ধান বিক্রি করতে গিয়ে হতাশ কৃষক, মনপ্রতি দর সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা

|

শফিক ছোটন, নিজস্ব প্রতিবেদক, নওগাঁ:

ধান উৎপাদনের সবচেয়ে বড় জেলা নওগাঁয় চলতি বোরো মওসুমের ধান কাটার পর মাড়াই শুরু হয়েছে। তবে পুরোদমে শুরু হতে আরো ৫/৭ দিন লাগবে।

প্রথা মেনে নতুন ধান আগে-ভাগে ঘরে তোলেন নওগাঁ সদর উপজেলার বলিহার, মান্দার কিছু অংশ, আত্রাই, রানীনগর, বগুড়ার আদমদীঘি ও নাটোরের শিংড়া ও চলনবিলের চাষিরা। তারা চাষাবাদের শুরুটাও করেন সবার আগে। এসব এলাকার ধান চাষের মাঠ অন্য মাঠগুলোর চেয়ে অপেক্ষাকৃত নিচু। অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধ হয়ে ফসল নষ্ট হয়। তাই বৈশাখ-জৈষ্ঠের ঝড় বৃষ্টি ও্ শীলা বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেতে সবার আগে ফসল কাটেন চাষিরা।

নিন্মাঞ্চলের এসব জমির ধানকে জমিদারী ধান বলেন স্থানীয়রা। কারন একসময় এসব জমি ছিলো জমিদার রবীন্দ্রনাথ, রাজা হরনাথ ও বিমেলেন্দু রায়ের।

নওগাঁ জেলার আত্রাই-রানীনগর-আদমদীঘি ও নাটোরের শিংড়া ও চলনবীলের বিস্তৃর্ন মাঠগুলো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জমিদারীর। মান্দা, নওগাঁ সদর ও মহাদেবপুরের কিছু অংশ বলিহারের রাজা বিমেলেন্দু রায়, ও দুবুলহাটীর রাজা হরনাথের জমি।

জেলার অন্যান্য এলাকায় ধান কাটা ও মাড়াই বৈশাখের শেষ ভাগে শুরু হলেও জমিদারী ধান কাটা ও মাড়াই প্রায় শেষ। কিন্তু উৎপাদিত ধান বিক্রি করতে গিয়ে হতাশ হয়ে পড়ছেন চাষিরা। স্থানীয় হাটগুলোতে জমিদারী ধানের বাজার দর ৬৪০ থেকে সোর্বচ্চ ৭০০ টাকা পর্যন্ত। শুকানো ধান হলে কিছুটা বেশী দরে বিক্রি হচ্ছে।

নওগাঁ জেলার আবাদপুকুর হাটে প্রকার ভেদে সরু জাতের জিড়া শাইল ধান বিক্রি হচ্ছে ৬৪০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। একই বাজার দরে ধান বিক্রি হচ্ছে জেলার অন্যান্য হাটেও। মোটা জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকার কিছু কম-বেশি দরে। কিন্তু এই দরে ধান বিক্রি করে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না কৃষকরা।

চাষিরা বলছেন, উৎপাদন খরচের চেয়েও কম রয়েছে ধানের বাজার দর। সরু বা চিকন জাতের ধান বিক্রি করে প্রতিমনে লোকসান হচ্ছে দেড়শ থেকে দুই’শ টাকা।

নওগাঁ জেলার ধামইরহাটের চাষি আজার উদ্দিন এবার মোটা ধানের চাষ করেছেন। তিনি জানান, ৩৩ শতকের এক বিঘা জমিতে বোরো মওসুমের ধান উৎপাদন করতে খরচ পড়েছে প্রায় ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। ফলন আসছে গড়ে ২২ মন। ৬০০ থেকে ৬২০ টাকা দরে ধান বিক্রি করে চরম লোকসানের মুখে পড়েছেন তিনি। অন্যান্য চাষিদের একই অবস্থা।

চলতি বোরো মওসুমের উৎপাদন ও বাজার দরের বিষয়ে নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ পরচালক মাসুদুর রহমান জানান, কৃষি উপকরন ও আবহাওয়াসহ সবকিছু ঠিক-ঠাক থাকায় এবার বোরোতে বাম্পার ফলন হয়েছে। কিছু জমিতে রোগ বালাইয়ে ধানের ক্ষতি হলেও তা মোট উৎপাদনে প্রভাব ফেলবে না।

তিনি বলেন, ভাল ফলন পেয়ে চাষিরা খুশি। এছাড়া সরকারী ভাবে বেঁধে দেওয়া দরের চেয়েও বেশী রয়েছে বাজার দর। ফলে চলতি বাজারে ধান বিক্রি করলে কৃষক লাভবান হবে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply