নুসরাত হত্যায় ব্যবহৃত বোরকা উদ্ধার

|

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির শরীরে অগ্নিসংযোগকারী জোবায়ের আহম্মদ ওরফে সাইফুর রহমান জোবায়ের

ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় ব্যবহৃত বোরকা উদ্ধার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

এর আগে দিয়াশলাই দিয়ে অগ্নিসংযোগকারী মামলার এজাহারভুক্ত ৫নং আসামি জোবায়ের আহম্মদ ওরফে সাইফুর রহমান জোবায়েরকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যায় পিবিআই। পরে তার দেয়া তথ্যে খাল থেকে ঘটনায় ব্যবহৃত একটি বোরকা উদ্ধার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পিবিআইয়ের একটি দল রিমান্ডে থাকা জোবায়েরকে নিয়ে ঘটনাস্থলে আসে। তার দেয়া তথ্যমতে সোনাগাজী সরকারি কলেজের দক্ষিণ পাশে প্রবাহমান সোনাগাজী ডাঙ্গি খালে তল্লাশি চালায়। খালের পানিতে ডুবন্ত অস্থায় কালো রঙের বোরকাটি উদ্ধার করা হয়।

নুসরাত হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. শাহ আলম বলেন, নুসরাত হত্যার ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার জোবায়েরকে বুধবার পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার সকালে পিবিআইয়ের একটি দল তাকে নিয়ে সোনাগাজী পৌর শহরের সোনাগাজী কলেজ রোডের দক্ষিণ পাশে খালের পানিতে তল্লাশি চালিয়ে বোরকাটি উদ্ধার ও উপস্থিত সাক্ষীদের সাক্ষ্যমতে বোরকাটি জব্দ করা হয়।

তিনি জানান, জোবায়েরসহ তিনজন পুরুষ ছাত্র বোরকাপরা অবস্থায় ছিল। বাকি দুজন ছিল ছাত্রী। তাদের একজন উম্মে সুলতানা পপি ও অন্যজন কামরুন নাহার মণি।

পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. শাহ আলম বলেন, শাহাদাত হোসেন শামীম ও উম্মে সুলতানা পপির দেয়া জবানবন্দি মোতাবেক জোবায়ের নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

জোবায়ের ওই মাদ্রাসার ফাজিল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র এবং তুলাতলী গ্রামের হাসাপাতালের সামনে ওষুধ ব্যবসায়ী আবুল বশরের ছেলে।

এদিকে রাফি হত্যার ঘটনায় পিবিআইয়ের একাধিক টিম অভিযান অব্যাহত রাখায় আটক বা গ্রেফতারের সংখ্যা নিয়ে কিছুটা বিতর্ক রয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত ২৫ জন জড়িত থাকার খবর পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে আটক করা হয়েছে কমপক্ষে ২০ জনকে। তবে পিবিআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তাদের মধ্যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন ৫ জন। যারা স্বীকার করেছেন তারা হলেন সোনাগাজী মাদ্রাসা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শামীম, ছাত্রদল কর্মী নূর উদ্দিন, শিবির কর্মী হাফেজ আবদুল কাদের, ছাত্রলীগ কর্মী আবদুর রহিম শরীফ, অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার ভাগনি উম্মে সুলতানা পপি।

গত ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। মাদ্রাসার এক ছাত্রী সহপাঠী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে, এমন সংবাদ দিলে তিনি ওই ভবনের তিনতলায় যান। সেখানে মুখোশধারী বোরকা পরিহিত ৪-৫ জন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। তিনি অস্বীকৃতি জানালে গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

পাঁচ দিন পর ১০ এপ্রিল বুধবার রাত ৯টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান নুসরাত জাহান রাফি। পরদিন সকালে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের বুঝিয়ে দিলে বিকালে সোনাগাজী পৌরসভার উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply