আন্দোলনের নামে পৌরসভায় ঝুলছে তালা, চরম ভোগান্তিতে পৌরবাসী

|

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
টানা ১৫ দিন ধরে কর্ম বিরতির ফলে সকল প্রকার কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে কুড়িগ্রাম পৌরসভা। ফলে চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে পৌরবাসী। বিশেষ করে সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকার ফলে সন্তানকে টিকা দিতে না পেরে আতঙ্কে রয়েছে মায়েরা।

নাজমুন নাহার। বাড়ী ভোকেশনাল মুন্সি পাড়ায়। রোববার পৌরসভায় এসেছেন ৯ মাস বয়সী ছেলেকে টিকা দিতে। পৌরসভার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় টিকা দিতে পারেনি সন্তানকে। নির্দিষ্ট সময় টিকা দিতে না পারায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
সন্তানের টিকা দিতে পৌরসভায় এসেছেন সাবিত্রি রায়, মুসলিমা বেগম, আম্বিয়া খাতুন, মোনালিসা, শাপলা বেগম, আয়শা পারভীন। এদের সকলের বাড়ি পৌর এলাকায়। তারা জানান ১৫দিন ধরে টিকা দেয়ার জন্য পৌরসভায় এসে ফিরে যাচ্ছি। টিকা দেয়ার সময় পার হয়ে গেছে।

পৌরবাসীদের অন্য কোথাও এ টিকা দেয়ার ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালে গেলে ডাক্তাররা পাঠায় পৌরসভায়। কারণ পৌর এলাকার ভিতরে ৪৪টি কেন্দ্রে ইপিআই কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব পৌরসভার। ফলে কুড়িগ্রাম পৌরসভার দু’হাজার একশত ৬৩ শিশুর স্বাস্থ্যসেবা এখন ঝুঁকিতে। একই সঙ্গে গর্ভবতী মা’দের টিকা প্রদান কার্যক্রমও বন্ধ।

কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা: এস এম আমিনুল ইসলাম জানান, মা ও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনা করে মানবিক কারণে জনস্বার্থে কুড়িগ্রাম পৌরসভায় চলমান ইপিআই কার্যক্রম চালু করার জন্য পৌরসভার মেয়রকে পত্র দিয়েছি, একই সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসককে অবহিত করেছি। যেহেতু পৌর এলাকায় ইপিআই কার্যক্রম পরিচালনা করে পৌরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ। কাজেই এখানে স্বাস্থ্য বিভাগ অসহায়। মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পৌরসভার কয়েক হাজার শিশু ও মা।

জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি এ কে এম সামিউল হক নান্টু বলেন, পৌরবাসীদের ট্যাক্সের টাকায় কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন হয় অথচ সেই পৌরবাসীদের জিম্মি করে এ আন্দোলন গ্রহণযোগ্য নয়। বরং অনৈতিক। শহরের যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা, পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা নেই। মশা নিধনের কোন ব্যবস্থা নেই। নেই পানি সরবরাহ। এক কথায় পৌরবাসীদের এখন দুর্বিসহ জীবন। জনসার্থে এ ধর্মঘট প্রত্যাহার করা উচিত।

আইয়ুব আলী পেশায় একজন ব্যবসায়ী। ট্রেড লাইসেন্স নিতে এসে না পাওয়ায় চিকিৎসার জন্য ভিসা করতে পারছে না। তিনি জানান অসুস্থতার কারণে ভারতে চিকিৎসা নেয়া জরুরী হয়ে পড়েছে। যেহেতু আমার পাসপোর্ট ব্যবসায়ী হিসেবে নেয়া, তাই ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ভিসা নেয়া যাচ্ছে না। কিন্তু পৌরসভা বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছি। ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী আলহাজ্ব মুসা জানান ট্রেড লাইসেন্স এর জন্য দুই সপ্তাহ ধরে ঘুরতেছি। সিডিউল ক্রয় করে ট্রেড লাইসেন্সের জন্য দরপত্র দাখিল করতে পারছি না। এতে ঠিকাদাররা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম ‘সুজন’ এর সভাপতি খাইরুল আনাম বলেন, কুড়িগ্রামে চলছে ভয়াবহ বন্যা ও বৃষ্টি। রাতে বন্ধ থাকছে পৌরসভার সকল সড়কবাতি। হাসপাতালপাড়া বাসিন্দা, আফজাল হোসেন জানান, দীর্ঘদিন ধরে পৌরসভার সড়ক বাতি বন্ধ রয়েছে। আমরা পৌরসভাকে সড়কবাতি সহ বিভিন্ন কর দেই, সড়ক বাতি বন্ধ থাকবে না কেন? বছর শেষে ঠিকই করের বিল দেবে পৌরসভা। যদি কর দেই আন্দোলনের নামে সেবা বন্ধ থাকবে কেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম মঞ্জু মন্ডল জানান, পৌর এলাকা বড় কাচাবাজার জিয়া বাজার ও আদর্শ পৌরবাজারে জমে আছে ময়লার স্তুপ ও ময়লা পানি। এছাড়া শহরের বিভিন্ন মোড় ও রাস্তার উপর পড়ে আছে ময়লা-আর্বজনা। মনে হচ্ছে এসব দেখার কেই নেই।

অপরদিকে পৌরসভার অধিকাংশ নাগরিকদের একমাত্র পানির ভরসা পৌরসভার সাপ্লাইয়ের পানি। সে পানি নিয়েও চলছে লুকোচুরি। পৌরসভার বিভিন্ন পাড়ায় চলছে পানির সংকট। খলিলগঞ্জের বাসিন্দা এরশাদুল হক জানান, এমনিতেই পৌরসভার সাপ্লাইয়ের পানি যথাযথ ভাবে পাওয়া যায় না। তার উপর পৌরসভায় ধর্মঘট চলায় সাপ্লাইয়ের পানি পাওয়া যাচ্ছে না।

প্রতিদিন অফিস চলাকালীন সময় পৌরসভায় আসছেন নাগরিকগণ। কেউ আসছেন নাগরিকত্ব সনদ নিতে, কেউ জন্মনিবন্ধন সনদ, কেউ ট্রেড লাইসেন্স নিতে, কেউ দোকান ভাড়া দিতে, কেউ বাড়ীর হোল্ডিং কর দিতে, কেউ ময়লা অপসারন-জলাবদ্ধতা নিরসন, কেউ পানি সংক্রান্ত, কেউ ইপিআই সংক্রান্ত, কেউ বিচার ও শালিস সহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে। সেবা নিতে আসা নাগরিক সুমি,আজিজ,রফিকুল, ইব্রাহিম, আয়সা বেগম, শিউলি, তনয় জানান- পৌরসভায় এসে দেখতে হচ্ছে প্রতি রুমে ঝুলছে তালা। সমাধান না পেয়ে যেতে হচ্ছে ফিরে।

পৌরসভা সার্ভিস এসোসিয়েশন কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সভাপিত হাফিজুর রহমান বুলু জানান, কেন্দ্রীয় কমিটির ডাকে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবে আমরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। আমাদের দাবি মানা না হওয়া পর্যন্ত কুড়িগ্রাম পৌরসভাসহ জেলার নাগেশ্বরী ও উলিপুর পৌরসভার সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। আমাদের মুলদাবি রাষ্টীয় কোষাগার হতে পৌরসভার কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতা ও পেনশন প্রথা চালু এবং জনপ্রতিনিধিদের সম্মানী ভাতা চালু করতে হবে।

কুড়িগ্রাম পৌরসভার মেয়র আব্দুল জলিল জানান,আন্দোলনের কারণে পৌরসভার নাগরিকরা সকল সেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছে। আমি ও আমার পরিষদের কাউন্সিলরগণ পৌরসভায় আসলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ কাজ না করায় স্থবির হয়ে পড়েছে পৌরসভার স্বাভাবিক কার্যক্রম।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply