যে ১০ ক্যাচ বিশ্বকাপ ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত

|

ক্রিকেটে একটি কথা রয়েছে – ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস। ব্যাটসম্যানদের ভুল ব্যাট চালনায় ওঠা ক্যাচগুলো ধরে ফেললেই খেলার সমীকরণ পাল্টে ফিল্ডারদের দখলে চলে যায়।

এদের মধ্যে কিছু ক্যাচ থাকে অসাধারণ, অনন্য, অবিস্মরণীয় ও অতিমানবীয়। যা ব্যাটসম্যানের ভুল নয় দূর্ভাগ্যই বলা চলে। এবারের বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই ইতিহাসে জায়গা করে নেয়া এমন একটি সেরা একটি ক্যাচ ধরেছেন বেন স্টোকস।

বৃহস্পতিবার তার অসাধারণ ক্যাচে পরিণত হয়ে সাজঘরে ফেরেন দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান আন্দিল ফেহলুকাওয়ো।

ক্যাচটিকে বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্যাচ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন বেশ কয়েকজন নামকরা সাবেক ক্রিকেটার।

চলুন জেনে নেয়া যাক বিশ্বকাপ ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত এমন সব ক্যাচের কথা যা দর্শকদের আবেগকে নাড়া দিয়েছিল, দলকে জয়ের সুঘ্রাণ পাইয়ে দিয়েছিল।

জন্টি রোডস (দক্ষিণ আফ্রিকা)

দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটার জন্টি রোডসকে সর্বকালের সেরা ফিল্ডার বলা হয়। এখন কেউ দুদার্ন্তভাবে বাউন্ডারি বাঁচালে বা বল রুখে দিলে সেই ফিল্ডারের সঙ্গে জন্টি রোডসের নাম জুড়ে দেয় ধারাভাষ্যকাররা।

ক্যারিয়ারে ইতিহাসখ্যাত ক্যাচ ধরে অনেকবারই প্রশংসিত হয়েছেন জন্টি রোডস।

তবে বিশ্বকাপ মঞ্চে এই কিংবদন্তির একটি ক্যাচ ক্রিকেটপ্রেমীদের স্মৃতিতে থাকবে অনেক দিন। ১৯৯৯ বিশ্বকাপের কথা। ইংল্যান্ড বনাম দ. আফ্রিকা ম্যাচে পয়েন্টে ফিল্ডিং দিচ্ছিলেন জন্টি। রবার্ট ক্রফটের সজোড়ে চালানো ব্যাট থেকে আসা একটি বল শূন্যে লাফিয়ে এক হাতে তালুবন্দি করেন রোডস।

ডোয়াইন লেভেরক (বারমুডা)

২০০৭ বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিল বারমুডা। এর পর এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপ মঞ্চে ঠাঁই হয়নি তাদের। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে অনুষ্ঠিত ওই আসরে তেমন একটা সফল হতে পারেনি বারমুডা। তবে একটি কারণে বিশ্বকাপ মঞ্চে বারমুডাকে মনে রাখবে ক্রিকেটবিশ্ব। আর সেটি হচ্ছে স্থূলকায় এক ক্রিকেটারের এক অতিমানবীয় ক্যাচ। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ফিল্ডিং করছিল বারমুডা। দ্বিতীয় ওভারেই ওপেনার রবিন উথাপ্পার বল এজ হয়ে যায় স্লিপে। বিশাল দেহকে মুহূর্তের মধ্যে সচল করেন স্লিপে দাড়িয়েঁ থাকা ডোয়াইন লেভেরক। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে এক হাতে ক্যাচটি লুফে নেন। বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্যাচ হিসাবে ধরে নেয়া হয় এটিকে।

অজয় জাদেজা (ভারত)

১৯৯২ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারতের ম্যাচে ৪৯তম ওভারের সময় লং অফে ফিল্ডিং করছিলেন অজয় জাদেজা। বল করছিলেন কপিল দেব। ওভারের একটি বল অ্যালান বোর্ডার উড়িয়ে মারেন। অজয় জাদেজা লং অফ থেকে অনেকটা জায়গা দৌড়ে এসে সামনে ডাইভ দিয়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ তালুবন্দি করেন।

মার্ক ওয়াহ (অস্ট্রেলিয়া)

১৯৯৯ বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। সেই ম্যাচে পাক ব্যাটসম্যান ওয়াজাহাতুল্লাহ ওয়াস্তির ব্যাটের কানায় লেগে বল পৌঁছে গিয়েছিল স্লিপে। দ্বিতীয় স্লিপে দাঁড়ানো মার্ক ওয়াহ তার ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে এক হাতে বলটি তালুবন্দি করেন। এই অবিশ্বাস্য ক্যাচটি ছিল ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। এরপর একের পর এক উইকেটের পতন হতে থাকে পাকিস্তানের। ফাইনালে অনেকটা হেসেখেলে হারিয়ে শিরোপা নিজেদের করে নেয় অস্ট্রেলিয়া।

কপিল দেব (ভারত)

১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচের কথা। দারুণ একটি ক্যাচ নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান ভিভ রিচার্ডসকে সাজঘরে ফিরিয়েছিলেন কপিল দেব। মিড উইকেট থেকে পুরোটা সময় উল্টো দৌড়ে প্রায় বাউন্ডারির কাছাকাছি গিয়ে ক্যাচটি তালুবন্দি করেন কপিল। সে ক্যাচেই ম্যাচের সমীকরণ ভারতের পাল্লায় চলে যায়। সবাইকে অবাক করে দিয়ে বিশ্বকাপের শিরোপাটি নিজেদের ঘরে তোলে ভারত।

ভাসবার্ট ড্রেক্স (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

২০০৩ বিশ্বকাপে কানাডার বিপক্ষে পাঁচ উইকেট নিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন এই ক্যারিবিয়ান পেসার। পুরো ম্যাচটাই যেন হয়েছিল কানাডা বনাম ড্রেক্সের মধ্যে। সেই ম্যাচে দুদার্ন্ত খেলছিলেন কানাডার ডেভিসন। ৬৭ বলে সেঞ্চুরি করে ২৩তম ওভারে এসে ডেভিসন ইনিংসের সপ্তম ছক্কা হাঁকাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু বাউন্ডারির একদম সামনে শূন্যে লাফিয়ে উঠে বলকে আর সীমানা পার হতে দেননি ড্রেক্স। ক্যাচটি এতোই অবিশ্বাস্য ছিল প্রথমে ধারাভাষ্যকাররাও ঘটনার বিবৃতি দিতে পারছিলেন না। ডেভিসনের আউটটি কানাডার শিবিরে এতোটাই ধাক্কা দিয়েছিল যে পরবর্তী ৪২ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে অলআউট হয় কানাডা।

ডেল স্টেইন (দক্ষিণ আফ্রিকা)

২০১৫ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রোটিয়া পেসার ডেল স্টেইনের ক্যাচটি ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। কাইল অ্যাবটের বলে আহমেদ শেহজাদের শূন্যে ভাসিয়ে দেয়া শটকে অবিশ্বাস্য দক্ষতায় ধরে ফেলেছিলেন স্টেইন।

শেন থমসন (নিউজিল্যান্ড)

১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের একটি ম্যাচে অসাধারণ ক্যাচ ধরেছিলেন শেন থমসন। স্কয়ার লেগে ফিল্ডিং দিচ্ছিলেন তিনি। পাক ব্যাটসম্যানের একটি শট পেছনের দিকে উল্টো হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে লুফে নেন এই ক্রিকেটার। ক্যাচটিকে বিশ্বকাপের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ক্যাচ হিসাবে বলা হয়। শুধু তাই নয়, থমসনের সেই ক্যাচটি না দেখে থাকলে নিশ্চিতভাবেই এক ক্রিকেট কারিশমা মিস করা হবে বললে অত্যুক্তি হবে না।

ড্যানিয়েল ভেট্টোরি (নিউজিল্যান্ড)

২০১৫ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ড দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও বয়স্ক সদস্য ছিলেন ড্যানিয়েল ভেট্টোরি। আর সেই অভিজ্ঞতার কথাই ফিল্ডিংয়ে জানান দেন এই ক্রিকেটার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলছিল ভেট্টোরির দল। মারলন সামুয়েলস থার্ড ম্যান দিয়ে হাওয়ায় ভাসিয়ে দিয়েছিলেন বল। ছক্কা নিশ্চিত ভেবেও বসেছিল গ্যালারির দর্শকরা। তখনই স্যামুয়েল, দর্শক আর ধারাভাষ্যকারদের অবাক করে দিয়ে শূন্যে লাফিয়ে বাঁ হাত দিয়ে চিলের মতো ছোঁ মেরে বলটিকে তালুবন্দি করেন ভেট্টোরি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সমর্থকদের চিৎকারকে মাঝ পথেই থামিয়ে দেন তিনি।

বেন স্টোকস (ইংল্যান্ড)

শেষ ক্যাচটি মাত্র দুদিন আগের। এখনও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ চর্চা হচ্ছে ক্যাচটিকে ঘিরে। এবারের বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই আন্দিলে ফিকোয়াওকে ফেরাতে বেন স্টোকসের অতিমানবীয় ক্যাচটি বিশ্বকাপ মঞ্চে ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্যাচের খাতায় নতুন সংযোজন। দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংসের ৩৫তম ওভারের প্রথম বলে ফিকোয়াও স্লগ সুইপ করে বল পাঠিয়ে দেন ডিপ মিড উইকেটে।

নিশ্চিত বাউন্ডারি হওয়া বলটিকে শূন্যে শরীর ভাসিয়ে দিয়ে একহাতে অসাধারণ ভঙ্গিতে ক্যাচ নেন বেন স্টোকস। ক্যাচটিকে ‘শতাব্দীর সেরা ক্যাচ’ বলে দাবি করেছেন সাবেক ইংলিশ স্পিনার ফিল টাফনেল।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply