ডেলিভারি বয় মুসলিম তাই খাবারের অর্ডারই বাতিল !

|

অর্ডার করা খাবার ডেলিভারি করেছেন একজন মুসলিম তাই সেই খাবার মুখে না তোলার ঘোষনা দিয়ে বিতর্কের ঝড় তুলেছেন অমিত শুক্লা নামে ভারতের মধ্যপ্রদেশের এক ব্যক্তি। খবর বিবিসি বাংলার।

শুধু খাবার বর্জন করেই খান্ত হননি তিনি তার এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন টুইটারেও। শুক্লার ওই টুইটের জবাবও দিয়েছে ফুড ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান ‘জোম্যাটো’।

জোম্যাটো তাদের টুইটে বলে “খাবারের কোনও ধর্ম হয় না। খাবারটাই একটা ধর্ম।”

অবশ্য অমিত শুক্লার এই টুইটের জবাবে জোম্যাটো’র প্রধান আরও কড়া ভাষায় দিয়েছেন। সংস্থাটির প্রধান দীপিন্দর তার টুইটে লিখেন ‘এধরনের অর্ডার বাতিলের ফলে যদি ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্থ হয় তবে তাই মেনে নিতে রাজি জোম্যাটো’

জানা যায়, গত মঙ্গলবার ফুড ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান জোম্যাটোর মাধ্যমে খাবার অর্ডার করেন মি. শুক্লা, কিন্তু অর্ডার নিশ্চিত হবার পর তিনি দেখতে পান তার অর্ডারকৃত খাবার সরবরাহের দায়িত্ব পরেছে একজন মুসলিম ডেলিভারি বয়ের। এরপরই তিনি সে অর্ডার বাতিল করেন এবং টুইট করেন।

তার এই টুইটের উত্তরে জোম্যাটো’র করা টুইটে তিনি আবার লিখেন, “আমাদের শ্রাবণ মাস চলছে। একজন মুসলমানের ডেলিভারি করা খাবারের প্রয়োজন নেই।” এসময় অন্যকোন ডেলিভারি বয় দ্বারা খাবার ডেলিভারি করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি লেখেন, পবিত্র শ্রাবণ মাসে তারা শুদ্ধ নিরামিষ রেস্তোঁরা থেকে খাবার আনান। তাই ডেলিভারি বয়কে পাল্টানো হোক, নাহলে অর্ডার বাতিল করবেন তিনি। এর ব্যতিক্রম হলে তিনি জোম্যাটোর অ্যাপ আনইনস্টল করারও হুমকি দেন।

তার এই টুইটের পাল্টা জাবাবও দেয় জোম্যাটো। তারা জানায়, ‘আমরা আমাদের রাইডারদের মধ্যে কোন বিভাজন করিনা।’

এরপরপরই মি. শুক্লা পুরো ঘটনা জানিয়ে পুনরায় টুইট করার পর জোম্যাটো জানায়, “খাবারের কোনও ধর্ম হয় না। খাবারটাই একটা ধর্ম।”

জোম্যাটোর এই টুইটের পরপরই সংস্থার প্রধান দীপিন্দর গোয়েল টুইট করে বলেন,ন “ভারতীয়ত্বের ধারণার জন্য আমরা গর্বিত এবং আমাদের ক্রেতা এবং পার্টনারদের বৈচিত্রের জন্যও। আমাদের সেই চিন্তাধারাকে আঘাত দেয়, এরকম কোনও ব্যবসা যদি আমরা নাও পাই, তাতে কোনও ক্ষতি হবে না।”

এখনও পর্যন্ত জোম্যাটোর টুইটটি ১৬ হাজারেরও বেশিবার রিটুইট করা হয়েছে, লাইক পড়েছে প্রায় ৪৬ হাজার।

অনেক মান্যগণ্য ব্যক্তি জোম্যাটোর টুইটকে অভিন্দন জানিয়েছেন “ধর্মের নামে যেধরণের ঘৃণা ছড়ানো বেড়ে চলেছে, সেই সময়ে কর্পোরেট দুনিয়ার এরকম কড়া কথার উদাহরণ প্রায় দেখাই যায় না,” লিখেছেন ‘স্যাম সেজ’ নামে একজন।

একজন তির্যক মন্তব্য করেছেন, “এরপর থেকে দেখে নেবেন যে খাবারটা একজন হিন্দু চাষ করেছে কিনা, ট্রাকে করে একজন হিন্দু তা নিয়ে এসেছে কিনা, বিক্রি করেছে যে সে হিন্দু কিনা বা যে রান্না করল, সে হিন্দু কিনা! ধর্মের ব্যাপার তো!”

শেখ ফারহাদ নামের একজনের মন্তব্য, “মুসলিম দেশ থেকে আনা পেট্রল ডিজেল বয়কট করে সাইকেলে চাপুন।”

অভিনভ শর্মা নামে একজনের মন্তব্য, “ওর গাড়ি, বাইক, ট্রেন বা প্লেনে চড়া উচিত নয়। তন্দুরি খাবার, জিলিপি, সিঙ্গাড়া এগুলোও খাওয়া উচিত নয়! মুসলমানী পরিচয় আছে, এমন সবকিছু বর্জন করা উচিত ওর।”

সিম্মি আহুজার মন্তব্য, “স্যার, এই টুইটারটাও তো অহিন্দুর! আপনার ঘরে যে সবজি আছে, খুঁজে দেখুন অহিন্দুরই চাষ করা হয়তো, বা দুধ-ও। আর যে ভাষায় আপনি লিখেছেন, সেটাও তো অ-হিন্দু ভাষা। হিন্দুদের মূল ভাষা সংস্কৃত। তাতেই লিখুন!”

মিজ আহুজার এই মন্তব্যে আবার শুরু হয়েছে আরেক বিতর্ক।

কুঁওর পি এক এস রানা নামের একজন জবাব দিয়েছেন, “ম্যাডাম, আপনার জ্ঞানের ভাণ্ডার একটু প্রসারিত করুন। কোন্‌ মুসলমান চাষাবাদ করে? ভারতে ২% মুসলমানও চাষ করে না। কমিশনখোরের কাজ করে। সব সব্জিই হিন্দুরা চাষ করে আর সব্জি বাজারে মুসলমানরা সেগুলো বিক্রি করে।”

সিম্মি আহুজা উত্তরে লিখেছেন, “২০১১-র জনগণনায় ৪৬% হিন্দু চাষাবাদ করেন। বাকি চাষের কাজ অহিন্দুরা করে। অর্থাৎ ৫৫%।”


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply