অভিনব প্রতারণার ফাঁদ, ৩ আফ্রিকান গ্রেফতার

|

প্রতারণার দায়ে আন্তর্জাতিক প্রতারণা চক্রের তিন বিদেশিকে আটক করেছে র‍্যাব। একই সাথে তাদের কাছ থেকে ৬৩ লক্ষ টাকার সমপরিমাণ ইউরো ও মাদক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়। একজন ব্যাংক কর্মকর্তার সাথে প্রতারণার সূত্র ধরে তাদের গ্রেফতার করা হয়। মূলত এই প্রতারক চক্রের সাথে যোগাযোগের বিষয়ে জানতেই মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুল আলম বীরপ্রতীককে বৃহস্পতিবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে জানিয়েছে র‍্যাব।

কখনো ব্যবসায়ী, কখনো বিদেশি বিনিয়োগকারী হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করে দেশিয় ব্যবসায়ীদেরকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল এই বিদেশিরা। আজ শুক্রবার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়।

র‌্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান জানান, জার্মানি থেকে ১১ মিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে এ প্রতারণার ফাঁদ পাতা হয়েছিল।

র‌্যাব মুখপাত্র বলেন, ‘বিদেশি বিশেষ করে আফ্রিকান প্রতারকরা বিভিন্ন পদ্ধতিতে প্রতারণা করে। এবার নতুন কৌশল অবলম্বন করে একজন ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের কাছ থেকে আড়াই লাখ ইউরো হাতিয়ে নিয়েছে। বড় বিনিয়োগের কথা বলে প্রথমে সম্পর্ক স্থাপন ও পরবর্তীতে ছোট ছোট লেনদেন করে একসময় বড় টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয় তারা।’

তিনি আরও জানান, ফার্মার্স ব্যাংক গুলশান শাখার ব্রাঞ্চ ম্যানেজার জিয়ার কাছে প্রথমে জার্মানি থেকে রোজার্স নামে একজন ফোন দিয়ে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে। সে জানায় বাংলাদেশে ১১ মিলিয়ন ইউরো ইনভেস্ট করতে চায়। তখন তার সঙ্গে আলোচনায় রাজি হন ওই ব্যাংক কর্মকর্তা। কিছুদিন পর রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে রোজার্সের রেফারেন্সে গুস্তাভো ফ্রাংকি স্টিভ নামে একজন ব্যাংক কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করেন জিয়া। সেখানে কিভাবে ইনভেস্ট করা যায় সেটা নিয়ে আলোচনা করা হয়।

এরপর বিভিন্ন স্থানে একাধিকবার ব্যাংক কর্মকর্তা ও গুস্তাভো ফ্রাংকি স্টিভ দেখা করে ব্যবসা ও ইনভেস্টের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এর মধ্যে একদিন সিঙ্গাপুর যাওয়ার নাম করে স্টিভ ব্যাংক কর্মকর্তার কাছ থেকে চার হাজার ডলার ধার নেয় এবং কিছুদিনের মধ্যে তা পরিশোধ করে। বিশ্বস্ততা তৈরির পর ইউরোপে একটি কাজে স্টিভের আড়াই লাখ ইউরো লাগবে বলে ব্যাংক কর্মকর্তাকে জানানো হয়। বাংলাদেশে একজনের কাছে স্টিভের ডলার আছে। সেই ডলার এক্সচেঞ্জ করে ইউরো করতে হবে। আর সেটার পরিমাণ আড়াই লাখ ইউরো। এজন্য তিনি ব্যাংক কর্মকর্তার কাছে সাহায্য চান। ভবিষ্যতে ১১ মিলিয়ন ইউরোর ইনভেস্ট, নতুন সম্পর্ক ও অতিরিক্ত মুনাফা পাওয়ার লোভে সাহায্য করতে রাজি হন ব্যাংক কর্মকর্তা।

উদ্ধারকৃত দেশি-বিদেশি মুদ্রা

এরই মধ্যে গত ৩১ আগস্ট ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ইউরো ম্যানেজ করে ব্যাংকে অপেক্ষা করেন। কিন্তু গুস্তাভো ফ্রাংকি স্টিভ সেদিন আর ব্যাংকে না এসে রাতে ম্যানেজারের ইউরো বাসায় নিয়ে যেতে বলেন। কথামতো ব্যাংক কর্মকর্তা আড়াই লাখ ইউরো নিয়ে বাসায় যান। রাতে স্টিভ, আটক কুয়েতি ফস্তোসহ ম্যানেজারের বাসায় যায়। রাতে খাবার খাওয়ার পর কুয়েতি ফস্তো ইচ্ছে করে একটি বোতল ভেঙে ফেলে এবং বোতল থাকা তরল পদার্থ কিছুটা ব্যাংক কর্মকর্তার গায়ে ফেলেন। তখন ইউরোর ব্যাগ আফ্রিকানদের সামনে রেখে ব্যাংক কর্মকর্তা পরিস্কার হতে ভিতরে চলে যান।

ফিরে আসার পর আফ্রিকানরা জানায়, তারা ডলার আনতে পারেনি, আগামীকাল লেনদেন করবে। এই বলে তারা বেরিয়ে যায়। তখন তাদের রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দেন ব্যাংক কর্মকর্তা। পরদিন সকালে স্টিভকে ফোন করেন ব্যাংক কর্মকর্তা।

ফোনের ওপাশ থেকে স্টিভ জানান, সে ঝামেলায় আছে, পুলিশ তাকে ফলো করছে, পরে কথা বলবে বলে ফোন বন্ধ করে দেয়। তখন ব্যাংক কর্মকর্তার সন্দেহ হয়। বাসায় থাকা ইউরোর ব্যাগ খুলে দেখেন আড়াই লাখ ইউরো সমপরিমাণ বান্ডেল আছে কিন্তু সেখানে ইউরো নেই, আছে সাদা কাগজ। রাতে তিনি পরিস্কার হওয়ার ফাঁকে আফ্রিকানরা আড়াই লাখ ইউরোর বান্ডেল হাতিয়ে নিয়ে সাদা কাগজের বান্ডেল ফেলে যায়। প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি টের পেয়ে র‌্যাবকে বিষয়টি জানানো হয়। পরে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে উত্তরা থেকে তিন প্রতারককে আটক করে। র‌্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘আমরা তিনজনকে আটক করেছি। এর সঙ্গে আরও যারা জড়িত রয়েছে তাদের আটকের চেষ্টা চলছে।’


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply