চট্টগ্রামে টানা বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতা: অর্ধেক সড়কই বেহাল

|

টানা বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতায় চট্টগ্রামের অর্ধেকের বেশি সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নগরী ও উপজেলাগুলোর বেশিরভাগ সড়ক ভরে গেছে খানাখন্দে। বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে অনেক সড়কে।

ফলে স্বাভাবিক যান চলাচলে বিঘ্ন তো হচ্ছেই, সাধারণ মানুষের পায়ে হাঁটাও দায় হয়ে পড়েছে। বড় বড় গর্তে গাড়ি উল্টে গিয়ে পথচারী ও যাত্রীদের হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। সঠিক পরিকল্পনার অভাব, নিম্নমানের সংস্কার এবং সমন্বয়হীন উন্নয়ন কাজকেই এ জন্য দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের ৫৭৭ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৩শ’ কিলোমিটারের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) তথ্য অনুযায়ী, নগরীর রাস্তাঘাটের পরিমাণ ১১০০ কিলোমিটারের কিছু বেশি। এরমধ্যে ৪৫ শতাংশের অবস্থাই এখন শোচনীয়। সবমিলে চট্টগ্রামের ১৬৭৭ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে অর্ধেকের অবস্থাই শোচনীয়।

চট্টগ্রাম নগরীর অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর অবস্থা শোচনীয়। বেশিরভাগ প্রধান সড়কের পিচ, ইট, সুরকি উঠে গেছে। দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, হালিশহর, চকবাজার, কোতোয়ালি, ফিরিঙ্গি বাজার, আন্দরকিল্লা, অক্সিজেন, বিমানবন্দর সড়ক ও কাপ্তাই রাস্তার মাথাসহ বেশিরভাগ প্রধান সড়কই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, পানি সরবরাহ সঞ্চালন লাইনের জন্য ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ি ছাড়াও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে উন্নয়ন কাজ করছে। আর এসব কাজ করতে গিয়ে কোথাও সড়কের একপাশ পুরো বন্ধ, আবার কোথাও পুরো সড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বৃষ্টির মৌসুমে এসব শেষ করতে না পারায় টানা বৃষ্টি আর যানজটে নগরবাসী ও কর্মজীবী মানুষের দুর্ভোগ আর ভোগান্তি চরমে।

চন্দনপুরা ফায়ার সার্ভিস অফিস সংলগ্ন সড়ক, হালিশহর নয়াবাজার ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রাংক রোডে অসংখ্য গর্ত আর খানাখন্দ রয়েছে। বহদ্দারহাট-শিকলবাহা ছয় লেনের সড়কটি এখন নির্মাণাধীন। সড়কটি উদ্বোধনের আগেই একাধিক জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটির রাহাত্তারপুল, কালামিয়ার বাজার ও শাহ আমানত সেতু এলাকায় একাধিক গর্তের কারণে যান চলাচল দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অনেক জায়গায় ইটের টুকরো দিয়ে সাময়িকভাবে যান চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। উদ্বোধনের আগে নির্মাণাধীন সড়কে গর্ত তৈরি হওয়ায় নির্মাণ কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নির্মাণাধীন কর্ণফুলী সেতু এপ্রোচ সড়ক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নগরীর পতেঙ্গা এলাকার শহর রক্ষা বাঁধের ওয়াকওয়ের কয়েকটি অংশ উদ্বোধনের আগেই ধসে পড়ে। শনিবার সকালে চরপাড়ায় সাগরের পাশঘেঁষা নির্মিতব্য ‘উপকূলীয় বাঁধ কাম আউটার রিং রোডে’ ঘটনা ঘটে। যে কোনো সময় ওয়াকওয়েটির বড় অংশ ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। অভিযোগ- লোহার রড ব্যবহার ছাড়াই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে যেনতেনভাবে নির্মাণ কাজ করায় ওয়াকওয়েটি ধসে গেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। এছাড়া চউক’র সদ্যবিদায়ী চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামকেও দায়ী করছেন অনেকে।

প্রকল্প পরিচালক ও চউক’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, রিং রোডের ক্ষতিগ্রস্ত অংশে কিছু ‘মেকানিক্যাল ত্রুটি’ ছিল। এ কারণে হয়তো ধসে গেছে। আমরা এখন ঘটনাস্থলে আছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ধসে যাওয়া ওয়াকওয়েটি আবার নির্মাণ করে দেব। অন্যদিকে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, রাঙ্গুনিয়া, আনোয়ারাসহ বিভিন্ন উপজেলায় টানা বর্ষণে সড়কগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনেক উপজেলায় পানির স্রোতে রাস্তা ভেঙে গেছে।

সওজের চট্টগ্রাম অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার আহমদ বলেন, টানা বর্ষণে সওজের আওতাধীন ৫৭৭ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৩শ’ কিলোমিটার সড়ক কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোথাও কোথাও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব সড়ক মেরামত করতে ২৫ কোটি টাকার বেশি লাগতে পারে। ইতিমধ্যে আমরা ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণের কাজ শুরু করেছি।

সূত্র: যুগান্তর


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply