‘জীবনে চিন্তাও হরিনাই মোগো পোলারা পুলিশে চাকুরি পাইবে’

|

পটুয়াখালী প্রতিনিধি
সম্প্রতি পটুয়াখালীতে পুলিশের কনষ্টেবল পদে ১৩৩জন নিয়োগকৃতদের মধ্যে অধিকাংশই কৃষক পরিবারের সন্তান। এর পাশাপাশি এতিম, জেলে, দিনমজুর, ফেরিওয়ালা, খেয়াঘাটের মাঝি, লন্ডির দোকানদার, রাজমিস্ত্রি আর কাঠমিস্ত্রির পরিবারের সন্তানও রয়েছে একাধিক। বিনাঘুষে আর কোন ধরনের দেনদরবার তদবির ছাড়াই ‘স্বচ্ছ ও মেধা নির্ভর নিয়োগ” প্রক্রিয়ায় এসব পরিবারের সন্তানেরা পুলিশে চাকুরি পেয়ে আনন্দে আত্মহারা। নিয়োগ পাবার পর পুলিশ সুপার তাদেরকে মিষ্টি মুখ করিয়ে ফুলের শুভেচ্ছা জানানোর সময় খুশিতে নিজেরা কেঁদে অন্যদেরকেও কাঁদিয়েছে।

বিনা ঘুষে আর কোন ধরনের তদবির ছাড়াই পুলিশে চাকুরি পাবার উচ্ছাস প্রকাশ করতে গিয়ে উপস্থিত প্রায় সকলেই কেঁদে ফেললেন আবেগে আপ্লুত হয়ে। চোখের পানি রাখতে পারেননি পুলিশ সুপারসহ অন্যান্যরাও।

নুন আনতে পানতা ফুরায়, দিন আনে দিন খায়, মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আর অন্যের জমি বর্গা চাষ করে যাদের সংসার চলে তাদের পরিবারের সন্তানরা মাত্র ১০৩ টাকায় পুলিশে চাকুরি পাবে বা করবে-এটা এখনও অনেক অভিভাবকের কাছে স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে।

তাদের ধারনা ছিল পুলিশে চাকুরি মানেই ৮/১০লাখ টাকা ঘুষ আর মামু খালুর লবিং তদবির। কিন্তু তাদের সেই ধারনাকে মিথ্যে প্রমাণিত করে শতভাগ স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, যোগ্যতা ও মেধানির্ভর এবং কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে এসব চাকুরি প্রার্থীদের ধাপে ধাপে পরীক্ষা সম্পন্ন করে তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মইনুল হাসান।

কথা হয় পটুয়াখালী সদর উপজেলার চালিতাবুনিয়া গ্রামের রাজমিস্ত্রি আতাহার গাজী, হর্তুকিবাড়িয়ার দিনমজুর জাকির প্যাদা, পূর্ব হেতালিয়ার চায়ের দোকানদার আবুল কালাম খানের সাথে। তারা সবাই খুশি। তাদের সন্তানরা পুলিশে চাকুরি পেয়েছে বিনা ঘুষে বিনা তদবিরে এই কারণে।

লঞ্চের ফেরিওয়ালা পাতারচর গ্রামের মানিক মাতুব্বর কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, লঞ্চে লঞ্চে ফেরিওয়ালার কাজ করতেছি। জীবনে কখনও কল্পনাও করিনি যে, বিনা পয়সায় (বিনা ঘুষে) আমার পোলার পুলিশে চাকুরি হবে। আমি এসপি স্যারসহ প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। একই অনুভূতি রাঙ্গাবালী ও মহিপুর এলাকার দুই জেলে পরিবারের অভিভাবকদের মধ্যেও। মিশ্রি পাড়ার পতিষ চন্দ্র হাওলাদার ও গাববুনিয়ার শহিদ মিয়ার করুন কন্ঠে বলেন, “হারাজীবন সাগরে মাছ ধরছি। যুদ্ধ করছি তুফানের লগে। জীবনে চিন্তাও হরিনাই মোগো পোলারা পুলিশে চাকুরি পাইবে। মোগো কোন মামু খালু নাই। নাই কারী কারী কোনো টাহা পয়সা। হেইয়ার মধ্যদিয়া কিভাবে যে চাকুরি পাইলো আল্লাহ মাবুদ জানে। স্যারের জন্য দোয়া করি আল্লাহ যেন স্যারকে অনেক বড় কইরা দেয়।

এরআগে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর প্রথম দিকে প্রতারক, দালাল, তদবিরবাজদের দৌরাত্ম্য দূরীকরনের লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মইনুল হাসান। জেলার প্রতিটি গুরুত্বপূর্ন স্থানে ১০৩ টাকায় পুলিশে চাকুরি সম্বলিত লিফলেট, মাইকিং করে চাকুরি প্রার্থীসহ অভিভাবকদের সচেতন করার পাশাপাশি দালাল তদ্বিরবাজদের সতর্ক করা হয়। পরবর্তিতে কঠোর গোপনীয়তা এবং সতর্কতার সহিত ধাপে ধাপে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মইনুল হাসান।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply