ঢাকার নাম পরিবর্তনে এরশাদ

|

মানুষ মাত্রই মরণশীল। রোববার সকাল পৌনে ৮টায় না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তবে যতদিন ঢাকা থাকবে, ততদিন ইতিহাস এরশাদকে মনে রাখবে। কারণ ঢাকার নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন সাবেক এ সফল রাষ্ট্রপতি।

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ডাক্কা বা ডাকচৌকি থেকে ‘ঢাকা’ শব্দটি এসেছে। ‘ডাক্কা’ থেকে যে ‘ঢাকা’ শব্দটি এসেছে তার একটি প্রমাণ ছিল ১৯৯০ সালের আগপর্যন্ত ‘ঢাকা’র ইংরেজি বানানে। তখন পর্যন্ত ঢাকার বানান ছিল ডি এ ডাবল সি এ (Dacca),যার উচ্চারণ হুবহু ডাক্কাই দাঁড়ায়।

ব্রিটিশ শাসনামলে বর্তমান রাজধানী ঢাকার নাম ছিল ইংরেজি বানানে ‘Dacca’। এই ‘Dacca’ (ডাক্কা) থেকে Dhaka (ঢাকা) নামকরণ করেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল এরশাদ। তার সরকারের সময় ১৯৮২/১৯৮৩ সালে এই পরিবর্তন আনা হয়।

ঐতিহাসিকদের অনেকেই মনে করেন সুবেদার ইসলাম খাঁর আমলেই ঢাকার নামকরণ ‘ঢাকা’ করা হয়। তিনি যখন এখানে আসেন, তখন দেখতে পান, এখানকার অধিবাসীরা ঢাকঢোল পিটিয়ে উৎসবে ব্যস্ত। পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ ইসলাম খাঁ ঢাকের শব্দে অভিভূত হোন, যেহেতু এর আগে তিনি ঢাকের শব্দ শুনেননি।

নতুন রাজধানীর সীমানা নির্ধারণ করার জন্য পূর্ব, পশ্চিম ও উত্তর দিকে তিন কর্মকর্তাকে প্রেরণ করেন এবং তাদের এই মর্মে আদেশ দেন যে যতক্ষণ না পর্যন্ত ঢাকের শব্দ শোনা না যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত যেন তারা চলতে থাকেন। তিনি এও বলে দেন- যেখানে গিয়ে ঢাকের শব্দ আর শোনা যাবে না দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা রেখে, সেখানেই হবে নতুন রাজধানীর সীমানা।

ইসলাম খাঁর আসলে (১৬১০ সালে) ঢাকায় বাংলার রাজধানী স্থানান্তর করেন। প্রথমবারের মত ঢাকা রাজধানী হওয়ার মর্যাদা লাভ করে। ঢাকের শব্দের ভিত্তিতে জায়গা নির্বাচন হয়েছে বলে নতুন রাজধানীর নাম হয়ে যায় ঢাকা।

১৫৯৪ থেকে ১৬০৬ সালের মধ্যবর্তী সময়ে মোগল সুবেদার শাহবাজ খাঁ এবং মানসিংহ মধ্যকার যুদ্ধে ঢাকা নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। আবার ইসলাম খাঁর সমসাময়িক সময়ে বুড়িগঙ্গার তীরে ঢাকা নামের একটি অঞ্চলের অস্তিত্ব স্বীকার করেন ঐতিহাসিকরা।

তাছাড়া ঢাকার সুবেদার হয়ে ইসলাম খাঁ এ অঞ্চলের নাম রেখেছিলেন জাহাঙ্গীরনগর। এ দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে একই সুবেদার কর্তৃক অভিন্ন একটি অঞ্চলের ভিন্ন নাম গ্রহণ যুক্তিযুক্ত নয়।

ঢাকা যে ডাক্কা শব্দজাত, তার সমর্থন মেলে অধ্যাপক ডিসি সরকারের কথায়। তিনি বলেন, কহলনের ‘রজতরঙ্গিনী’ গ্রন্ধে ‘ডাক্কা’ শব্দটি পাওয়া যায়। যার অর্থ হচ্ছে- ‘পর্যবেক্ষণ ফাঁড়ি’।

এই পর্যবেক্ষণ ফাঁড়ি বা অবজারভেটরি সেন্টারের সমর্থনে আরেকটি তথ্য পাওয়া যায়, তা হলো- হিন্দু রাজার রাজধানী বিক্রমপুরে ও সোনারগাঁওয়ের জমিদারদের বিদ্রোহাত্মক প্রভাব দমন করতে বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শাসনানুকূলে আনতে সতর্কতাস্বরূপ স্থানটিকে ডাকচৌকি বা ডাক্কা বা ডেক্ক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ থেকেই ঢাকা নামটি এসেছে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply