নাসরিন ট্র্যাজেডি: ১৬ বছরেও মেলেনি ক্ষতিপূরণ

|

গতকাল ৮ জুলাই ছিল এমভি নাসরিন ট্র্যাজেডির ১৬ বছর। ২০০৩ সালের এই দিনে ঢাকার সদরঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া ভোলার লালমোহনগামী এমভি নাসরিন-১ লঞ্চটি চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীতে ডুবে ৪০২ জনের সলিল সমাধি হয়।

দেশে নৌ-দুর্ঘটনার ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা। নাসরিন লঞ্চডুবির ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও নিহত পরিবারে কান্না আজও থামেনি। দুর্ঘটনায় অর্ধেকেরও বেশি লাশ পাওয়া যায়নি মেঘনার অতল গহ্বর থেকে।

এক পরিবারের ২৬ জন বরযাত্রী হয়ে লঞ্চে উঠেছিলেন, যাদের ২৪ জনকেই হারান লালমোহন ফরাজগঞ্জ ইউনিয়নের মহেষখালী গ্রামের রিনা বেগম। রিনার সঙ্গে বেঁচে আসে তার ফুফাতো ভাই সোহেল।

কিন্তু চিরদিনের মতো হারিয়ে যায় রিনার ৭ বছরের মেয়ে হাফসা, বোন স্বপ্না, রুমা, তাদের স্বামী-সন্তান, মামা আব্দুল কাদের, মামি সুফিয়া, খালা রাহিমা, খালাতো ভাই মিলন, মিজানসহ পুরো পরিবারের স্বজনরা। সেদিন রিনা ঢাকা থেকে ভাগ্নে কলেজ শিক্ষক মতিনের বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য লালমোহনের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। পরিবারের কোনো সদস্যেরই লাশ খুঁজে পাননি রিনা।

লঞ্চটিতে সেদিন এশার নামাজের ইমামতি করেছিলেন লালমোহন চরভূতা ইউনিয়নের মাদ্রাসা সুপার মাওলানা মাকসুদুর রহমান। নিজে বেঁচে আসতে পারলেও সঙ্গে থাকা ভাগ্নে নোমানকে আর খুঁজে পাননি তিনি। নিজের স্বামীকে হারানোর কথা তুলে ধরেন শামসুননাহার। স্ত্রী ও মেয়েকে হারিয়ে বেঁচে ফিরে আসার কথা জানান লালমোহনের ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান।

স্বজনহারাদের দায়ের করা মামলায় উচ্চ আদালত ১৭ কোটি ১১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের রায় দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি আজও। এ রায় দ্রুত কার্যকর দেখতে চান নিহত/নিখোঁজ পরিবারের স্বজনরা।

নিহত পরিবারের স্বজনদের নিয়ে ২০১৭ সালের ৬ জুলাই ভোলায় বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। ব্লাস্ট ২০০৪ সালে ঢাকার তৃতীয় জেলা জজ আদালতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও পরিবারের পক্ষে যথাযথ ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা দায়ের করে।

দুর্ঘটনার ১২ বছর পর ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নিম্ন আদালত ওই মামলার রায় ঘোষণা করে ক্ষতিগ্রস্তদের ১৭ কোটি ১১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশ প্রদান করেন। রায়ে ক্ষতিপূরণ বাবদ ১০ লাখ টাকা করে নিহতদের পরিবারকে, ১০ লাখ টাকা করে নিখোঁজদের পরিবারকে এবং ১ লাখ টাকা আহত একজনকে প্রদানের নির্দেশ প্রদান করা হয়।

ওই আদেশের বিরুদ্ধে বিআইডব্লিউটিএসহ বিবাদী লঞ্চ মালিকপক্ষ ২০১৬ সালের ২৪ অক্টোবর হাইকোর্টে একটি রিভিশন আবেদন করে। চলতি বছরের ৫ জুন মহামান্য হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম এবং বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ব্লাস্ট কর্তৃক দায়েরকৃত মামলায় নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন।

এর ফলে মামলার বাদীভুক্ত ১২১ জন নিহতের স্বজনদের ১৭ কোটি ১১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানে আর কোনো বাধা নেই। কিন্তু রায়ের পর বিআইডব্লিউটিএ ও লঞ্চ মালিকপক্ষ কিভাবে ক্ষতিপূরণের টাকা শোধ করবে তা এখনও স্পস্ট নয়।

মামলার রায় হতে ১৩ বছর লেগেছে, ক্ষতিপূরণের অর্থ পেতে আরও কত বছর লাগে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন নিহতদের স্বজনরা। নিহত-নিখোঁজদের স্বজনরা দ্রুত এ রায়ের বাস্তবায়ন চান।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply