ও ইতিহাসবিদরা তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষের কারণ হিসেবে খরাকে দায়ী করে আসছেন।

নতুন গবেষণায় বলা হয়, বাঙলায় ঘটে যাওয়া ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ খরার কারণে হয়নি। ভারতের অন্যান্য দুর্ভিক্ষের চেয়ে ১৯৪৩ এর দুর্ভিক্ষ ছিল ব্যতিক্রম। ওই দুর্ভিক্ষের আগে খরা বা অন্যান্য প্রাকৃতি দুর্যোগ ছিলো না। বরং ভারত শাসনে ব্রিটিশ সরকারের বাজে নীতির কারণেই সে সময় শস্যের অভাব চরম আকার ধারণ করেছিল।

ভারতবর্ষে ঘটে যাওয়া ছয়টি দুর্ভিক্ষের সময় মাটির আর্দ্রতা পরিমাপ করে এই গবেষণার সিদ্ধান্ত ও ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। গবেষণা দলটির প্রধান গবেষক বিমল মিশ্র জানান, সে সময় দুর্ভিক্ষের ব্যাপকতা ছিল অনেক বেশি। এর জন্য বৃষ্টিপাত কম হওয়া যতটা দায়ী, তার চেয়ে অনেক বেশি দায়ী সরকারী নীতির ব্যর্থতা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিয়ানমারে (বার্মা) ব্রিটিশদের খাদ্য ও উপকরণ সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছিল। ফলে যুদ্ধের খরচ সংগ্রহ করতে ভারত বর্ষকেই বেছে নিয়েছিল ব্রিটিশ সরকার। অধিকাংশ খাবার নিয়ে যাওয়া হয় ব্রিটেনে। যার কারণে বাংলার মানুষকে মরতে হয়েছে না খেয়ে।

অর্থনীতিবিদ রিচার্ড টয়ি বলেন, ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ চার্চিলের কর্মজীবনের সবচেয়ে বাজে অধ্যায়। বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির বিরুদ্ধে ব্রিটিশদের লড়াই নিয়েই মনোযোগী ছিলেন তিনি। যে কারণে বাংলায় ঘটে যাওয়া ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এই মন্বন্তর নিয়ে কোনরকম চিন্তা ছিল না তার।

নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনও তার এক গবেষণায় জানিয়েছেন, ১৯৪৩ সালে দুর্ভিক্ষের সময়টা পর্যাপ্ত খাদ্যের সরবরাহ থাকা উচিত ছিল। সম্প্রতি এক বইয়ে লেখিকা মধুশ্রী মুখার্জি বলেন, ১৯৪৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত ভারত থেকে ৭০ হাজার টন খাদ্য রফতানি করা হয়। এটাও ছিল দুর্ভিক্ষের কারণ।

সিএনএন, দ্য গার্ডিয়ান।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply