পাঁচ সন্তান থাকতেও বৃদ্ধ বাবা মায়ের শেষ ঠিকানা অন্যের গোয়াল ঘরে

|

পটুয়াখালী প্র‌তি‌নি‌ধিঃ
এক ছেলে ও চার মেয়ের বাবা শুক্কুর দেওয়ান। বয়সের ভাঁড়ে নূ্জ হ‌য়ে প‌রে‌ছে। এক সম‌য়ে শুক্কু‌রের নি‌জের জ‌মিজমা, বাড়ীঘর সবই ছিল কিন্তু আজ তি‌নি নিঃস্ব। ভুল বু‌জি‌য়ে একমাত্র ছে‌লে নি‌জের না‌মে বাড়ীসহ সব সম্প‌ত্তি লি‌খে নেয়ায় আজ তার ঠাই হ‌য়ে‌ছে অ‌ন্যের বাড়ীর গোয়াল ঘ‌রে।

সেখানে আশপাশের লোকজন কিছু খাবার দিয়ে যায়, তা খেয়েই জীবন চ‌লে শুক্কুর ও তার স্ত্রীর ছহুরা খাতু‌নের। এভাবেই মানবেতর জীবন চ‌লে তা‌দের দুইজ‌নের। পটুয়াখালীর যোগা‌যোগ বি‌চ্ছিন্ন রাঙ্গাবালী উপজেলার কাউখালী গ্রামের এ ঘটনা‌টি নাড়া দি‌ছে সবাই‌কে। গত একমাস ধ‌রে এভা‌বে অতিবাহিত কর‌লেও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা।

জানা গে‌ছে, শুকুর দেওয়ান পেশায় একজন কৃষক ছিলেন। নিজের বাড়ি ছিল,জায়গা সম্পত্তি ছিল এমনকি গরু ছাগলের খামারও ছিল। এক সময়ে সুখে শান্তিতে কাটছিল তাদের জীবন। তাদের- মর্জিনা, রোকেয়া, খোদেজা ও সালমা নামের চার মেয়ে। মেয়েরা বড় হলে তাদের বিয়ে দি‌লে শ্বশুড় বা‌ড়ি চ‌লে যায়। সংসারে ছিল একমাত্র ছেলে হোসেন দেওয়ান(৩০) ও পুত্রবধু। এই চারজনের সংসারও দীর্ঘদিন সুখে কাটছিল। পরে শুকুর দেওয়ান বার্ধক্য জনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পরলে, চিকিৎসার কথা বলে ছেলে হোসেন বাবাকে পার্শ্ববর্তী গলাচিপা উপ‌জেলা স্বাস্থ্যকম‌প্লে‌ক্সে নি‌য়ে যায়। সেখানে নি‌য়ে ভুল বু‌জি‌য়ে বাবার সম্পত্তি নিজের নামে দলিল করে নেন ছে‌লে।

পরে সেই সম্পত্তি চাচা তাজু দেওয়ানের কাছে বিক্রি করে এলাকা ছেড়ে লাপাত্তা হয়ে যায় হোসেন। কিছু দিন পরে ক্রয়-সূত্রে জমির মালিক হয়ে তাজু দেওয়ান বাড়ি থেকে বেড় করে দেন তার ভাই শুক্কুর দেওয়ান ও তার স্ত্রীকে। তখন অসহায় হয়ে পরে বৃদ্ধ এই দম্পত্তি। এদি‌কে ভাইকে জমি দেয়ার মিথ্যা অজুহা‌তে মেয়েরাও বাবাকে ত্যাগ করেন। কোন উপয়ন্ত না পেয়ে পাশের বাড়ির একটি গোয়াল ঘরে আশ্রয় নেন এই দম্পত্তি। এর পর থেকে সেখানেই মানবেতর জীবন কাটছে তাদের। পাশের বড়ির লোকজন কিছু খাবার দিয়ে যায়, তা খেয়ে জীবন বাঁচছে। অসহায় এই দম্পত্তি দিন রাত কেঁদে কেঁদে পার করছেন।

শুক্কুর দেওয়ান জানান, ‘আমাগো জমিজমা পোলায় (ছেলে) আমারে ভুল বুঝাইয়া আমার ভাই তাজুর কাছে বেইচা দিছে। এ্যাহন পোলায় দ্যাশ ছার্ইরা চইল্লা গ্যাছে। ‌মোর ভাই তাজুও মো‌রে বাড়ির তোনে নামাইয়া দিছে। মুই কোন দিশাবিশা না পাইয়া গরুর ঘরে উঠছি। আশপাশের কিছু ভাল মানুষ আছে তারা মো‌গো খাওন দিয়া যায় হেইয়া খাইয়া থাহি। আল্লায় যেন এই জীবন থাইকা মো‌গো মুক্তি দেয়।’

এ‌দি‌কে ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবিএম আব্দুল মান্নান জানান, আমি লোক পাঠিয়েছি দেখার জন্য। আমাকে জানালে আমি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সরকারি সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা করবো।
রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.মাশফাকুর রহমান জানান, আমরা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply