ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) নবসংযুক্ত ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো বেহাল হয়ে পড়েছে। এখানকার নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ কাঁচা নিচু সড়কে বড় বড় গর্ত থাকায় প্রায় সারা বছরই পানি জমে থাকে। অধিকাংশ জায়গায় এখনও গড়ে ওঠেনি স্যুয়ারেজ ব্যবস্থাপনা।
খানাখন্দ ও গর্তে ভরা কাঁচা সড়কগুলোতে চলাচলকারী হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও পথচারীকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। আর ভরা বর্ষায় তলিয়ে যায় নিম্নাঞ্চলের প্রায় সব সড়ক।
উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম ডগাইর, বামৈল, বড়ভাঙ্গা কোদালদোওয়া, সানারপাড়, গ্রিনসিটি, বাঁশেরপুল ও ডগাইর বাজারসহ এ বাজারে ৩০টি পাড়া-মহল্লা রয়েছে।
ওয়ার্ডটিতে এখনও পরিকল্পিত ও সমন্বয়ভিত্তিক উন্নয়ন শুরু হয়নি বলে অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলো বেহাল হয়ে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই এখানে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
তলিয়ে যায় নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, চাষের জমি, সবজি ক্ষেত ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। সব মিলিয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছে এখানকার বৃহৎ জনগোষ্ঠী।
সরেজমিন দেখা যায়, ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের অভ্যন্তরীণ ৫৬ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে অল্প কিছু রাস্তার উন্নয়ন হয়েছে। বাকি কিছু সড়ক এখনও কাঁচা ও সরু বলে চলাচলের উপযোগী নয়।
এর মধ্যে পশ্চিম সানারপাড় থেকে ডগাইর মিলন রোড পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়ক এখনও কাঁচা ও বেশিরভাগ অংশে বড় বড় গর্ত। সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে যায়। ডগাইর পশ্চিম পাড়া মাঝার রোড থেকে ডগাইর বাজার রোড পর্যন্ত ১ কিলোমিটার সড়কে সারা বছরই পানিতে ডুবে থাকে।
এ ছাড়া বর্ষায় এ সড়কটিতে হাঁটুপানি থাকে বলে প্রায় সারা বছরই এখানকার অন্তত ৫ হাজার মানুষের চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
আরও দেখা গেছে, ডগাইর বাদশা মিয়া রোড থেকে প্রকৃতি সংগঠন রোড হয়ে ডগাইর মাঝার রোড পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সড়ক এখনও কাঁচা ও বেহাল। নিউসিটি এলাকার মোহাম্মদি মসজিদ রোড পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার সড়ক কাঁচা ও কর্দমাক্ত।
ডগাইর পশ্চিম পাড়া সরকারবাড়ি থেকে আর্জু আহম্মেদ মনিরের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় পৌনে ১ কিলোমিটার সড়ক সরু ও বেহাল। ওয়ার্ডের অন্তত ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার সড়ক এভাবেই কাঁচা, খানাখন্দ, কর্দমাক্ত ও বেহাল অবস্থায় রয়েছে।
ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর অভিযোগ, ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডটি ডিএসসিসির অন্তর্ভুক্ত হলেও নজরদারি না থাকায় এখানকার নিম্নাঞ্চল এখনও চরম অবহেলিত। বছরের প্রায় ৭ মাসই নিম্নাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি থাকে। এ সময় অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো তলিয়ে যায় বলে ওইসব সড়কে যানবাহন চলতে পারে না।
এ ছাড়া বৃষ্টি হলেও গর্তে ভরা নিচু সড়কে পানি জমে থাকলে কর্দমাক্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। তখন শিক্ষার্থী ও পথচারীদের দীর্ঘপথ ঘুরে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়। এ সময় অভ্যন্তরীণ যাতায়াত খরচ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। বৃষ্টি শুরু হলেই এখানে প্রতিবছর দীর্ঘ সময় পর্যন্ত জলাবদ্ধতা লেগে থাকে।
তখন বৃষ্টির পানির সঙ্গে ড্রেনের পানি ও মানুষের বর্জ্য মিশে একাকার হয়ে যায়। এবারের বর্ষায় ওয়ার্ডটিতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন অধিবাসীরা।
সানারপাড়ের বাসিন্দা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, সাবেক ইউনিয়নভুক্ত ৬৬ নম্বর ওয়ার্ড এলাকাটি সম্প্রতি সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এলজিইডি তাদের শেষ উন্নয়ন কাজে তরিঘড়ি করে অনেক ফাঁকি দিয়েছে।
তাই পশ্চিম সানারপাড় থেকে ডগাইর মিলন রোড পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কটির মারাত্মকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে।
সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী মোছা. নাজনীন আক্তার বলেন, বৃষ্টি শুরু হলেই এলাকার রাস্তায় চলাচল করা যায় না। রাস্তাগুলো কর্দমাক্ত থাকে বলে অনেক পথ ঘুরে স্কুলে যেতে হয়। তখন হেঁটে যাওয়া পথ ঘুরে রিকশা দিয়ে স্কুলে যেতে অন্তত ৫০ টাকা রিকশা ভাড়া লাগে।
ডিএসসিসি ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর মো. নুরউদ্দিন মিয়া বলেন, ডিএসসিসির অন্যতম নিচু এলাকা হচ্ছে এ ওয়ার্ড। এখানকার অভ্যন্তরীণ নিচু ও কাঁচা রাস্তাগুলো চলাচলের অনুপযোগী। তবে অলি-গলি ও ছোট-বড় শাখা রাস্তাসহ প্রায় ৪০ কিলোমিটার সড়কের ম্যাপ করা হয়েছে। যা নগর ভবনে জমা দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। এ ওয়ার্ডটির দিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি খুবই প্রয়োজন।
ডিএসসিসির (অঞ্চল-৫) নির্বাহী প্রকৌশলী মিথুন চন্দ্র শীলবলেন, ডিএসসির ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডটিতেও বেশ কিছু সড়কে সড়কবাতিসহ উন্নয়ন হয়েছে। তবে নিম্নাঞ্চলের কিছু রাস্তা চলমান উন্নয়ন বরাদ্দে ছিল না। এবারের উন্নয়ন বরাদ্দে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ওই ওয়ার্ডের বেহাল সড়কের পরিকল্পিত উন্নয়ন করা হবে।
Leave a reply