রোজা রেখে রক্ত দেয়া-নেয়া যাবে কি?

|

পেস্ট, টুথ পাউডার ব্যবহার করা

রোজা অবস্থায় দিনের বেলায় টুথ পাউডার, পেস্ট, মাজন ইত্যাদি ব্যবহার করা মাকরূহ। কিন্তু গলায় পৌঁছালে রোজা ভেঙে যাবে। (জাদিদ ফিকহি মাসায়েল)

মুখে ওষুধ ব্যবহার করা

মুখে ওষুধ ব্যবহার করে তা গিলে ফেললে বা ওষুধের অংশ বিশেষ গলায় প্রবেশ করলে রোজা ভেঙে যাবে। গলায় প্রবেশ না করলে রোজা ভাঙবে না। (ফতওয়া শামি)

রোজা রেখে রক্ত দেয়া-নেয়া

শরীরে রক্ত নিলে বা নিজ শরীর থেকে কাউকে রক্তদান করলে কোনো অবস্থাতেই রোজা নষ্ট হবে না। কারণ রক্ত দেয়ার কারণে কোনো বস্তু দেহের ভেতরে ঢুকেনি, তাই তাতে রোজা নষ্ট হওয়ার প্রশ্নই আসে না। আর রক্ত নিলে যেহেতু এ রক্ত শরীরের উল্লেখযোগ্য চার নালি থেকে কোনো নালি দিয়ে প্রবেশ করে না, বরং শরীরের অন্যান্য ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে প্রবেশ করে। সুতরাং রোজাবস্থায় কারও শরীরে রক্ত দান করলে বা নিজে রক্ত গ্রহণ করলে রোজা নষ্ট হবে না। তবে খুব বেশি পরিমাণে রক্ত দেয়া যার দ্বারা শরীরে দুর্বলতা আসে, তা মাকরূহ।

(আল-কাসানি, খ. ২, পৃ. ৯২; ইবনে আবিদিন, খ. ৩, পৃ. ৪০০; আল-ফাতওয়া আল-হিন্দিয়া, খ. ১, পৃ. ২০০)

ইনজেকশন নেয়া

ইনজেকশন নিলে রোজা নষ্ট হবে না। চাই তা মাংসে নেয়া হোক বা রগে। কারণ ইনজেকশনের সাহায্যে দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশকৃত ওষুধ মাংস বা রগের মাধ্যমেই প্রবেশ করানো হয়ে থাকে, যা অস্বাভাবিক প্রবেশপথ, তাই এটি রোজা ভঙ্গের গ্রহণযোগ্য কারণ নয়।

(ইবনে আবিদিন, খ. ২, পৃ. ৩৯৫; (খ) ইবনু নুজাইম, খ. ২, পৃ. ২৭৮; (গ) আপকে মাসায়েল আওর উনকা হলো, খ. ৩, পৃ. ২১৪)

ডায়াবেটিস পরীক্ষা

ডায়াবেটিসের ‍সুগার মাপার জন্য সুচ ঢুকিয়ে যে একফোঁটা রক্ত নেয়া হয়, এতে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না।

নাকে ওষুধ দেয়া

নাকে পানি বা ওষুধ দিলে যদি তা খাদ্যনালিতে চলে যায়, তা হলে রোজা ভেঙে যাবে এবং কাজা করতে হবে।

চোখে ওষুধ বা সুরমা ব্যবহার

চোখে ড্রপ, ওষুধ, সুরমা বা মলম ইত্যাদি ব্যবহার করলে রোজা নষ্ট হবে না। যদিও এগুলোর স্বাদ গলায় উপলদ্ধি হয়। কারণ চোখে ওষুধ ইত্যাদি দিলে রোজা না ভাঙার বিষয়টি হাদিস ও ফিকাহ শাস্ত্রের মূলনীতি দ্বারা প্রমাণিত।

(জাদিদ ফিকহি মাসায়েল, খ. ১, পৃ. ১৮৩; (খ) আলিম ইবনুল আলা, আল-ফাতাওয়া আত-তাতারখানিয়া, খ. ২, পৃ. ৩৬৬)

কানে ওষুধ প্রদান করা

কানে ওষুধ, তেল ইত্যাদি ঢুকালে রোজা ভেঙে যাবে। তবে গোসল করার সময় অনিচ্ছায় যে পানি কানে ঢুকে তাতে রোজা ভঙ্গ হবে না। অবশ্য এ ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে, যেন পানি গলায় না চলে যায়। (মাকালাতুল ফিকহিয়া)

নকল দাঁত মুখে রাখা

রোজা রেখে নকল দাঁত মুখে স্থাপন করে রাখলে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। (ইমদাদুল ফতওয়া)

স্যালাইন

স্যালাইন নেয়া হয় রগে, আর রগ যেহেতু রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তা নয়, তাই স্যালাইন নিলে রোজা ভাঙবে না। তবে রোজার কষ্ট লাঘবের জন্য স্যালাইন নেয়া মাকরূহ। (ফতওয়ায়ে দারাল উলুম)

ইনসুলিন গ্রহণ করা

ইনসুলিন নিলে রোজা ভাঙবে না। কারণ ইনসুলিন রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করে না এবং গ্রহণযোগ্য খালি জায়গায় প্রবেশ করে না।

(ইবনে আবিদিন, খ. ৩, পৃ. ৩৬৭; (খ) ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান, পৃ. ৩২৭)

দাঁত তোলা

রোজা অবস্থায় একান্ত প্রয়োজন হলে দাঁত তোলা জায়েজ আছে। তবে অতিপ্রয়োজন না হলে এমনটি করা মাকরূহ। ওষুধ যদি গলায় চলে যায় অথবা থুতু থেকে বেশি অথবা সমপরিমাণ রক্ত যদি গলায় যায় তা হলে রোজা ভেঙে যাবে। (আহসানুল ফতওয়া)


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply