কিভাবে আসলো বিশ্বকাপ? বিশ্বকাপের জন্মকথা

|

স্পোর্টস ডেস্ক:

গত ১৪২ বছরে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে হয়েছে মোট ৪২২ টেস্ট। যেখানে একটি মাত্র ম্যাচ পরিত্যাক্ত হয়েছে যে ম্যাচে একটি বলও মাঠে গড়ায়নি, তবে তা বৃষ্টির কারণে নয়। বল গড়িয়েছিলো ঠিকই তবে তা টেস্টর নয় নতুন ইতিহাসের। মেলবোর্নে ১৯৭১ সালের সেই ম্যাচে যদি বৃষ্টি না হত তাহলে আজকের ক্রিকেট বিশ্বকাপের হয়তো জন্ম হতো না!

ঐতিহাসিক মেলবোর্ন ক্রিকেট মাঠ। টানা তিন দিন বৃষ্টিতে একটি বলো মাঠে গড়ায়নি। নিশ্চিত পরিত্যক্ত ম্যাচে জন্ম হয় এক ইতিহাসের। বৃষ্টি থামার পর ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার দুই অধিনায়ক মিলে ৪০ ওভারে এক ম্যাচ খেলার সিদ্ধান্ত নিলেন। যেখানে এক ওভারের জন্য বরাদ্দ ৮ বল। দর্শকদের জন্য খেলা সেই ম্যাচই পরে স্বীকৃতি পায় একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ হিসেবে ।

সেই পথ ধরেই এলো বিশ্বকাপ। ঠিক তার চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ এ ইংল্যান্ডে প্রথম বিশ্বকাপে সবজু গালিচায় মাঠে নামে ৮ দল।

অতীত ইতিহাস

যদিও আন্তর্জাতিকভাব ক্রিকেটকে ছড়িয়ে দিতে ছোট ফরম্যাট প্রচলনের চেষ্টা হয়েছিলো আগেই। ইংলিশ কাউন্টি গেমে ১৯৬০ এর দশকেই একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শুরু হয়েছিলো।

মেলবোর্নের সেই ম্যাচের পরো অবশ্য জনপ্রিয় হতে পারেনি এই ফরম্যাট। সাদা পোষাকে অভিজাত টেস্ট ক্রিকেটের বনেদি ট্রেডমার্কের খোলস ভাঙা ছিলো দু: সাধ্য! যার প্রমান মিলে পরিসংখ্যানে। ৭১ র পর বিশ্বকাপের আগে চার বছরে হয়েছে মাত্র ১৮ টি একদিনের ম্যাচ।
৭৫’র প্রথম বিশ্বকাপ।

১৯৭৫ সালে প্রথম বিশ্বকাপে আয়োজক দেশ ছিল ইংল্যান্ড। আট দলের মিলিত সিদ্ধান্তে এক ইনিংসে ওভার ধরা হয় ৬০।
সে সময় ছয় টেস্ট খেলুড়ে দেশ ইংল্যান্ড, ভারত, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর পাকিস্তান। সাথে ছিলো শ্রীলঙ্কা ও পূর্ব আফ্রিকা।

দুই গ্রুপে আট দলের লড়াই শুরু হয় ঐতিহাসিক এক ম্যাচ দিয়ে। প্রথম ম্যাচেই ভারতের বিপক্ষে উদ্বোধনী জুটিতে ২০২ রান তোলে ইংল্যান্ড। ৪ উইকেটে ৩৩৪ রান তোলে ইংলিশরা। জবাবে ভারত তিন উইকেটে তুলেছিল ১৩২ রান। যেখানে পুরো ৬০ ওভার ব্যাট করে ৩৬ রানে অপরাজিত ছিলেন সুনীল গাভাস্কার!

প্রথম ফাইনাল

২১ জুন-লর্ডস; ইতিহাসের প্রথম ফাইনালে মুখোমুখি অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২৯১ রান করে অজিরা। জবাবে ক্যারিবিয়ান গ্রেট ভিভ রিচার্ডসের অসাধারন তিন রান আউটে ১৭ রানের জয়ে ইতিহাস গড়ে উইন্ডিজ।

কালের পরিক্রমায় বিশ্বকাপে আসে অনেক পরিবর্তন। ১৯৮৭’র বিশ্বকাপেই ঘটে নতুন যুগের সূচনা। ইংল্যান্ডের বাইরে প্রথমবারের মতো ভারত ও পাকিস্তান যৌথভাবে আয়োজন করে বিশ্বকাপের সেই আসর। প্রথমবারের মতো ইনিংসের দৈর্ঘ্য নেমে আসে ৫০ ওভারে। তাতে যেন বিশ্বকাপের রঙের ছটা আরও বেড়ে গেলো। ফাইনালটিও হয়েছিল দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। তাতে চিরবৈরি ইংল্যান্ডকে ৭ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা জিতে নেয় অ্যালান বোর্ডারের অস্ট্রেলিয়া।

ক্রিকেটের পরিবর্তনের ধারা আরও পূর্ণতা পায় ৯২’র বিশ্বকাপে। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে যৌথভাবে আয়োজিত সেই বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হয় সাদা বল। শুধু তাই নয়, বিশ্ব ক্রিকেট প্রথমবারের মতো সাক্ষী হলো দিবারাত্রির ম্যাচের। এ যেন অফিস ফেরত মানুষের জন্য নতুন ব্যবস্থা। শুধু নিয়ম-নীতিতে নয়, পোশাকেও রাঙিয়ে তুলেছিল ৯২’র বিশ্বকাপ। প্রথমবারের মতো নিজ দেশের পতাকা-প্রতীকের সাথে মিলিয়ে জার্সি পড়ে মাঠে নেমেছিল অংশগ্রহণকারী ৯টি দল।

১৯৯৬ সালে বিশ্বকাপ আবার ফিরে আসে এশিয়ায়। প্রথমবারের মতো ৩টি দেশ (ভারত-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা) মিলে আয়োজন করে বিশ্বকাপ। লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের উত্তেজনাপূর্ণ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ৭ উইকেটে হারিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটের নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় অর্জুনা রানাতুঙ্গার শ্রীলঙ্কা।

৯৯-এ বিশ্বকাপ আবার ফিরে যায় জন্মস্থান ইংল্যান্ডে। প্রথমবারের মতো বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ এই আসরে অংশ নেয় বাংলাদেশ। ২০১১ সালে বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ এই আসর আবার ফিরে আসে এশিয়ায়। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের সহ-আয়োজকের গৌরব অর্জন করে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের সবশেষ আসর (২০১৫) আবারও সেই অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে। প্রতিটি আসরে কন্ডিশন ও সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিবর্তন আসে ক্রিকেটের নিয়মনীতি ও প্রযুক্তিতে।

২০১৯ সালে বিশ্বকাপ আবারও ফিরে যাচ্ছে তীর্থভূমিতে। পঞ্চমবারের স্বাগতিক ইংল্যান্ডের এবার লক্ষ্য থাকবে অধরা শিরোপাটা ছোঁয়ার। নিউজিল্যান্ড ছাড়া তারাই একমাত্র দল যারা কিনা বিশ্বকাপের প্রতিটি আসরে অংশ নিয়েছে। অথচ ট্রফি যেন সোনার হরিণ!

যেই জিতুক সোনার ট্রফি, ক্রিকেটপ্রেমীরা যে দারুণ আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে তাতে কোনো সংশয় নেই। ভিক্টোরিয়ার সেই বৃষ্টি ক্রিকেটপ্রেমীদের অখুশি করেছিল, কে জানতো সেখান থেকেই সৃষ্টি হবে বিশ্ব ক্রিকেটের নতুন ধারার। সেদিনের সেই বৃষ্টির জন্য ক্রিকেটপ্রেমীরা আরও একবার প্রকৃতি-বন্দনায় মেতে উঠতেই পারেন!


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply