পাইলসের অপারেশন করাতে এসে জরায়ু হারালেন গৃহবধূ

|

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর থেকে:

যশোরে কিংস হসপিটালে পাইলস অস্ত্রোপচারের জন্য এসে জরায়ু হারালেন এক নারী। চিকিৎসক সাদিয়া শাহীনের ভুল অস্ত্রোপচারে এই অঙ্গহানী বলে রোগীর স্বজনরা দাবি করেছেন। এই ঘটনায় তারা হট্টগোল করেছেন। ভুক্তভোগী রোগীর নাম ছায়রা বেগম (৪৫)। তিনি যশোর সদর উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের মতিয়ার রহমানের স্ত্রী। এই ঘটনায় যশোরের সিভিল সার্জন ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছে।

যশোরের সিভিল সার্জন জানান, পাইলসের অস্ত্রোপচার করবেন সার্জারী বিশেষজ্ঞ। সাদিয়া শাহীন কিভাবে ওই অস্ত্রোপচারের দায়িত্ব নিয়েছিলেন এটা তার বোধগম্য নয়। আর পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই রোগীর অস্ত্রোপচার করা বিষয়টি শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন সিভিল সার্জন।

সালমা খাতুন ও আসমা খাতুন জানান, তাদের মা ছায়রা বেগম দেড়বছর ধরে পাইলসে ভুগছিলেন। বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছ থেকে নেয়া ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী তিনি ওষুধ খাচ্ছিলেন। গত ২৭ মে সমস্যা গুরুতর হলে তাকে কিংস হসপিটালের চিকিৎসক সাদিয়া শাহীনের কাছে আনা হয়। তিনি রোগীর সমস্যার কথা শুনে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন। কিন্তু ওই সময় অর্থ সংকটের কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি। পরে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করে গত সোমবার কিংস হসপিটালে ছায়রা বেগমকে ভর্তি করেন। ভর্তি রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৫০৮২।

স্বজনরা জানিয়েছেন, এদিন দুপুরে ভর্তির পর কোন রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই বিকেলে ২০ হাজার টাকার চুক্তিতে রোগীর অস্ত্রোপচার করেন ডা. সাদিয়া শাহীন। অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে রোগীকে ওয়ার্ডে আনার পর তারা দেখতে পান রোগীর তলপেটে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এই সময় তারা চিকিৎসক ও তার সহকারীর কাছে জানতে চান তলপেট কেটে পাইলসের অস্ত্রোপচার করা হলো কিভাবে। এসময় চিকিৎসক হতাশ হয়ে বলেন আমিতো জরায়ুর অস্ত্রোপচার করেছি। এই ঘটনায় রোগীর স্বজনদের সাথে চিকিৎসকের শুরু হয় তর্কবিতর্ক। তারা চিকিৎসকের উপর ক্ষুব্দ হয়ে ওঠেন ও হাসপাতালে হট্টগোল শুরু করেন। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে চিকিৎসক সাদিয়া শাহীন গা ঢাকা দেন।

বিষয়টি কিংস হসপিটাল কর্তৃপক্ষ ধামাচাপা দেয়ার দেয়ার চেষ্টা করেও স্বজনদের হট্টগোলর কারণে ব্যর্থ হন।

সালমা খাতুন জানান, ভুল চিকিৎসার এই দায় কার? এটা কি ডা. সাদিয়ার অদক্ষতা নাকি অবহেলা? নাকি টাকার প্রতি লোভ? তিনি কি কারণে পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই রোগীর অস্ত্রোপচার করলেন। তার মায়ের এই ক্ষতি এখন কিভাবে পূরণ হবে? ভুল অস্ত্রোপচারের ঘটনায় তারা আইনের আশ্রয় নেবেন বলে জানান।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডা. সাদিয়া শাহীন এমবিবিএস পাশ। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বি এম এন্ড ডি সি) স্বীকৃত কোন ডিগ্রি নেই। তিনি নামের পরে লেখেন এফসিপিএস (পার্ট-২) গাইনী বিশেষজ্ঞ ও সার্জন। ভুয়া ডিগ্রি ব্যবহার করে তিনি রোগী ও স্বজনদের সাথে প্রতারণা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এই বিষয়ে ডা. সাদিয়া শাহীন সাংবাদিকদের জানান, রোগীর পেটে ব্যথা হওয়ার কারণে ভেবেছিলাম জরায়ুতে সমস্যা। তাই জরায়ুতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তার ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন। পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই তড়িঘড়ি করে কেনো অস্ত্রোপচার করলেন প্রশ্ন করা হলে তিনি সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি।

যশোরের সিভিল সার্জন ডা. দিলীপ কুমার রায় জানান, পাইলসের পরিবর্তে জরায়ু অস্ত্রোপচারের বিষয়টি দুঃখজনক। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। সিভিল সার্জন আরো জানান, এসসিপিএস পার্ট-১ পার্ট-২ কোন ডিগ্রি নয়। রোগী ও স্বজনকে আকৃষ্ট করতে চিকিৎসকেরা নামের আগে ও পরে এটা ব্যবহার করে থাকেন। এই ঘটনায় মঙ্গলবার দুুপুরে সিভিল সার্জন ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। আগামী ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply